মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে প্রয়োজনীয় সব কিছু করার অঙ্গীকার প্রধানমন্ত্রীর
মুক্তিযুদ্ধকে বাংলাদেশের ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের উত্তরাধিকারীদের কল্যাণে যা কিছু প্রয়োজন তা করার জন্য তার দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, ‘আমি অন্ততপক্ষে মুক্তিযোদ্ধাদের মহান আত্মত্যাগ ভুলতে পারি না। আমি তাদের জন্য যা কিছু করার করবো। আল্লাহ যেন আমাকে সেই তৌফিক দান করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র সংগ্রামের পথ বেয়ে পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছে।
তিনি বলেন, নিজের জীবনকে তুচ্ছজ্ঞান করে মুক্তিযুদ্ধে অনন্য অবদান রেখে মুক্তিযোদ্ধারা আমাদেরকে একটি দেশ ও একটি লাল-সবুজ পতাকা উপহার দিয়েছেন।
তিনি বলেন, এ জন্য জাতির বীর সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক মর্যাদায় পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে এবং তাদের সর্বোচ্চ স্বীকৃতি দিতে আমাদের সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
সশস্ত্র বাহিনী দিবস-২০১৫ উপলক্ষে গতকাল শনিবার আয়োজিত বীরউত্তম, বীর বিক্রম ও বীর প্রতীকসহ খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা/তাদের উত্তরাধিকারীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন।
সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ (এএফডি) চত্বরে অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন এএফডি’র প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লে. জেনারেল মইনুল ইসলাম।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী একেএম মোজাম্মেল হক, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক, নৌবাহিনী প্রধান ভাইস অ্যাডমিরাল এম ফরিদ হাবিব এবং বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল আবু এশরার এবং উচ্চপদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাগণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী সাতজন বীরশ্রেষ্ঠ’র উত্তরাধিকারীদের পাশাপাশি অন্যান্য এওয়ার্ড প্রাপ্তদের উপহার প্রদান করেন।
তিনি সশস্ত্র বাহিনীর জুনিয়র কমিশনড অফিসার (জেসিও) এবং যুদ্ধ ও শান্তিকালীন সময়ে বীরোচিত অবদান রাখার জন্য অন্যান্য র্যাঙ্কের সদস্যসহ ১৯ জনের মাঝে ‘বাহিনী পদক’ (ফোর্সেস মেডেল) এবং অসামান্য সেবা পদক (আউটস্ট্যান্ডিং সার্ভিস মেডেল) প্রদান করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার স্বাধীনতা যুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষণে অঙ্গীকারাবদ্ধ।
‘স্বাধীনতা অর্জনে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অমূল্য অবদান স্মরণ রাখা আমাদের জাতীয় দায়িত্ব।’
মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে তার সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক সম্মানী ভাতার পরিমাণ ৯০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০০০ টাকা করা হয়েছে। ভাতা বাড়িয়ে ১০ হাজার টাকা করার একটি প্রস্তাব রয়েছে এবং আমরা এটি করবো।
তিনি খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বৃদ্ধি ও ভাতা গ্রহণকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি এবং শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবার ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে স্বল্পমূল্যে রেশন সামগ্রী প্রদান এবং সকল জেলা ও উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স নির্মাণের কথা উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আধুনিক পদ্ধতিতে মুক্তিযোদ্ধাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশের জন্য ডাটাবেইজ কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে।
ডাটাবেইজ কার্যক্রম সম্পন্ন করার মাধ্যমে একটি নির্ভুল মুক্তিযোদ্ধা তালিকা তৈরি করে জাতিকে উপহার দেয়া হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডাটাবেইজ কার্যক্রম সম্পন্ন করার মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৯টি নিরাপত্তা বার কোডসহ মূল সনদপত্র প্রদানের বিষয়টি বিবেচনাধীন রয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরে শহীদ ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের ভাতা, চিকিৎসা এবং রেশন সামগ্রী বাবদ প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শহীদ ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এবং উত্তরাধিকারীদের রাষ্ট্রীয় সম্মানী ভাতার আওতায় আনার জন্য তিনি ইতোমধ্যেই নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসনের জন্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ভূমিহীন অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বাসস্থান নির্মাণ বাবদ ২২৭ কোটি ৯৭ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
এছাড়াও সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের তত্ত্বাবধানে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের বিস্তারিত তথ্য সম্বলিত একটি ওয়েব এপ্লিকেশন প্রস্তুতের কাজ ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে।
গতকাল শান্তিকালীন পদকপ্রাপ্ত সশস্ত্র বাহিনীর ১৯ জন কর্মকর্তা, জেসিও এবং অন্যান্য পদবীর সদস্যদের পদকে ভূষিত করার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করে বলেন, এই অসাধারণ কর্মতৎপরতার ধারাবাহিকতায় ভবিষ্যতেও দেশমাতৃকার সার্বভৌমত্ব রক্ষাসহ জাতির যে কোনো প্রয়োজনে আপনারা নিবেদিত থাকবেন। -বাসস