প্রবাসীদের বিনিয়োগে নিশ্চয়তা দেবে ব্যাংক

বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর আতিউর রহমান বলেছেন, প্রবাসীরা এনআরটিএ (প্রবাসীদের হিসেব) একাউন্ট ব্যবহার করে ব্যাংকের মাধ্যমে ফ্ল্যাট কেনার জন্য আবেদন করতে পারে। যেখানে ব্যাংক তাদের সব নিশ্চয়তা দেবে। ব্যাংক ভালোমানের বিভিন্ন রিয়েল এস্টেট কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করে নিজেরাই নিশ্চয়তাকারী হয়ে প্রবাসীদের ফ্ল্যাট কিনতে সহযোগিতা করবে। এতে প্রবাসীদের প্রতারিত হওয়ার সুযোগ থাকবে না।
গতকাল শনিবার সকালে সোনারগাঁও হোটেলে সেন্টার ফর অনাবাসী বাংলাদেশী (এনআরবি) আয়োজিত পুঁজিবাজার ও আবাসন খাতে প্রবাসী বাংলাদেশীদের বিনিয়োগ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই মন্তব্য করেন। সেন্টার ফর এনআরবির সভাপতি এম.এস. সেকিল চৌধুরীর সভাপতিত্বে এ সময় আরো বক্তব্য রাখেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ, বর্তমান জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য পারভেজ ইকবাল, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক সভাপতি রকিবুর রহমান, আহসানুল ইসলাম, সাবেক সহ-সভাপতি আহমেদ রশীদ, মেঘনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নুরুল আমিন, ঢাকা চেম্বারের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি হুমায়ুন রশীদ প্রমুখ।
গবর্নর বলেন, স্থিতিশীল অর্থনীতির জন্য একটি শক্তিশালী পুঁজিবাজার খুবই জরুরি। পুঁজিবাজার নিয়ে অনেকেই অনেক কিছু ভেবেছেন, আমার সম্পর্কে অনেক কথা বলেছেন। আমি সবসময় একটি স্থিতিশীল পুঁজিবাজারের পক্ষে ছিলাম। পরিস্থিতির কারণে কখনো কখনো আমাদের কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। সন্তান অবাধ্য হলে মাঝে মধ্যে শক্তিশালী সিদ্ধান্ত নিতে হয়। সেই শক্তিশালী সিদ্ধান্ত নিয়ে আমি শুধু পুঁজিবাজার নয়, মুদ্রাবাজারকেও বাঁচিয়েছি। নতুবা ৮-১০টি ব্যাংক পড়ে যেত।
তিনি বলেন, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি, সরকারসহ সবার সম্মিলিত চেষ্টায় বাজার স্থিতিশীল পর্যায়ে এসেছে। বাজার এখন অত্যন্ত শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে গেছে। আগামী দিনে তা আরো ভালো করবে।
পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ প্রসঙ্গে গবর্নর বলেন, পুঁজিবাজারে যেসব ব্যাংকের সীমার অতিরিক্ত বিনিয়োগ ছিল, সেসব ব্যাংক নিজেদের প্রয়োজনে অতিরিক্ত বিনিয়োগ ইতোমধ্যে প্রায় সমন্বয় করেছে। মাত্র কয়েকটি ব্যাংক এখনো সমন্বয় করতে পারেনি। আশা করি, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তারাও সমন্বয় করতে পারবে।
আতিউর রহমান আরো বলেন, প্রবাসীরা এনআরটিএ (প্রবাসীদের হিসেব) একাউন্ট ব্যবহার করে ব্যাংকের মাধ্যমে ফ্ল্যাট কেনার জন্য আবেদন করতে পারে। যেখানে ব্যাংক তাদের সব নিশ্চয়তা দেবে। ব্যাংক ভালোমানের বিভিন্ন রিয়েল এস্টেট কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করে নিজেরাই নিশ্চয়তাকারী হয়ে প্রবাসীদের ফ্ল্যাট কিনতে সহযোগিতা করবে। এতে প্রবাসীদের প্রতারিত হওয়ার সুযোগ থাকবে না।
প্রবাসীরা দেশে আবাসন খাতে বিনিয়োগ করে নানা ধরনের সমস্যা ও জাল-জালিয়াতির শিকার হয় বলে অভিযোগ আছে। তাই প্রবাসীরা যাতে বিনিয়োগবিমুখ না হয়, সেজন্য ব্যাংকগুলোকে এ ধরনের কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেন, রিহ্যাবকে (আবাসন খাতের সংগঠন) তাদের আচরণ (একজনের ফ্ল্যাট আরেকজনের কাছে বিক্রি করার মতো জালিয়াতি) বদলানোর অনুরোধ করছি। তাদের অবস্থানকে মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে লিডারশিপের ভূমিকায় আসতে হবে।
খুব শিগগিরই এ বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। এছাড়া প্রবাসীদের পাঠানো টাকা নিয়ে যদি কোনো ব্যাংক প্রতারণার আশ্রয় গ্রহণ করে তবে তাদের ছাড় দেয়া হবে না বলেও সতর্ক করে দেন তিনি।
গবর্নর বলেন, সরকারের সহযোগিতা পেলে প্রবাসীদের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক পেনশন স্কিমের ব্যবস্থা করতে চায়। দেশের অর্থনীতির স্থিতিশীলতার বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরে প্রবাসীদের বেশি বেশি পুঁজিবাজার ও আবাসন খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।
শাকিল চৌধুরী দেশে বিনিয়োগে প্রবাসীদের বিভিন্ন অভিযোগ ও সমস্যার কথা তুলে ধরে বলেন, ব্যাংকের মাধ্যমে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ চুরি করা হয় যা একটি বড় সমস্যা। যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক্ষেত্রে সহযোগিতা করে কিন্তু এটা অনেক সময়সাপেক্ষ ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।
তিনি বলেন, রাজউকের কিছু কর্মকর্তা ১৫-১৬ বছর আগে বরাদ্দ দেয়া ফ্ল্যাটের কাগজপত্র গায়েব করে, মূল ভলিয়ম থেকে তথ্য নষ্ট করে যদি নতুন করে ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেয় তবে কীভাবে প্রবাসীরা আবাসন খাতে বিনিয়োগে আসবে? স্বয়ং রাজউক যদি এ ধরনের কাজে জড়িত থাকে তাহলে বিনিয়োগ তো বাধাগ্রস্ত হবেই।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button