সৌদি আরবে পারিবারিক নির্যাতন রোধে নতুন আইন
সৌদি আরবের মন্ত্রী পরিষদ পরিবারের মধ্যে দুর্ব্যবহার বা নির্যাতনকে একটি অপরাধ বলে গণ্য করে একটি আইন পাস করেছে। এই আইনে সহিংসতার শিকারকে চিকিৎসা ও আশ্রয়দানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। মন্ত্রীপরিষদ গত সোমবার এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়।
দেশটি এই প্রথমবারের মতো সরকারি ও বেসরকারি খাতের কর্মীদের প্রতি দুর্ব্যবহার বা নির্যাতনের ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষ কিংবা সমাজসেবা দফতরের কাছে রিপোর্ট করতে উৎসাহিত করা হয়েছে। এই আইন অনুসারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী পারিবারিক সহিংসতার অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত ও আইনী ব্যবস্থা নেবে। এর আগে পুলিশ নারী ও শিশুদের নির্যাতনের বিষয়টিকে একটি পারিবারিক বিষয় বলে গণ্য করতো এবং খুব নগণ্য সংখ্যক ক্ষেত্রেই আইনী ব্যবস্থা নিতো। নির্যাতনের শিকার যারা হবে তাদেরকে মানসিক চিকিৎসা, স্বাস্থ্যসেবা ও আশ্রয় দেয়া হবে।
মন্ত্রী পরিষদের এক বিবৃতিতে বলা হয়, বেসামরিক সামরিক বিভাগ এবং বেসরকারী খাতের সকল কর্মী কর্মক্ষেত্রে তাদের প্রতি দুর্ব্যবহার বা নির্যাতনের বিষয়ে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করবে। নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় কিংবা পুলিশকে আভ্যন্তরীণ সহিংসতার জন্য দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে কি ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে মন্ত্রী পরিষদ তা সুনির্দিষ্ট করে জানায়নি।
সমাজকর্মী ও জাতীয় মানবাধিকার সংস্থার সদস্য সুহাইলী জইন আল আবেদিন আল হাম্মাদ জানান, নতুন আইনের ব্যাপারে তার কিছু আপত্তি আছে। কারণ এই আইনে পুরুষের অভিভাবকত্বের বিষয়টির কোন সুরাহা নেই। নির্যাতনকারীদের বেশিরভাগই পুরুষ অভিভাবক।
আল হাম্মাদ বলেন, নির্যাতনের ব্যাপারে রিপোর্ট করার পর তাদের পুরুষ অভিভাবকদের গাড়িতে করে নিয়ে যেতে এবং নির্যাতনকারীকে এ ধরনের অপরাধ আর না করার অঙ্গীকারনামায় সই করতে বলা হয়। ৫৫ বছর বয়সের গৃহবধূ ওয়ালা মোহাম্মদকে তালাক দিয়েছে তার নির্যাতক স্বামী। তিনি জানান, পুলিশ তাকে সাহায্য করার ব্যাপারে অপারগ।
তিনি বলেন, আমার স্বামী গভীর রাতে মদপান করতো এবং আমার ওপর হামলা চালাতো। একদিন সে আমাকে ঘরের মধ্যে আটকিয়ে রাখে এবং তার বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে বাইরে চলে যায়। আমি কয়েকদিন ঘরের মধ্যে আটকে থাকি। বের হতে না পেরে পুলিশকে জানাই। জবাবে পুলিশ আমাকে জানায়, তার পুরুষ অভিভাবক ছাড়া তারা ভেতরে আসতে পারবে না।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সামাজিক সুরক্ষা বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আল হারবি বলেন, জরুরী পারিবারিক সহিংসতার বিষয়গুরো নিয়ে এখন দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে।
তিনি বলেন, যেখানে নির্যাতনকারী ব্যক্তি মাদকাসক্ত এবং যারা মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত সেসব ক্ষেত্রে জরুরীভিত্তিতে তদন্ত ও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সৌদি আরবে আভ্যন্তরীণ সহিংসতা সম্পর্কে সচেতনতা একটি নতুন বিষয়। মাত্র সাম্প্রতিককালে এই সহিংসতার ব্যাপার নিয়ে গবেষণা ও আলাপ আলোচনা চালানো হচ্ছে।
২০০৯ সালে এক সমীক্ষায় দেখা যায়, মদীনার প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্রগুলো থেকে নারীরা চিকিৎসা সেবা নেয়। এ রকম চিকিৎসা গ্রহণকারী ৬৮৯ জন মহিলার মধ্যে শতকরা ২৫ দশমিক ৭ ভাগই শারীরিকভাবে নির্যাতনের শিকার বলে জানা যায়। নির্যাতিতদের মধ্যে মাত্র ৩৬.৭ শতাংশ নারী চিকিৎসকদের কাছে তাদের ওপর নির্যাতন চালানোর কথা স্বীকার করো।