সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধাবসানে জাতিসংঘের শান্তি পরিকল্পনা গৃহীত

UNসিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ অবসান ও শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি আন্তর্জাতিক  রোডম্যাপের প্রস্তাব জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে গ্রহণ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে প্রধান বিশ্বশক্তিগুলোর মধ্যে বিরল ঐক্য দেখা গেছে।
বিবিসি বলছে, ১৫ সদস্য বিশিষ্ট জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ শুক্রবার এই শান্তি পরিকল্পনার প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে গ্রহণ করেছে।
গৃহীত ওই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, সিরীয় সরকার ও বিরোধীপক্ষগুলোর মধ্যে ২০১৬ সালের জানুয়ারির শুরুর দিকে আলোচনা ও অস্ত্রবিরতির উদ্যোগ নেওয়া হবে। প্রস্তাবে সিরিয়ার বিবদমান সব পক্ষকে সাধারণ মানুষের ওপর হামলা বন্ধের আহ্বান জানানো হয়েছে। পাঁচ বছরে পড়তে যাওয়া সিরীয় যুদ্ধে আড়াই লাখেরও বেশি মানুষ নিহত ও ১০ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন বলে জাতিসংঘ জানিয়েছে।
অবশ্য সিরীয় প্রেসিডেন্ট বাসার আল আসাদের ভবিষ্যতের ব্যাপারে এখনো মতভেদ রয়েই গেছে।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স চায় আসাদ ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়াক। তাদের বক্তব্য দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতা হারিয়েছেন আসাদ।
কিন্তু রাশিয়া এবং চীন আলোচনায় আসাদের ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়া বিষয়ক কোনো শর্ত মানতে নারাজ। তবে শুক্রবার গৃহীত প্রস্তাবে আসাদের ভবিষ্যতের বিষয়ে কোনো কিছু উল্লেখ করা হয়নি। পাশাপাশি বিদ্রোহী কোন গোষ্ঠীগুলো অস্ত্রবিরতিতে প্রতিনিধিত্ব করবে সে ব্যাপারেও মতভেদ রয়েছে।
সিরিয়ায় ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ বন্ধে রাজনৈতিক সমাধানের ব্যাপারে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর একগুঁয়েমির কারণে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ দীর্ঘদিন ধরে কোনো ধরনের উদ্যোগ নিতে ব্যর্থ হচ্ছিল।
বছরের পর বছর প্রত্যেকেই এই বিষয়ে জোর দিয়েছে, সামরিক পদক্ষেপে সমাধান আসবে না। কিন্তু কোনো পক্ষই এই সমস্যা সমাধানে অধিকতর কোনো উদ্যোগও নেয়নি।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির সভাপতিত্বে নিরাপত্তা পরিষদের ওই সেশন অনুষ্ঠিত হয়। তিনি বলেন, এই প্রস্তাব সবাইকে “পরিষ্কার একটি বার্তাই দিচ্ছে আর তা হচ্ছে, সিরিয়ায় হত্যা বন্ধের এখনই সময়।”
তিনি আরো বলেন, “আমরা যে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি তা একটি মাইলস্টোন কারণ এতে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য রয়েছে এবং সময়সীমা নির্দিষ্ট করা হয়েছে।”
তবে যেসব গোষ্ঠীকে সন্ত্রাসী সংগঠন বলে বিবেচনা করা হচ্ছে এই প্রস্তাবের ফলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণ বন্ধ হবে না। এরফলে রাশিয়া, ফ্রান্স এবং যুক্তরাষ্ট্র ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে বিমান হামলা চালিয়ে যেতে পারবে।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত প্রস্তাবনার মূল সিদ্ধান্তগুলো হচ্ছে:
১. অস্ত্রবিরতি ও একটি রাজনৈতিক পরিবর্তনের লক্ষ্যে জানুয়ারির শুরুর দিকে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হবে।
২. ইসলামিক স্টেট (আইএস) ও নুসরা ফ্রন্টের মতো সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচিত গোষ্ঠীগুলোকে এই আলোচনায় যুক্ত করা হবে না।
৩. এসব গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোট ও রাশিয়ার বিমান হামলার মতো ‘আক্রমণাত্মক ও আত্মরক্ষামূলক’ পদক্ষেপ অব্যাহত থাকবে।
৪. অস্ত্রবিরতি কীভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে  সে ব্যাপারে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন ১৮ জানুয়ারির মধ্যে একটি প্রতিবেদন দেবেন।
৫. ছয়মাসের মধ্যে একটি গ্রহণযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক ও অসাম্প্রদায়িক সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হবে।
৬. জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে ১৮ মাসের মধ্যে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
৭. রাজনৈতিক পরিবর্তন হবে সিরিয়ানদের নেতৃত্বেই।
ফরাসী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যরঁ ফাবিউস এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে আসাদের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কোনো পরিকল্পনাকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button