সিরিয়া সংকট নিরসনে একমাত্র বাধা আসাদ না কি পরাশক্তিদের দ্বন্দ্ব !

Syria Coalition২০১২ সালের জুনে জেনেভায় যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়াসহ বেশ কয়েকটি শক্তিধর দেশ সিরিয়া সংঘাত নিরসনে ৬ দফা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিলো। ঐ বৈঠকের পর সিরিয়ার সংকট নিরসনে তেমন কোন কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি পশ্চিমাদের পক্ষ থেকে। তবে দেশটির চলমান সংকট উত্তরণে একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়া শুরু করতে গত সপ্তাহে ভিয়েনায় অনুষ্ঠিত বৈঠকই পশ্চিমাদের পক্ষ থেকে প্রথম কোন দৃঢ় প্রচেষ্টা।
ভিয়েনায় অনুষ্ঠিত বৈঠকের চূড়ান্ত প্রজ্ঞাপনে জেনেভা নীতিগুলো সংযুক্ত ছিলো। ১৭ টি রাষ্ট্রের সংস্থা ও প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়, যা ছিলো একটি বড় অর্জন।
ভিয়েনায় বৈঠকে বিশ্ব কূটনীতিকরা মোটাদাগে কয়েকটি বিষয়ে একমত হন। এতে একটি বিষয় সুস্পষ্ট যে সিরিয়া সংকট নিরসনে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র একত্রে কাজ করতে আগ্রহী। প্রাথমিকভাবে সিরিয়ার প্রাদেশিক অখ-তা সংরক্ষণ, দেশটির সরকার ও বিরোধী পক্ষের মধ্যে সংলাপ আয়োজন, যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছার খসড়া প্রণয়ন ও সিরীয় নাগরিকদের ত্রাণ সহায়তা বাড়ানোসহ সব পক্ষের অংশগ্রহণে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় দেশটিতে নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা যা বিবাদমান মূল পক্ষগুলোকে সংঘাত থেকে ফিরিয়ে আনতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। আর উভয় দেশের এই যৌথ প্রচেষ্টা ভিয়েনা আলোচনায় ইরানের অন্তর্ভুক্তির পথকে সুগম করবে।
তারপরও সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ বন্ধে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় একমত হলেও আসাদের ক্ষমতায় থাকা- না থাকা নিয়ে এখনও কোন সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেনি কূটনীতিকরা।
একদিকে, সিরিয়ায় আইএস বিরোধী লড়াইয়ে মধ্যপন্থী বিদ্রোহীদের সহায়তায় বিশেষ বাহিনী পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র অন্যদিকে সিরিয়া সরকারের অনুমতি ছাড়া কেউ সেখানে সামরিক শক্তি প্রয়োগ করতে পারবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে মস্কো।
‘যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, প্রেসিডেন্ট আসাদ কখনো সিরিয়ার সব পক্ষকে ঐক্যবদ্ধ করতে সক্ষম হবেন না। অন্যদিকে ইরান বলছে, সিরীয় জনগণের ওপর তাদের ইচ্ছার বাইরে কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়া উচিত হবে না।
এরই মধ্যে সৌদি আরব ও কাতার আসাদ বিরোধী কিছু গোষ্ঠীকে সহায়তা দিয়ে যাওয়ার বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করেছে।
সিরিয়া সংকট সমাধানে কূটনৈতিক উদ্যোগ অব্যাহত রাখার পাশাপাশি দেশটিতে যুদ্ধবিরতি কার্যকরে একযোগে কাজ করে যাওয়ার ব্যাপারে সব পক্ষই একমত। সে হিসেবে রাশিয়াও একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার দিকেই জোর দিচ্ছে। তবে সিরিয়ার সেনাবাহিনীর অনেকেই মনে করে সংঘাত নিরসনে শক্তি প্রয়োগের বিকল্প নেই।
ইতিপূর্বে সিরিয়ায় আইএস দমনে ব্যর্থ হয়েছে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট। যদিও রাশিয়া বলছে আসাদকে টিকিয়ে রাখতে নয় বরং আইএস দমনের লক্ষ্যেই তারা সেখানে হামলা চালাচ্ছে।
তারপরও মস্কোর বিরুদ্ধে আসাদ বিরোধীদের ওপর হামলার অভিযোগও উঠেছে। এদিকে সিরিয়ায় মস্কোর বিমান হামলার কয়েক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও তেমন কোন সুফল আসেনি জঙ্গিদের হাতে দখলকৃত অঞ্চলগুলো পুনরুদ্ধারে ও অভ্যন্তরীণ সংঘাত নিরসনে।
ভিয়েনা সম্মেলনের পরপরই প্রায় ৫০ সদস্যের মার্কিন বিশেষ বাহিনী পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তারা সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে কুর্দি অধ্যুষিত এলাকায় আসাদবিরোধী মধ্যপন্থী বিদ্রোহীদের সহায়তা দেবে বলে জানায় হোয়াইট হাউজ।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের এই ঘোষণায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে মস্কো। এতে করে দেশটিতে ছায়া যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button