দুবাই-সৌদী পর্যটকদের প্রিয় গন্তব্য
দুবাই। একটি ভূ-ভাগের নাম। নাম শুনলেই বিশ্বের কোটি কোটি ভ্রমণ পিপাসু মানুষের মনের পর্দায় ভেসে ওঠে কী এক স্বপ্ন-রঙিন প্রকৃতি আর আধুনিকতার সযত্ন ছোঁয়ায় গড়ে ওঠা একটি নয়নাভিরাম অবকাশ যাপন গন্তব্যের কথা। বিশ্বখ্যাত ‘বুর্জ আল-খলিফা’ এখানকার প্রধান আকর্ষণ। কেবল এই আকাশছোঁয় এই স্থাপনাটির প্রবল টানে এখানে ছুটে আসেন বিশ্বের কোটি কোটি পর্যটক। প্রতিবছর অভিজাত দুনিয়ার বিলাসী পর্যটকদের মত সৌদী মুসাফির বা পরিব্রাজকদের বিনোদন বা প্রমোদনী বেড়ানোর জন্য আদর্শ স্থানে পরিণত হয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইসহ নীল বারিরাশি বেষ্টিত উপকূলীয় স্পটগুলো। বিশেষ করে অনেক কাজের ভিড়ে সংক্ষিপ্ত সফরে গিয়ে একটু ঝালিয়ে নিতে কর্মযজ্ঞের মাঝে একটু ফুরফুরে আমেজ আনতে সৌদী পর্যটকরাই এখানে আসেন সবচেয়ে অধিক পরিমাণে। আধুনিকতা আর প্রাকৃতিক নয়নাভিরাম দুবাই সৌদী পর্যটকদের প্রিয় স্পট।
আমিরাতের এক সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, কেবলমাত্র ২০১৪ সালেই প্রায় ১৮ লাখ সৌদী পর্যটক কর্মজীবনের ক্লান্তি-অবসাদ ঝেড়ে ফেলতে দুবাই’এর রিসোর্টসমূহে এসে বেড়িয়ে গেছেন।
ভ্রমণ ও পর্যটন শিল্প-সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতে দুবাই হচ্ছে বিশ্বের পর্যটন কেন্দ্রসমূহের মধ্যে প্রথম। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মিসরের রাজধানী কায়রো এবং শার্ম আল-শেখ এর অবস্থান।
এক সমীক্ষায় প্রকাশ, পর্যটন খাতে সৌদী নাগরিকদের বার্ষিক ব্যয় হয় প্রায় ৮ হাজার কোটি রিয়াল। দু’ সপ্তাহ আগের চেয়ে চলতি ভ্রমণ মওসুমে আরব দেশগুলোর শুধু বিমান বুকিং বেড়েছে প্রায় শতভাগ।
রিয়াদ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি’র ট্যুরিস্ট কমিটির ডেপুটি চেয়ারম্যান ওয়ালিদ আল-সুবাই বলেন, সৌদী ভ্রমণ পিয়াসুদের কাছে এখনও দুবাই-ই সবচেয়ে পছন্দের ডেস্টিনেশন। তিনি বলেন, চলতি স্কুল ছুটির মওসুমে বিমানের সব ফ্লাইটের অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে। দৈনিক প্রায় ৫ হাজার যাত্রী এ উপলক্ষে দুবাই গমন করছেন।
তিনি আরও বলেন, বিদেশে অবকাশ যাপন এখন নিম্ন আয়ের লোকজনসহ বহু সৌদী পরিবারের জন্য একটা সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আল-সুবাই বলেন, কিছু সৌদী নাগরিক ভ্রমণের জন্য ইউরোপীয় দেশের রাজধানীসমূহকেই অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন বিশেষ করে আইস স্কেটিং-এর জন্য লন্ডন ও প্যারিসের বিখ্যাত নগরগুলোকেই বেছে নি”েছন। এসব শহরের শতকরা আশিভাগই আগাম বুকিং হয়ে গেছে। কতিপয় নির্দেশকে দেখানো হয় কিছু সৌদী পরিবার আছে, যারা তাদের বাসন্তী অবকাশ মওসুমকে জেদ্দাতেই পবিত্র ওমরাহ্ পালনের মাধ্যমে কাটাবেন। এককথায় সৌদীরা দেশের চেয়ে গড়পড়তায় বিদেশেই ভ্রমণে কাটাতে আগ্রহী।
কমিটির অপর এক সদস্য মুহাইদিব আল-মুহাইদিব বলেন, বছরের এই সময়টাতে অনুকূল আবহাওয়ার জন্য সৌদী নাগরিকদের জন্য দুবাই-ই হচ্ছে প্রধান পর্যটন আকর্ষণীয় গন্তব্য। এরপরের অর্থাৎ দ্বিতীয় অবস্থানে আছে বাহরাইন।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য গত তিন মাস ধরে মিসরের রাজধানী কায়রো এবং শার্ম আল শেখ-এ ভ্রমণ ব্যয় প্রায় তিনশ’ গুণ পর্যন্ত বেড়ে গেছে। তবে সংক্ষিপ্ত বেড়ানোর জন্য এখনও আভ্যন্তরীণ নগরী জেদ্দাই আদর্শ। তবে রিয়াদ থেকে জেদ্দাগামী বিমানের বুকিং গত একমাস আগেই হয়ে গেছে। এই দুই নগরীর দূরত্বের কারণে পরিবারসহ সড়ক পথে বেড়ানো একরকম দুঃসাধ্য ব্যাপার। তবে কর্তৃপক্ষ অভ্যন্তরীণ শহরগুলোর মধ্যে আন্তঃনগর ফ্লাইট সংখ্যা বাড়াতে পারলে তা হতো স্থানীয় পর্যটন ব্যবসার ক্ষেত্রে সৌদী নাগরিকদের জন্য বড় অবদান।
নাসের বিন তাশা নামক একজন ট্রাভেল এজেন্সীর মালিক জানালেন ভিন্ন খবর। তিনি বলেন, স্প্রিং এবং স্কুল ছুটির মওসুমে স্থানীয় বেড়ানোর স্পট ‘চ্যালেট’ বা কটেজ এবং বিমান ভাড়া বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়ে থাকে, এমনকি আন্তর্জাতিক বিমান ভাড়ার চেয়েও বেশী! যা ইতোপূর্বে তারা কখনও দেখেননি। তাহলে কি জন্য তারা এত টাকা খরচ করে দেশের মধ্যে বেড়াতে যাবে?
জেদ্দা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পর্যটন কমিটির চেয়ারম্যান প্রিন্স আব্দুল্লাহ বিন সউদ বলেন, এখানকার আরামদায়ক অনুকূল বাসন্তী আবহাওয়ার কারণে হোটেল রুম এবং সুসজ্জিত অ্যাপার্টমেন্টগুলোর বুকিং হার বৃদ্ধি পায়। সৌদী নাগরিকদের জন্য অন্যান্য শহরের তুলনায় জেদ্দা হচ্ছে অভ্যন্তরীণ ভ্রমণের জন্য আদর্শ স্থান। এখানে হোটেল, শপিংমল এবং আনন্দ বিনোদনের স্পটগুলো খুবই সহজলভ্য এবং উপভোগ্য। তবে তিনি আন্তর্জাতিক দর্শনীয় স্থানের তুলনায় জেদ্দা অধিক ব্যয়বহুল এ অভিযোগ অস্বীকার করেন।
তবে জেদ্দা মওসুমি পর্যটনের সুযোগকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারছে না। বছরের ২শ’ দিনই স্পটগুলো পর্যটকহীনভাবে কাটায় অর্থাৎ এগুলো প্রায় অব্যবহৃতই থাকে। বাকি ১৬০ দিনে যে ব্যবসা হয় তা দিয়ে তাদের ব্যয় মিটিয়ে সামান্য আয় করাই কঠিন হয়ে পড়ে। আরব নিউজ অবলম্বনে সোহরাব আসাদ।