দুর্ভিক্ষে নিপতিত হওয়ার ঝুঁকিতে ইয়েমেন
চলমান সংঘাতের ফলে খাদ্য সরবরাহ আশংকাজনক হারে কমে যাওয়ায় দুর্ভিক্ষে নিপতিত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে ইয়েমেন। জাতিসংঘের খাদ্য সংস্থা একথা জানিয়েছে। ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামের উপ-আঞ্চলিক পরিচালক ম্যাথু হলিংওয়ার্থ বলেন, ইয়েমেনের ২২টি প্রদেশের ১০টিই মারাত্মকভাবে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। এগুলো দুর্ভিক্ষ থেকে এক ধাপ দূরে। ‘পরিষ্কারভাবে, কাজের ক্ষেত্রে বর্তমান বিশ্বের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ দেশ ইয়েমেন। এখানে ব্যাপক নিরাপত্তা উদ্বেগ, যুদ্ধের মাত্রা বৃদ্ধি ও দেশব্যাপী সহিংসতা চলছে’, বলেন ম্যাথু হলিংওয়ার্থ।
হলিংওয়ার্থ আরো বলেন, ‘আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করছি, প্রতি মাসেই আরো বেশি লোকের কাছে পৌঁছাচ্ছি। তবে নিশ্চিতভাবেই দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী দুর্ভিক্ষ থেকে এক ধাপ দূরে। আমাদের আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন দরকার, বিশেষ করে আগামী কয়েক মাসের জন্য।’ জাতিসংঘের হিউম্যানিটারিয়ান নিডস ওভারভিউয়ের নবেম্বর মাসের পর্যবেক্ষণ থেকে জানা যায়, ইয়েমেনের দুই কোটি ৩০ লাখ মানুষের মধ্যে এক কোটি ৪৪ লাখ খাদ্য নিরাপত্তাসহ নানা সমস্যায় ভুগছে। তারা স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে পর্যাপ্ত খাবার যোগান দিতে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। এদের মধ্যে ৭৬ লাখ মানুষের প্রচণ্ড খাদ্য সহায়তা দরকার। ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক মুখপাত্র আবির ইতেফা বলেন, দেশটির জনগন আর কোন আঘাত গ্রহণ করতে সক্ষম নয়। এটি খুবই গুরুতর পরিস্থিতি। এ অবস্থার যেন আর অবনতি না হয় সে জন্য আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। দেশটিতে গত মার্চ মাসে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। ইরানের সমর্থনপুষ্ট শিয়া হুতি বিদ্রোহীরা ইয়েমেনের রাজধানী সানা দখল করার পর থেকে এই সংঘাতের শুরু।
ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীদের দমনে বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট। জাতিসংঘের হিসেব মতে এ পর্যন্ত দেশটিতে ৫ হাজার ৭০০ লোক প্রাণ হারিয়েছে। যাদের মধ্যে অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক। এছাড়াও ১৫ লাখেরও বেশি মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে গেছে এবং অধিকংশ জনগণই খাদ্য, পানি ও জ্বালানিসহ মৌলিক চাহিদা পূরণে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সাথে আলাপকালে গৃহহীন ইয়েমেনী মোহাম্মেদ আহমেদ হাসান বলেন, আমি সকল মঙ্গলকামী মানুষকে অসহায় ও গৃহহীন ইয়েমেনীদের খাদ্য, আশ্রয়, পোশাক ও তোষক দিয়ে সহায়তা করার আহ্বান জানাই। তারা আপনাদেরই ভাই। তাদের কাছে কিছুই নেই, এমনকি ঘুমানোর জন্য একটি বিছানাও নাই। তারা মাটিতে ঘুমাচ্ছে, বলেন হাসান। চলতি বছরের ২৬ মার্চ থেকে ইয়েমেনে ‘অপারেশন ডিসাইসিভ স্টর্ম’ নামে সামরিক অভিযান পরিচালনা শুরু করে সৌদি আরব ও তার মিত্র দেশগুলো। ইয়েমেনের ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট আব্দ-রাব্বু মানসুর হাদির কর্তৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এ বিমান অভিযান পরিচালনা করা হয়। এর আগে দেশজুড়ে ইরান সমর্থিত শিয়াপন্থী হুতি বিদ্রোহীদের উত্থানের মুখে দেশ ছাড়েন মানসুর হাদি। প্রায় ছয় মাস সৌদি আরবে কাটানোর গত সেপ্টেম্বর মাসে দেশে ফেরেন প্রেসিডেন্ট মানসুর হাদি।