গৌরবোজ্জ্বল বিজয়ের ৪৪তম বার্ষিকী

Bijoy১৬ ডিসেম্বর, বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবস। হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে বিজয় লাভের গৌরবোজ্জ্বল দিন এটি।
আজ থেকে ৪৪ বছর আগে এই দিনে পৃথিবীর মানচিত্রে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। এদেশের আপামর জনতা দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে এদিন বিজয় লাভ করে। পরাজিত হয় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিকেলে রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে) পাকিস্তানী বাহিনী যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। জন্ম হয় নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের।
যে অস্ত্র দিয়ে বর্বর পাকবাহিনী দীর্ঘ নয় মাস এদেশবাসীকে হত্যা করেছে, অসহায় মা-বোনের সম্ভ্রম কেড়ে নিয়েছে সেই অস্ত্র পায়ের কাছে নামিয়ে রেখে এক রাশ হতাশা এবং অপমানের গ্লানি নিয়ে বীর বাঙালির কাছে পরাজয় মেনে নেয় তারা। সেই থেকে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস পালিত হয়ে আসছে।
এদিন প্রত্যুষেই সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে জনতার ঢল নামবে। শ্রদ্ধার সাথে তারা শহীদের উদ্দেশে নিবেদন করবেন পুষ্পাঞ্জলি। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের সব প্রান্তের মানুষ অংশ নেবে বিজয় দিবসে। বঙ্গবন্ধুর বজ্র নিনাদ ভাষণ আর মুক্তিযুদ্ধের সময়ের জাগরণী গানে আকাশ-বাতাস হবে মুখরিত।
অফুরন্ত আত্মত্যাগ এবং রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই মহান বিজয়ের ৪৪ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ।
মহান বিজয় দিবসে ঊপলক্ষে পৃথক বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
বিজয় দিবস সরকারি ছুটির দিন। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। রাজধানীসহ দেশের বড় বড় শহরগুলোর প্রধান সড়ক ও সড়ক দ্বীপ জাতীয় পতাকায় সজ্জিত করা হবে। রাতে গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনায় করা হবে আলোকসজ্জা।
হাসপাতাল, কারাগার ও এতিমখানাগুলোতে উন্নত মানের খাবার পরিবেশন করা হবে। সংবাদপত্র বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করবে, বেতার ও টিভি চ্যানেলগুলো সম্প্রচার করবে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা।
১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে বাঙালিরা অস্ত্র হাতে পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এই মুক্তিযুদ্ধে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, ভুটান, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সাহায্য-সহযোগিতা করে। অবশেষে বাঙালি দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে বুকের উষ্ণ রক্তে রাঙিয়ে রাত্রীর বৃন্ত থেকে ছিনিয়ে আনে ফুটন্ত সকাল।
বিজয়ের এই ৪৪ বছর অনেক চরাই-উতরাই পেরিয়েছে জাতি। কখনো সামনে এগিয়েছে, আবার পিছিয়ে গেছে নানা রাজনৈতিক টানাপোড়নে। তবুও হতোদ্যম হয়নি জাতি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাধীনতার ৪৪ বছরে বাংলাদেশের অর্জন গর্ব করার মত। অর্থনৈতিক উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়নয়, দারিদ্র বিমোচন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এক অনন্য দৃষ্টান্ত। তবে রাজনৈতিক হানাহানি এবং দুর্নীতি বাংলাদেশের বিশাল সম্ভাবনাকে যেন আষ্ট্রেপৃষ্ঠে বেধে ফেলছে। গণতন্ত্রকে আকড়ে ধরে সুশাসনের পথে অবিচল থাকলে বাংলাদেশ বিশ্বসভায় আরো মহীয়ান হতে পারে।
বিশেষ বিশেষ কর্মসূচি
প্রত্যুষে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে দিবসটির সূচনা হবে। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তববক অর্পণের মাধ্যমে একাত্তরের শহীদদের শ্রদ্ধা জানাবেন।
সকাল দশটায় জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে অনুষ্ঠিত হবে বিজয় দিবস কুচকাওয়াজ। এতে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত থাকবেন।
এছাড়াও বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জাসদ, সিপিবি, ওয়াকার্স পার্টি, গণফোরামসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ঢাকা বিশ্বিবিদ্যালয়, বাংলা একাডেমী, শিল্পকলা একাডেমিসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি উদযাপন করবে।
এর মধ্যে আছে— সকালে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ, শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া, মিলাদ মাহফিল, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এ উপলক্ষে দু’দিনব্যাপী কর্মসূচি পালন করবে। ১৭ ডিসেম্বর বিকেল ৩টায় কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথির ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এদিকে, বিজয় দিবস উপলক্ষে রাজধানীতে বর্ণাঢ্য র‌্যালির আয়োজন করেছে বিএনপি। বুধবার দুপুর দুইটায় নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে মালিবাগ পর্যন্ত এই র‌্যালি হবে। এছাড়া মহান বিজয় দিবস ঘিরে ১৫ দিনব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছে দলটি।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button