সীমান্ত ও শরণার্থী সঙ্কট এবং প্যারিস হামলা
ফরাসী প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া বলেছেন, প্যারিসের হামলা ফ্রান্সের বিরুদ্ধে ইসলামিক স্টেটের যুদ্ধের সামিল।
তিনি বলেছেন, ফ্রান্সের বাইরে থেকে এই হামলার পরিকল্পনা করা হয়েছে। ফলে বাইরে থেকে ইউরোপে অভিবাসনের ওপর এই হামলার একটি বড়ো রকমের প্রভাব পড়বে। বিশেষ করে শরণার্থী সঙ্কটের ওপর।
নতুন মাত্রা:
গ্রিসে কর্তৃপক্ষ বলছে, হামলাকারীদের অন্তত একজন, ৬৯ জন শরণার্থীর একটি গ্রুপের সাথে লেরোস দ্বীপ দিয়ে ফ্রান্সে গিয়েছেন।
গ্রিসে তিনি প্রথম তার নাম নিবন্ধন করেছেন এবং সেখানে তার আঙ্গুলের ছাপ নেওয়া হয়েছে।
তবে প্যারিসের একটি হামলাস্থলের কাছে সিরিয়ার যে পাসপোর্ট পাওয়া গেছে তার সাথে গ্রিসে নিবন্ধিত ওই পাসপোর্টের কোনো মিল আছে কীনা সেটা এখনো জানা যায়নি।
সার্বিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, সিরিয়ার ওই পাসপোর্টধারী ব্যক্তি গত ৭ই অক্টোবর সার্বিয়াতে প্রবেশ করেছে এবং সেখানে আশ্রয়প্রার্থী হিসেবে আবেদন করেছেন।
এই পাসপোর্ট আর হামলাকারীর মধ্যে সম্পর্কের সত্যতা নিশ্চিত হলে ইউরোপের শরণার্থী সঙ্কট যে নতুন এক মাত্রা পাবে সেটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
পোল্যান্ডে তার ইঙ্গিত এর মধ্যেই পাওয়া গেছে। সেখানকার একজন মন্ত্রী বলেছেন, ‘নিরাপত্তার ব্যাপারে নিশ্চয়তা পেলেই শুধু শরণার্থীদেরকে আশ্রয় দেওয়া হবে’।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমঝোতা অনুসারে পোল্যান্ডের সাড়ে চার হাজারের মতো শরণার্থীর আশ্রয় দেওয়ার কথা।
কিন্তু প্যারিসের হামলার পর এখন মনে হচ্ছে সেটা অনিশ্চিত হয়ে যেতে পারে।
শরণার্থীদেরকে আশ্রয় দেওয়ায় পোল্যান্ডের আরো একজন মন্ত্রী জার্মানির কড়া সমালোচনা করেছে।
শরণার্থীরা যে পথ দিয়ে ইউরোপে আসছে, সন্ত্রাসীরা সেই একই রুট ধরে এসেছে তার কোনো আভাস পাওয়া গেলে সেটাও শরণার্থীদের জন্যে সমস্যার সৃষ্টি করবে।
সমস্যা হবে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মের্কেলের জন্যেও।
ইতোমধ্যেই শরণার্থী ইস্যুতে দেশের ভেতরে তার ওপর চাপ তৈরি হয়েছে। কমেছে তার জনপ্রিয়তা। সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ার জন্যেও চাপ আছে তার ওপর।
আর জার্মানি যদি সীমান্ত বন্ধ করে দেয় তাহলে তার প্রভাব পড়বে বলকান দেশগুলোর ওপরেও। ফলে বিভিন্ন দেশের মধ্যে উত্তেজনাও বৃদ্ধি পেতে পারে।
এর পাশাপাশি ইউরোপের অভিন্ন ভিসা ব্যবস্থা যা শেঙ্গেন ভিসা নামে পরিচিত, তার ওপরেও এই প্যারিস হামলার প্রভাব পড়তে পারে।
ইতোমধ্যেই এই ভিসা নিয়ে কথাবার্তা শুরু হয়েছে।
ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক কিছুদিন আগেই বলেছেন, শেঙ্গেন ভিসার ভবিষ্যৎ যে হুমকির মুখে সেটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। আমাদের বাইরের সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ পুন-প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
প্যারিসের হামলার পর এই পরিস্থিতি আরো জরুরী হয়ে পড়েছে।
প্যারিসের হামলার সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে বেলজিয়াম থেকেও কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে।
তারা কিভাবে হামলার পর সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বেলজিয়ামে গেছে সেটা এখনও নিশ্চিত হয়নি।
জার্মানিসহ বেশ কয়েকটি দেশ শেঙ্গেন ভিসা ব্যবস্থা স্থগিত করেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানে অংশগ্রহণকারী যেকেনো দেশের ওপরেই হামলা হতে পারে।
সেক্ষেত্রে ইউরোপের সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ আরোপ জরুরী বিষয় হয়ে উঠবে কোনো সন্দেহ নেই। -বিবিসি