রাজন হত্যা মামলার রায় : কামরুলসহ ৪ জনের ফাঁসির আদেশ
আলোচিত শিশু সামিউল আলম রাজন হত্যা মামলার রায়ে প্রধান আসামি কামরুল ইসলামসহ ৪ জনকে মৃত্যুদন্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। রবিবার দুপুরে সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক আকবর হোসেন মৃধা এই রায় ঘোষণা করেন। এর আগে বেলা সাড়ে ১১টায় ৩১ হাজার ৩৫৮ শব্দের ২ হাজার ৮০২ লাইনের ৭৬ পৃষ্ঠার রায় পড়ে শুনানো হয়।
রায়ে ২ আসামির বিরুদ্ধে কোনো ধরনের অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় খালাস দেয়া হয়। বাকি আসামিদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে।
ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্তরা হলো- প্রধান আসামি কামরুল ইসলাম, পাভেল (পলাতক), বাদল ও ময়না চৌকিদার।
এ ছাড়াও হত্যার পর লাশ গুম করার অপরাধে আদালত ৪ জনকে ৭ বছরের কারাদন্ড ও হত্যাকান্ডের ভিডিও ধারণকারী নূর মোহাম্মদকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছেন বিজ্ঞ আদালত। খালাসপ্রাপ্তরা হলেন- নুরুল আমীন রুবেল, আজমত উল্লাহ।
বেলা সোয়া ১১টায় প্রধান আসামি কামরুল ইসলামসহ ১১ জনকে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আদালতে হাজির করা হয়। আদালত চত্বরে নিহত রাজনের বাবা শেখ আজিজুর রহমান, মা লুবনা বেগমসহ তার স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন।
সিলেট নগরীর কুমারগাঁওয়ে ৮ জুলাই চোর অপবাদ দিয়ে শিশু রাজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। হত্যার পর দুপুরে লাশ গুম করতে গিয়ে স্থানীয়দের হাতে আটক হন সদর উপজেলার জালালাবাদ থানার কুমারগাঁও এলাকার শেখপাড়া গ্রামের মৃত আবদুল মালেকের ছেলে মুহিত।
একই সময় স্থানীয়রা সৌদি প্রবাসী কামরুল ইসলামকে ধাওয়া করেন। কিন্তু পরে সে সৌদি আরবে পালিয়ে যায়। ওই ঘটনায় কামরুলসহ অভিযুক্তদের নামে মামলা করতে গেলে এসএমপির জালালাবাদ থানা পুলিশ শিশু রাজনের বাবার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে। এমন অভিযোগে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এস এম রোকন উদ্দিনকে প্রধান করে ১৪ জুলাই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
বর্ধিত সময়ে ২৪ জুলাই ৪২৪ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন দাখিল করে তদন্ত কমিটি। দায়িত্বে অবহেলার কারণে ওই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) আলমগীর হোসেন, মামলার বাদী উপ-পরিদর্শক (এসআই) আমিনুল ইসলাম, এসআই জাকির হোসেনকে বরখাস্ত করা হয়। আলমগীরকে ২৭ জুলাই ও দুই এসআইকে ২৪ জুলাই বরখাস্ত করা হয়।
৯ জুলাই সৌদি পালিয়ে যায় কামরুল। ১০ জুলাই সেখানে পৌঁছে আত্মগোপন করে। এর মধ্যে রাজন হত্যার নির্মম ভিডিওচিত্রে দেশে-বিদেশে তোলপাড় শুরু হয়। রাজনকে পৈশাচিক কায়দায় নির্যাতনকারী কামরুল সৌদিতে পালিয়ে গেছে-এমন খবরে ক্ষোভ বাড়ে সৌদি প্রবাসী বাংলাদেশীদের মধ্যেও।
১৩ জুলাই প্রবাসীরা কামরুলকে আটক করে সৌদি পুলিশের হেফাজতে দেন। ইন্টারপোলের মাধ্যমে ১৫ অক্টোবর কামরুলকে দেশে নিয়ে আসা হয়।
১৬ আগস্ট সিলেট মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক সুরঞ্জিত তালুকদার ১৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন। তাদের মধ্যে কামরুল ইসলাম, শামীম আহমদ ও পাভেলকে পলাতক দেখানো হয়।
এ মামলায় চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলো- সিলেট সদর উপজেলার জালালাবাদ থানার কুমারগাঁও এলাকার শেখপাড়া গ্রামের মৃত আবদুল মালেকের ছেলে কামরুল ইসলাম (২৪) ও তার ভাই মুহিত আলম (৩২), আলী হায়দার ওরফে আলী (৩৪), শামীম আহমদ (২০), সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার ঘাগটিয়া গ্রামের অলিউর রহমান ওরফে অলিউল্লাহর ছেলে মোঃ জাকির হোসেন পাভেল ওরফে রাজু (১৮), জালালাবাদ থানার পীরপুর গ্রামের মৃত মব উল্লাহর ছেলে সাদিক আহমদ ময়না ওরফে বড় ময়না (৪৫), পূর্ব জাঙ্গাইল গ্রামের মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিনের ছেলে ভিডিওচিত্র ধারণকারী নূর আহমদ ওরফে নুর মিয়া (২০), শেখপাড়া গ্রামের মৃত আলাউদ্দিন আহমদের ছেলে দুলাল আহমদ (৩০), সুনামগঞ্জের দোয়ারা উপজেলার বাংলাবাজার ইউনিয়নের জাহাঙ্গীরগাঁওয়ের মোস্তফা আলীর ছেলে আয়াজ আলী (৪৫), শেখপাড়া গ্রামের সুলতান মিয়ার ছেলে তাজউদ্দিন আহমদ ওরফে বাদল (২৮), সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার দোলারবাজার ইউনিয়নের দক্ষিণ কুর্শি ইসলামপুর গ্রামের মৃত মজিদ উল্লাহর ছেলে মো. ফিরোজ আলী (৫০), কুমারগাঁওয়ের (মোল্লাবাড়ি) মৃত সেলিম উল্লাহর ছেলে মো. আজমত উল্লাহ (৪২) ও হায়দরপুর গ্রামের মৃত সাহাব উদ্দিনের ছেলে রুহুল আমিন রুহেল (২৫)।
রাজন হত্যা মামলায় ৮ জন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেন।
আদালত চার্জশিট গ্রহণ করে মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য একসঙ্গে ১০ কর্যিদিবস সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করেন। পরবর্তীতে আবারও ১৫ সাক্ষীর পুনরায় সাক্ষ্যগ্রহণের আবেদন করলে আদালত ১১ জনের পুনরায় সাক্ষ্যগ্রহণের অনুমতি দেন।
টানা ৩ দিন যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে ২৭ অক্টোবর মামলার রায় ঘোষণার জন্য আজ ৮ নভেম্বর তারিখ নির্ধারণ করেন।
রাজন হত্যা মামলায় অভিযুক্ত শামীম আহমদ (২০) এবং সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার ঘাগটিয়া গ্রামের অলিউর রহমান ওরফে অলিউল্লাহর ছেলে মোঃ জাকির হোসেন পাভেল ওরফে রাজু (১৮) পলাতক রয়েছে।