কওমি মাদরাসায় জঙ্গি তৈরি হয় না : আইজিপি

IGPদেশের কওমি মাদ্রাসায় কোনো জঙ্গি তৈরি হয় না বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক। কওমি মাদ্রাসায় জঙ্গি তৈরি হয়, এমন অভিযোগ তিনি বিশ্বাস করেন না বলে জানান।
আইজিপি বলেন, দেশে কিছু বুদ্ধিজীবী আছেন, তারা অকারণেই বলেন যে, কওমি মাদ্রাসাগুলোতে জঙ্গি তৈরি করা হয়। আমি এটা বিশ্বাস করি না। মাদ্রাসাগুলো ইসলামের খুঁটিনাটি বিষয় শিক্ষা দিয়ে থাকে। মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের দু-চারজন পথভ্রষ্ট হতেই পারে।
পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে ‘জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে ইসলামের ভূমিকা ও বাংলাদেশ প্রেক্ষিত’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের এআইজি (গোপনীয়) মোঃ মনিরুজ্জামানের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন এডিশনাল আইজিপি মোখলেছুর রহমান, ড. জাভেদ পাটোয়ারি (এসবি), অতিরিক্ত আইজিপি (এইচআরএম) মোঃ মঈনুর রহমান চৌধুরী, অতিরিক্ত আইজিপি (অর্থ) মোঃ আবুল কাশেম, ডিএমপি কমিশনার মোঃ আছাদুজ্জামান মিয়া, ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম, শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানের ঈমাম ও জমিয়াতুল উলামাহ’র চেয়ারম্যান মওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসুদ, মাওলানা রুহুল আমীন খান উজানী, মাওলানা দেলোয়ার হুসাইন সাইফী, মাওলানা যাকারিয়া নো’মান ফয়েজী, প্রিন্সিপ্যাল, মাওলানা আইয়ূব আনসারী, মওলানা যাইনুল আবেদীন, মওলানা হাবীবুর রহমান খান, মাওলানা শোআইব আহমদ, মাওলানা নাসীরুদ্দীন কাসেমী, মাওলানা সদরুদ্দীন মাকনুন, মাওলানা আব্দুল হক প্রমুখ।
আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক বলেন, পুলিশ মসজিদের খুতবাকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায় না, সরকারও তা চায় না। মসজিদ ও মাদ্রাসাগুলোতে পুলিশ গোয়েন্দা দিয়ে নজরদারি করতে চায় না। তবে আপনারা (উপস্থিত আলেম-মসজিদের ঈমাম) খুতবার আগে বাংলায় যে বয়ান করা হয়, সেখানে জঙ্গিবাদবিরোধী বক্তব্য দেবেন, যাতে করে জনগণ সচেতন হয়ে জঙ্গিবাদবিরোধী হয়ে গড়ে ওঠেন।
আইজিপি বলেন, আমরা ব্লগারদের বলেছি, আপনারা মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে কোনো লেখা লিখবেন না। তারাও কথা দিয়েছেন, ধর্ম নিয়ে কোনো লেখা লিখবেন না। তবে লিখলেই কি তাকে মেরে ফেলতে হবে? এটাই উগ্রতা। আর এটাই হলো জঙ্গিবাদ। দেশের এক লাখ আলেম-ওলামা নিয়ে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে যে কমন ফতোয়া লিখবেন তার একটি কমিটির অনুমোদন দেন আইজিপি। ওই কমিটিতে পুলিশের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও আলেম-ওলামাদের কয়েকজন থাকবেন বলে জানান। এ ছাড়া সারা দেশে জঙ্গিবাদবিরোধী লিফলেট প্রচারের জন্য আরো একটি কমিটি গঠনের অনুমোদন দেওয়া হয়।
অতিরিক্ত আইজিপি (এসবি) জাভেদ পাটোয়ারি বলেন, দেশের প্রত্যেক জেলা ও উপজেলায় জঙ্গিবাদবিরোধী সমাবেশ করা হবে। সেখানে ওলামা মাশায়েখ ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা একই সঙ্গে একই মঞ্চে বক্তব্য রাখবেন। তিনি এক লাখ আলেম-ওলামার সমন্বয়ে একটি কমন ফতোয়া তৈরির ওপর জোর দেন।
অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) মোখলেছুর রহমান বলেন, জুমার নামাজে খুতবার সময় জঙ্গিবাদবিরোধী আলোচনা করে জনগণকে এক কাতারে নিয়ে আসুন।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, জঙ্গিদের টার্গেট অন্য কেউ নয়, তাদের টার্গেট মুসলমানরাই। জঙ্গিদের যাদের ধরা হয়, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায় তারা কোরআনের খন্ডিত আয়াত ব্যাখ্যা করে ভুল পথে আসছে। তাদের ইসলাম সম্পর্কে গভীর ধারণা নেই। আইন প্রয়োগ করলে তাদের জীবন শেষ হয়ে যাবে। কাজেই আপনারা বোঝাতে পারলে তারা ভুল পথে পরিচালিত হবে না। তারা ইসলামের সঠিক ব্যাখ্যা জানলে জঙ্গিবাদ থেকে ফিরে আসবে।
মুফতি আব্দুল কাইয়ুম খান বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম। মানুষের কাছে ইসলামের সত্যিকার আদর্শ তুলে ধরতে হবে।
মাওলানা আব্দুল হক বলেন, ইসলাম সন্ত্রাস, মানুষ হত্যা, মানুষের জানমালের ক্ষতি করা সমর্থন করে না। মানুষকে সত্য পথে চলা, সৎ কাজ করার পরামর্শ দিতে হবে।
মাওলানা কাজী ফজলুল করিম বলেন, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও অপরাধ এ তিনটি তিন জিনিস। ইসলাম কখনো জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদকে প্রশ্রয় দেয় না। ওলামা-মাশায়েখরা যেন সরকারের প্রতিপক্ষ না হয়। এজন্য সবাইকে পরমতসহিষ্ণু হতে হবে।
মাওলানা আরিফ উদ্দিন মারুফ বলেন, ইসলাম হলো চেতনার তৈরির ধর্ম। ইসলামের প্রতি মানুষের মানসিকতা তৈরি করতে হবে। তিনি বলেন, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয়, জেলা ও থানা পর্যায়ে কমিটি গঠন করতে হবে।
মাওলানা তাজুল ইসলাম কাসেমি বলেন, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী যে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চলছে তার সাথে আলেম-ওলামাদের কোনো সম্পর্ক নেই। বাংলাদেশের সুনাম নষ্ট করার জন্য একটি গোষ্ঠী চক্রান্ত করছে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button