লন্ডনে মুজাহিদের গায়েবানা জানাজা

AltabAliপূর্ব লন্ডনের আলতাব আলী পার্কে জামায়াতে  ইসলামির  সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রোববার বাদ জোহর যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংগঠন ‘সেভ বাংলাদেশ ইউকে‘র উদ্যোগে এ জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।  কমিউনিটির বিভিন্নস্থরের মানুষের উপস্থিতিতে গায়েবানা জানাযায় ইমামতি করেন শায়েখ মওদুদ হাসান।
এর আগে এক সংক্ষিপ্ত  প্রতিবাদ সভায় জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিষ্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী আলী আহসান মোঃ মুজাহিদ ছিলেন একজন সৎ ও নির্লোভ মানুষ। আমি ছাত্রজীবন থেকেই তার সাথে ঘনিষ্ট ছিলাম। তিনি মানবতাবিরোধী কোনো অপরাধে জড়িত থাকতে পারেন না। আলী আহসান মোঃ মুজাহিদ ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন উল্লেখ করে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, একজন আইনজীবি হিসেবে আমি বলতে চাই নিরপেক্ষ বিচার হলে মানবতাবিরোধী অপরাধে কারোরই ফাঁসি হতো না। এই কঠিন সময়ে তিনি সবাইকে ধৈর্য্য ধরে মুজাহিদ ও তার শোক সন্তপ্ত পরিবারের জন্য দোয়া আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, আমরা আজ অত্যান্ত ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আপনাদের সামনে দাঁড়িছি। আজকে বাংলাদেশের জন্য একটি কালো দিন। বিশ্বের বিচারিক ইতিহাসে একটি কালো দিন। তিনি বলেন, যুদ্ধপরাধীদের বিচার নতুন কিছু নয়। বিশ্বে বহুদেশে হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর নুরেনভাগে হয়েছে। রুয়ান্ডায় হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে একটি জিনিস স্পষ্ট, বিশ্বের সকল সভ্য সমাজ বলছে আমরা বিচার চাই। এর পাশপাশি তারা বলছে এই যে বিচার হচ্ছে এটি বিচারের নামে অভিচার। এ্যামেনিস্টি ইন্টারন্যাশনাল, ইউকে বার এসোসিয়েশন, ইন্টারন্যাশনাল বার এসোসিয়েশন, ইউনাটে ন্যাশনের বিভিন্ন সংস্থা সবাই এক বাক্যে বলেছে এই বিচার বন্ধুর, স্বচ্ছা বিচার করুন।
তিনি বলেন, দুনিয়ার ইতিহাসে এমন বিচার কোথাও দেখিনি। সারা দুনিয়ার মানুষ বলছে এটি বিচারে নামে অভিচার হচ্ছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কালো দিন। এটি যে বাংলাদেশকে কোথায় নিয়ে যাবে তা আমাদের জানাইে। আজকে যারা জিদে এই বিচার করছে তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ইতিহাসের চাকা ঘুরে। সব কিছু পার যাবেন, এটি মনে করবেন না। আমরা এই হত্যার প্রতিবাদ জানাচ্ছি, এর পরিনতি সমস্থ জাতিকে বহন করতে হবে।
তিনি বলেন, যে চারজনকে হত্যা করা হয়েছে তাদের আইনজীবী হয়ে লড়েছি। বিশ্বাস করুন সঠিক বিচার হলে তারা সকলেই মুক্তি পেতেন। তিনি বলেন, মোজাহিদ সাহেব ও সালাউদ্দিন সাহেব রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চান বরুন তারা রাষ্ট্রপতির কাছে বিচারের অনিয়ম তুলে ধরতে চেয়েছিলেন। আজ মিডিয়ার মাধ্যমে মিথ্যাচার করা হচ্ছে। তিনি এর প্রতিবাদ জানান।
সভাপতির বক্তব্যে সরকারের নোংরা রাজনীতির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে সেভ বাংলাদেশ ইউকের চেয়ারম্যান ব্যারিষ্টার নজরুল ইসলাম বলেন, রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চেয়েছেন বলে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের সাথে তামাশা করা হয়েছে। সাবেক মন্ত্রী মুজাহিদের বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ আনা হয়েছে, তা রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণ করতে পারেনি। তাকে ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। তিনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন। ব্যারিষ্টার নজরুল বলেন, রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চেয়েছেন বলে যে মিথ্যা প্রচারণা চালানো হয়েছে তাতে দেশ বিদেশের সবাই ক্ষুব্ধ। মুজাহিদের সাথে তার পরিবারের সদস্যরা শেষ সাক্ষাৎ করে কারাগার থেকে বেরিয়ে এসে সুস্পষ্টভাবে বলেছেন যে, তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে দোষ স্বীকার করেননি, ক্ষমা প্রার্থনা করেননি এবং প্রাণভিক্ষাও চাননি। মরহুম মুজাহিদের রুহের মাগফেরাত কামনা ও শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে ব্যারিষ্টার নজরুল ইসলাম বলেন, এই হত্যাকান্ডের মাধ্যমে ইসলামী আন্দোলনের অকুতোভয় কর্মীদের একবিন্দু পরিমাণ বিচলিত করতে পারবে না স্বৈরাচারী সরকার। শহীদ মুজাহিদের রক্ত বাংলাদেশের ইসলামী আন্দোলনকে সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিবে ইনশাল্লাহ। শহীদের স্বপ্নের সমাজ বিনির্মাণের মাধ্যমে হত্যাকান্ডের এই নির্মম ষড়যন্ত্রের সমোচিত জবাব দেয়া হবে। পরিকল্পিত এই হত্যাকান্ডের জন্য জালেম সরকারকে জনতার আদালতে একদিন জবাবদিহি করতে হবে।
সেভ বাংলাদেশ ইউকের কো-অর্ডিনেটর ব্যারিষ্টার আবু বকর মোল্লা বলেন, সমাজকল্যাণমন্ত্রী হিসেবে আলী আহসান মোঃ মুজাহিদ যে দক্ষতা ও সততার পরিচয় দিয়েছেন তা বাংলাদেশের জনগণ কখনো ভুলবে না। তিনি ইসলামী আন্দোলনের একজন অকুতোভয় সৈনিক ছিলেন। বর্তমান স্বৈরাচারী জালেম সরকার এ রকম একজন সৎ, খোদাভীরু ও যোগ্য জাতীয় নেতাকে ফাঁসিতে ঝুঁলিয়ে হত্যা করায় জাতি গভীরভাবে শোকাহত ও ক্ষুব্ধ। বিচারিক হত্যাকান্ডের জন্য হাসিনাকে একদিন জবাবদিহী করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মুজাহিদের প্রতি ফোঁটা রক্ত এ দেশের ইসলামী ও গণতন্ত্রমনা জনগণকে উজ্জীবিত করবে। আল্লাহপাক মুজাহিদকে শহিদ হিসেবে কবুল করুন।
যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক বলেন, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং সমগ্র বিশ্বের আপত্তির পর মিথ্যা অভিযোগে ও প্রহসনের বিচারের মাধ্যমে রং হেডেড শেখ হাসিনা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে ফাঁসি দিয়েছে । অন্যায় অবিচারের কাছে মাথা নত না করে আর রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা না করে তারা তার শক্ত ঈমানের পরিচয় দিয়েছেন। তিনি বলেন, শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারণে প্রহসনের বিচারের মাধ্যমে শেখ হাসিনা যে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছেন এজন্য একদিন তাকে বিচারের মূখোমুখি করা হবে।
জমিয়তে উলামা ইউরোপের সভাপতি মুফতি শাহ সদরুদ্দিন বলেন, আলী আহসান মুজাহিদকে ফাঁসি দেয়া বিচারিক হত্যাকান্ড। তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চেয়ে আবেদন করেননি। আন্তর্জাতিক মহলে ট্রাইবুনালের বিতর্কিত রায়কে বৈধতা দিতে সরকার তার প্রাণভিক্ষা আবেদনের নাটক করেছে। দেখাতে চেয়েছে যে তিনি অপরাধ স্বীকার করেছেন, সুতরাং রায় সঠিক হয়েছে। কিন্তু ইসলামী আন্দোলনের লড়াকু সৈনিকেরা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে প্রাণভিক্ষা চাইতে পারে না।
সেভ বাংলাদেশ ইউকে’র চেয়ারম্যান ব্যারিষ্টার নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাবেক ছাত্রনেতা বদরে আলম দিদারের পরিচালনায় প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক, জামায়েতে ইসলাম ইউরোপের মুখপাত্র ও সেভ বাংলাদেশ ইউকের কো-অর্ডিনেটর ব্যারিস্টার আবু বকর মোল্লা, যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এমএ মালেক, জমিয়তে উলামা ইউরোপের সভাপতি মুফতি শাহ সদরুদ্দিন প্রমুখ।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button