বাংলাদেশে আউটসোর্সিং খাতে বিশাল সম্ভাবনার ইঙ্গিত
বাংলাদেশে ঢাকায় প্রথমবারের মতো শুরু হওয়া “বিজনেস প্রসেস আউটসোসিং” বা বিপিও’র এক সম্মেলন থেকে বলা হচ্ছে, যে দেশটিতে আউটসোর্সিং বা ইন্টারনেট ব্যবহার করে বিদেশী প্রতিষ্ঠানকে সেবা দেয়ার খাতটি অচিরেই তৈরি পোশাক খাতের মতো বড়সড় একটি শিল্পে পরিণত হবে।
আগামী পাঁচ-ছয় বছরে এটির টার্নওভার ছাড়িয়ে যাবে ১ বিলিয়ন ডলার।
কিন্তু বছর সাতেক আগে বাংলাদেশে এই খাতটি আত্মপ্রকাশ করবার পর এখন পর্যন্ত বার্ষিক টার্নওভার দাড়িয়েছে একশো মিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি, যেটা প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় নগণ্যই বলা চলে।
জাহাঙ্গীর আলম সবেমাত্র ছাত্র জীবন পার করেছেন। এখন কাজ খুঁজছেন।
‘‘আউটসোর্সিংকে আমি পেশা হিসেবে নিতে চাই”, বলছিলেন মি. আলম।
কেন? সেই প্রশ্নে মি. আলম বলছেন, “এখানে আমি নিজেই বস। সব কিছুই আমি নিজেই করতে পারবো। কারো অধীনে আমাকে কাজ করতে হবে না।”
মি. আলম যে পেশাটায় যুক্ত হতে চাচ্ছেন, আউটসোর্সিং নামের সেই পেশাটা বাংলাদেশে খুব পুরোনো কোনও ধারণা নয়।
বছর কয়েক আগে বাংলাদেশের তরুন তরুণীরা অনলাইন ব্যাবহার করে বিশ্বের নানা দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করতে শুরু করে।
অসমর্থিত এক হিসেবে এখন এমন কর্মজীবির সংখ্যা কমবেশি চার লাখ, তবে এদের অধিকাংশই খন্ডকালীন।
২০০৮ সাল থেকে বাংলাদেশে কলসেন্টারের ব্যবসা শুরু করেন কোনও কোনও উদ্যোক্তা।
এই কলসেন্টারগুলো মূলত বিভিন্ন দেশী বিদেশী প্রতিষ্ঠানের হয়ে টেলিফোনে তথ্য আদান-প্রদানের কাজ করে।
বছর তিনেক আগে আইএসএসএল নামে এমন একটি কলসেন্টার স্থাপন করেছিলেন তরুণ উদ্যোক্তা মোহাম্মদ আমিনুল হক।
প্রথমে তিনি আটটি ডেস্ক নিয়ে ব্যাবসা শুরু করেছিলেন, এখন সেখানে তিন শতাধিক ডেস্ক।
মি. হক একই সাথে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কল সেন্টার এ্যান্ড আউটসোর্সিং, সংক্ষেপে বাক্যর যুগ্ম মহাসচিব।
এই সংগঠনটির এখন সত্তরটি সদস্য প্রতিষ্ঠান, সাত বছর আগের তিনশো কর্মসংস্থান বেড়ে দাঁড়িয়েছে পচিশ হাজারে।
প্রতিষ্ঠানগুলো এখন সব মিলে বছরে ১৩ কোটি ডলারের মতো ব্যবসা করে, তার শতকরা আশিভাগই অবশ্য আসে দেশের ভেতর থেকে।
অর্থাৎ বিদেশ থেকে তারা খুব সামান্যই অর্থ আনতে পারে ।
অথচ গোড়ার এই কলসেন্টারসহ অন্যান্য আউটসোর্সিং বাণিজ্যে বিরাট সম্ভাবনা দেখেছিলেন অনেকেই।
কারণ হিসেবে বলা হয়, বাংলাদেশের সস্তা শ্রম এবং প্রচুর সংখ্যক জনশক্তি। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র।
আমিনুল হক এর পেছনে একটা কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন বিদেশী ভাষায় দক্ষ জনশক্তির অভাব এবং ধীরগতির ইন্টারনেটসহ আরো কিছু অবকাঠামোর অভাবকে।
অগমেডিক্স নামে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠান ১৯৯০ সাল থেকে আমেরিকান চিকিৎসকদের নথি লিপিবদ্ধ করবার সেবা দেয়।
এতদিন তারা মূলত ভারতের জনশক্তি ব্যবহার করে আসছিল। এখন তারা একাজে বাংলাদেশের জনশক্তিও ব্যাবহার করার পরিকল্পনা করছে।
সংস্থাটির একজন ভাইস প্রেসিডেন্ট সিরি দায়া এস খালসা বলছেন, “আমি ঠিক জানিনা, এটা শুরুতে কেন ধীর গতিতে এগোল, কিন্তু আমি এটা জানি বাংলাদেশের জন্য এখনই সময়। এখানে বহু স্মার্ট মানুষ রয়েছে, যারা ইন্টারনেট ব্যাবহার করে বিশ্ব অর্থনীতিতে অংশগ্রহণ করতে সক্ষম।”
“তিন-চার বছর আগে বাংলাদেশে এমনকি একটি দ্বিতীয় ইন্টারনেট সংযোগ থাকতো না মানুষের, মানুষ ইন্টারনেট নির্ভর ব্যাবসা করতে ভয় পেত, কিন্তু এখানে এখন এটা শুরু করবার জন্য যথেষ্ট অবকাঠামো রয়েছে।”
এদিকে দুদিনের বিপিও সম্মেলন উদ্বোধন করতে এসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ছেলে ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয়, আগামী ৫ বছরের মধ্যে দেশটির বিপিও খাতে দুই লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন।
কর্মকর্তারা বলছেন, ২০২১ সাল নাগাদ বাংলাদেশের বিপিও খাত হবে এক বিলিয়ন ডলারের। কিন্তু সেটা যদি হয়ও, এখন পর্যন্ত এই খাত যে গতিতে এগোচ্ছে, তাতে তার কি পরিমাণ অংশ বৈদেশিক মুদ্রা হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। –আহরার হোসেন, বিবিসি বাংলা