পদ্মাসেতু মামলায় জড়িয়ে পড়লো এডিবিসহ ৭ আন্তর্জাতিক সংস্থা
বহুল আলোচিত পদ্মাসেতু প্রকল্পে দুর্নীতির ষড়যন্ত্র মামলায় এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি), ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালসহ সাতটি আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান পক্ষ হয়েছে। আজ ৬ নবেম্বর কানাডার সুপ্রীম কোর্টে নির্ধারিত আপিল শুনানিতে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষে তাদের আইনজীবীরাও বক্তব্য উপস্থাপন করবেন।
কানাডার সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রীম কোর্ট এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি), ইউরোপীয়ান ব্যাংক ফর রিকনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, অর্গানাইজেশন ফর ইকোনোমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, আফ্রিকান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক গ্রুপ, ইন্টার-আমেরিকান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এবং নরডিক ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালকে মামলার পক্ষ হতে অনুমোদন দিয়েছেন। ইতিমধ্যে তারা আদালতে লিখিতভাবে তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করে বক্তব্য জমা দিয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের দায়ের করা আপিলে গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগি সংস্থাগুলো পক্ষ হওয়ায় মামলাটি একই সাথে স্পর্শকাতর এবং অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেছে। অন্টারিওর সুপিরিয়র কোর্ট অব জাস্টিস পদ্মাসেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগের প্রমাণ হিসেবে পাওয়া নথিপত্র কোন সূত্র থেকে পেয়েছে তা জানাতে নির্দেশ দিয়েছিলো। বিশ্বব্যাংক ওই নির্দেশের বিরুদ্ধে সুপ্রীম কোর্টে আপিল করে। শুনানির জন্য তৈরি করা সুপ্রীম কোর্ট অব কানাডার ‘মামলার সংক্ষিপ্তসার’ থেকে জানা যায়, বিশ্বব্যাংক তার আপিল আবেদনে কানাডার বাসিন্দা নয়, এমনকি মামলার কোনও পক্ষও নয়- এমন একটি আন্তর্জাতিক সংস্থাকে তাদের নিজস্ব গোপনীয় কোনও দলিল আদালতে উপস্থাপনে বাধ্য করতে পারে কি না সে ব্যাপারে সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত জানতে চেয়েছে। কানাডার সুপ্রীম কোর্টের সূত্রে জানা যায়, বিশ্বব্যাংকের আপিলের সূত্র ধরে সুপ্রীমকোর্ট সকল পক্ষের কাছ থেকে এই ব্যাপারে দফায় দফায় লিখিত মতামত নিয়েছে।
প্রসঙ্গত, কানাডার নির্মাণ প্রতিষ্ঠান এসএনসি লাভালিনকে পদ্মাসেতু প্রকল্পের কিছু কাজ পাইয়ে দিতে বাংলাদেশ সরকারের উর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তাকে ঘুষ দেয়ার যড়যন্ত্রের অভিযোগ তোলে বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংকের অনুরোধে রয়্যাল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশ (আরসিএমপি) বিস্তারিত তদন্ত করে এবং এসএনসি লাভালিনের কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রেক্ষিতে মামলা হয়। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিচার শুরু হলে বাংলাদেশী কানাডিয়ান ব্যবসায়ী জুলফিকার ভূইয়ার আইনজীবী বিশ্বব্যাংকের কাছে থাকা প্রমাণ আদালতে উপস্থাপনের আবেদন জানান। আন্তর্জাতিক আইনে ‘বিশ্বব্যাংককে যে কোনও ধরনের আইনি প্রক্রিয়া থেকে দায়মুক্তি দিয়েছে’ বলে যুক্তি তুলে বিশ্বব্যাংক অন্টারিওর আদালতে হাজির হতে অস্বীকার করে। পরে আদালত প্রমাণপত্র জমা দিতে নির্দেশ দেন। আগামী ৬ নবেম্বর শুরু হওয়ার পর শুনানি কতোদিন চলতে পারে তা জানা যায়নি। মামলাটি নিয়ে কানাডার আইনজীবীসহ বিভিন্ন মহলে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে। কানাডার আইনজীবীদের সংগঠন ক্রিমিনাল ল ইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন অব অন্টারিও ইতিমধ্যে মামলায় পক্ষ হয়েছে। আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা বিশ্বব্যাংকের এখতিয়ারের প্রশ্নে এই মামলা একটি নতুন ধারার আইনী সীমানা তৈরি করতে পারে বলে ধারণা করছেন আইনজীবীরা।