পরিমলের যাবজ্জীবন
ভিকারুন্নেসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণীর ছাত্রীকে ধর্ষণের দায়ে শিক্ষক পরিমল জয়ধরকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসাথে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ৬ মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে তাকে।
আজ বুধবার বেলা দুইটায় ঢাকা জেলা জজ আদালতে অবস্থিত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল- ৪ এ রায় দেয়।
২০১১ সালের ২৮ মে ভিকারুননিসা নূন স্কুলের বসুন্ধরা শাখার পাশে ‘এফ’ ব্লকে ৬ নম্বর রোডের একটি বাসায় দশম শ্রেণীর ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করে শিক্ষক পরিমল। এরপর ১৭ জুন দ্বিতীয় দফায় সে ধর্ষণের শিকার হয়।
পরে ওই ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে ৫ জুলাই বাড্ডা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১)/৩০ ধারায় পরিমল জয়ধর, অধ্যক্ষ হোসনে আরা এবং বসুন্ধরা শাখার প্রধান লুত্ফর রহমানকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলা দায়ের করার দু’দিন পর ২০১১ সালের ৭ জুলাই ভোররাতে কেরানিগঞ্জের এক আত্মীয়ের বাসা থেকে পরিমলকে ডিবি পুলিশ গ্রেফতার করে।
এরপর ২০১২ সালের ৭ মার্চ আসামি পরিমল জয়ধরের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে অপর আসামি ভিকারুননিসার সাবেক অধ্যক্ষ হোসনে আরা এবং একই প্রতিষ্ঠানের বসুন্ধরা শাখার প্রধান লুত্ফর রহমানকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
২০১১ সালের ১১ জুলাই পরিমল স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় এবং একই মাসের ১৭ তারিখে নির্যাতনের শিকার ভিকারুননিসা স্কুল বসুন্ধরা শাখার দশম শ্রেণীর ওই ছাত্রী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ২২ ধারায় ঘটনাটি বর্ণনা করে জবানবন্দি দেয়। পরে ১৪ আগস্ট মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে।
জবানবন্দিতে ধর্ষিতা ছাত্রী জানায়, ‘পরিমল স্যারের কাছে আমি বাংলা দ্বিতীয় পত্রের কোচিং করতাম। ২০১১ সালের ২৮ মে আমার কোচিংয়ে যেতে দেরি হয়। ওইদিন স্যার তিনটি অধ্যায় পড়ান। আমি শেষ অধ্যায়টি পাই। সেজন্য কোচিংয়ের পড়া শেষে সবাইকে ছেড়ে দিয়ে স্যার বলেন, ওই দু’টি অধ্যায় আমাকে আলাদা করে পড়িয়ে ছাড়বেন। এরপর সবাই চলে গেলে পড়ানোর এক পর্যায়ে তিনি হঠাৎ ওড়না কেড়ে নিয়ে আমার হাত বেঁধে ফেলেন। ধস্তাধস্তিতে আমি বেঞ্চ থেকে পড়ে যাই।’
এ সময় পরিমল স্যার আমাকে বিবস্ত্র করে মোবাইল ফোনে ছবি তোলে এবং ভয় দেখিয়ে প্রথম দফায় ধর্ষণ করে।
ধর্ষণের পর স্যার বলেন, ‘ঠিক মতো পড়াশোনা কর। এ ঘটনা কাউকে বলো না। বললে ইন্টারনেটে তোমার ছবি ছেড়ে দেব। আমার কিছুই হবে না। বরং তোমার বদনাম ও ক্ষতি হবে।’
ছাত্রীটি জানায়, ‘ভয়ে আব্বু আম্মুকেও কিছু বলিনি। কোচিংয়ে পড়া চালিয়ে গেছি।’
ভিকটিম বলেন, ‘পরের মাসে ১৭ তারিখে স্যার কোচিংয়ে একা পেয়ে আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমাকে ফের ধর্ষণ করে। ১৯ জুন স্কুলে গেলে স্যার দপ্তরি দিয়ে আমাকে টিচার্স রুমে ডেকে নিয়ে ১০০ টাকা দিয়ে বলে পিল খেয়ে নিস।’
পরিমল গোপালগঞ্জ জেলার কোটালিপাড়ার লাটেংগা গ্রামের বাসিন্দা ক্ষিতীশ জয়ধরের ছেলে। সে ২০১০ সালের ২ সেপ্টেম্বর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বসুন্ধরা শাখায় বাংলা বিভাগের শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছিল।