বিবিসির সেরা সাতে টিউলিপ
‘দেশান্তর শুধু অর্থনৈতিক বিষয় নয়, এর সাথে জড়িয়ে থাকে আরও হাজারো ঘটনা। ১৯৭৫ সালে যখন আমার মায়ের পুরো পরিবারকে তার চোখের সামনে মেরে ফেলা হয়, তখন আমার মা যুক্তরাজ্যে এসে আশ্রয় নেন। কারণ তার কাছে এই দেশ নিরাপদ মনে হয়েছিল,’ ব্রিটিশ পার্লামেন্টে নিজের প্রথম বক্তৃতাতে এভাবেই যুক্তরাজ্যের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন বঙ্গবন্ধু শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক।
প্রথমবারের মতো ব্রিটেনের সাংসদ নির্বাচিত হয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট দেওয়া টিউলিপ সিদ্দীকীর এই বক্তৃতা বিবিসির বিচারে শীর্ষ সাত বক্তৃতার তালিকায় উঠে এসেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নে যুক্তরাজ্যের থাকা না থাকা নিয়ে গণভোট প্রশ্নে বিলের উপর বিতর্কে মঙ্গলবার বক্তব্য রাখেন বিরোধী দল লেবার পার্টি থেকে প্রথমবার নির্বাচিত টিউলিপ। বঙ্গবন্ধুর নাতনি পার্লামেন্টে প্রথম বক্তব্যে তার রাজনৈতিক উত্তরাধিকারের কথা বলতে গিয়ে ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নায়ক তার নানা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের কথাও তুলে ধরেন; বলেন তার পরিবারের সবাইকে হারানোর কথা। নিজের মা শেখ রেহানার অভিবাসী হিসেবে হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্নের বাসিন্দা হয়ে উঠার কথাও বলেন টিউলিপ, যে আসন থেকে গত মাসে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে ভোটে জয়ী হয়ে পার্লামেন্টে এসেছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘এক দেশ থেকে অন্য দেশে বাস করতে অনেকেই আসে। তবে সবার উচিত যেই দেশে স্থায়ীভাবে বাস করতে এসেছে সেই দেশের প্রতি সম্মান রেখে নিজের উন্নতির পথে এগিয়ে চলা।’
টিউলিপ তাকে নির্বাচিত করায় যুক্তরাজ্যে তার নির্বাচনী এলাকার ভোটারদের ধন্যবাদ জানান। সেই সঙ্গে ওই আসনটির গুরুত্বও পার্লামেন্ট সদস্যদের সামনে তুলে ধরেন তিনি। প্রায় ১০ মিনিটের বক্তব্যে অভিবাসীদের জন্য যুক্তরাজ্যের দ্বার অবারিত রাখার দাবি জানান লেবার পার্টির পার্লামেন্ট সদস্য টিউলিপ, যা রক্ষণশীল সরকার অনেকটাই সঙ্কুচিত করে রেখেছে বলে অভিবাসীদের অভিযোগ।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এবারের পার্লামেন্টের ১৭৬ জন নতুন সংসদ সদস্যের প্রথম বক্তৃতার ক্ষেত্রে সাতজনের বক্তব্য স্মরণীয়। এরমধ্যে টিউলিপ সিদ্দিকও রয়েছেন। পার্লামেন্টে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের গণভোটের বিলের বিষয়ে বির্তকের সময় এমপি টিউলিপ সিদ্দিক শরণার্থী ও অভিবাসীপ্রত্যাশীদের বিষয়ে নিরাপদ ব্রিটেনের প্রশংসা করেন।
লন্ডন সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সপরিবারে হাউজ অব কমন্সে গ্যালারিতে বসে টিউলিপের বক্তব্য শোনেন। তার সঙ্গে ছিলেন ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও তার স্ত্রী এবং মেয়ে সায়মা হোসেন পুতুল। টিউলিপের মা প্রধানমন্ত্রীর বোন শেখ রেহানা, ভাই রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক, স্বামী ক্রিস পার্সিও ছিলেন হাউস অব কমন্সে। নিজের রাজনীতির পেছনে সফলতার কারণ হিসেবে নিজের খালা শেখ হাসিনাকেই সিংহভাগ দাবিদার বলে মনে করেন টিউলিপ।