বিলুপ্তির পথে বিয়ের আমন্ত্রণপত্র !
সোনালি কারুকাজের আমন্ত্রণপত্রগুলো দেখলেই বিয়ে, জন্মদিন বা কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানের কথা মনে আসাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ফেসবুক বা ই-মেইলের মতো অনলাইনভিত্তিক বিকল্প যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রসারে এখন আমন্ত্রণপত্রের প্রচলন ‘সেকেলে’ হতে বসেছে। অন্তত পশ্চিমা দুনিয়ায় এই প্রবণতা এখন অনেক বেশি। আর তাই ব্যক্তিগত চিঠিপত্রের মতো আমন্ত্রণপত্র বিনিময়ের প্রথাও পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে।
সম্প্রতি পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, ব্রিটেনের ২০ শতাংশ নতুন দম্পতি এখন আর বিয়ের দাওয়াতে আমন্ত্রণপত্র ব্যবহারের ধার ধারেন না। তারা তাদের বিয়ের অনুষ্ঠানে ফেসবুক বা অন্যান্য অনলাইনভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করেই আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন। দেশটিতে অপর ১২ শতাংশের বিয়ের দাওয়াত হচ্ছে মোবাইল ফোনের টেক্সট ম্যাসেজের মাধ্যমে। এ ছাড়া আরো ২০ শতাংশ আমন্ত্রণ যাচ্ছে ই-মেইলের মাধ্যমে।
প্রথা পরিবর্তনের এই প্রবণতায় ধর্মীয় আচারেও আসছে পরিবর্তন। বর্তমানে ৬৬ শতাংশ কনেই বিয়েতে সাদা পোশাক আর পরেন না। এর পরিবর্তে তারা লাল বা কালো পোশাক বেছে নিচ্ছেন। ব্রিটেনের মাত্র ১৮ শতাংশ বিয়ে ঐতিহ্যবাহী চার্চ ব্যবস্থার মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। সব বিয়ের মাত্র ২৮ শতাংশ কোনো যাজকের অধীন হচ্ছে। ধর্মীয় রীতিনীতির পরিবর্তে আধুনিক ব্রিটিশ নয়াদম্পতিরা বিয়ের দিন হোটেলে কাটিয়ে দিচ্ছেন। আর যাজকের পরিবর্তে স্বামী-স্ত্রী ঘোষণা করছে রেজিস্ট্রি অফিস।
বিয়ের অনুষ্ঠানের খাবারের মেনুতেও এসেছে পরিবর্তন। ঐতিহ্যবাহী রোস্টের আয়োজনের পরিবর্তে ২৫ শতাংশ বিয়ের মেনুতে থাকছে মাছ, চিপস, তরকারি, চকোলেট। বিয়ের আগে আবাসিক হোটেল বুকিং দেয়া এখন দেশটিতে ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট একটি ওয়েবসাইটের সমীক্ষায় নববিবাহিত বা হবু বর-কনের হোটেল বুকিং দেয়ার প্রবণতা পাওয়া যায়। একইভাবে পরিবর্তন এসেছে বিয়ের উপহারেও। ২০১৫ সালের আধুনিক দম্পতিদের ৪৮ শতাংশ বিয়েতে উপহারের ক্ষেত্রে নগদ অর্থকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। তাছাড়া আরো ১০ শতাংশ ঘর সাজানোর জন্য অর্থ চেয়েছেন।
একটি হোটেল বুকিং প্রতিষ্ঠানের মুখপাত্র এন্ড্রি তারপে বলেন, ‘আমরা যা দেখছি তা হলো, ঐতিহ্যবাহী বিবাহ অতীত হয়ে যাচ্ছে। বর্তমান বিয়েগুলোতে পুরো অনুষ্ঠানই এক জায়গাতেই সেরে ফেলা হচ্ছে। এক্ষেত্রে হোটেলকেই প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। নতুন দম্পতিগুলো এভাবেই নিজেদের জীবন সাজাতে চাইছেন।’ তবে সবকিছু ছাপিয়ে আলোচনায় আসছে আমন্ত্রণপত্রের প্রচলন কমে যাওয়ার ইস্যু। কেননা এর সঙ্গে অনেক প্রতিষ্ঠানের ব্যবসাও জড়িত। সৌখিনতা কিংবা আতিথেয়তার মূল্যমানে সেগুলো বেশ দামিও বটে। -ডেইলি মেইল