রাশিয়া ও ইরানের মুঠোয় মধ্যপ্রাচ্য

Russiaআন্তর্জাতিক ক্ষমতার রঙ্গমঞ্চে নিঃশেষ হতে যাওয়া রাশিয়া ও ইরান নাটকীয়ভাবে মধ্যপ্রাচ্যে ফিরে এসেছে। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর মধ্যপ্রাচ্যসহ পুরো বিশ্বে নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছিল মস্কো। ২০১৫ সালে সিরিয়ায় হস্তক্ষেপের মাধ্যমে হারানো প্রভাব ফিরে পাচ্ছে। অন্যদিকে পরমাণু অস্ত্রকেন্দ্রিক বিতর্ক ও নিষেধাজ্ঞায় বিচ্ছিন্ন ইরান আবার উঠে দাঁড়িয়েছে। পশ্চিমা শক্তির সমান্তরালে মধ্যপ্রাচ্যের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় এখন তেহরান। সোমবার বার্তা সংস্থা এএফপির বিশ্লেষণে এসব কথা বলা হয়েছে।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ সরকারকে রক্ষায় দেশটিতে বিমান হামলা শুরু করে রাশিয়া। সোভিয়েত আমল থেকেই মস্কোর ঘনিষ্ঠ মিত্র দামেস্ক। আসাদ বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধরত বিদ্রোহীদের হটাতে সিরিয়ায় বিমান বাহিনী পাঠান রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন। মার্কিন সমর্থিত আসাদের বিরোধী গোষ্ঠীসহ ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে ব্যাপক মাত্রায় বোমা হামলা শুরু করে রুশ বাহিনী। রাশিয়ার এ আকস্মিক হস্তক্ষেপে প্রমাদ গোনে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা জোট। অন্যদিকে ইরান তার রিভোলুশনারি গার্ড ও লেবাননের হিজবুল্লাহ বাহিনীকে দিয়ে আসাদবিরোধীদের ঠেকিয়ে রেখেছিল।
অবশেষে সিরিয়ায় পাঁচ বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধ অবসানের নেতৃত্বে এখন রাশিয়া। আর দামেস্কের দীর্ঘদিনের মিত্র তেহরানও এই বিবাদে পশ্চিমাদের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ইরানের ভূমিকাকে স্বীকার করে নেয়া হল।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আসাদ সরকারকে রক্ষায় রাশিয়া ও ইরানের এই ভূমিকা মূলত বিনিয়োগ। এর মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের পথ খুলে গেল তাদের। রাশিয়ার ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজি জার্নালের প্রধান ও ক্রেমলিনের ঘনিষ্ঠ আজদার কুর্তভ বলেন, রাশিয়া তার জাতীয় স্বার্থেই মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধে জড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে সোভিয়েত আমলের মর্যাদা ফিরিয়ে আনতে চান রুশ নেতারা। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর বিশ্বে আধিপত্য হারায় রাশিয়া। ১৯৯৪ সালের মে মাসে ইয়েমেনের মস্কোপন্থী গণতান্ত্রিক সরকারের পতনের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে প্রথম ধাক্কা খায় রুশ প্রভাব। ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ইরাক আগ্রাসনে সাদ্দামের পতনে আরেক মিত্র হারায় মস্কো। ২০১১ সালে জাতিসংঘের ছায়ায় লিবিয়া আক্রমণ করে রুশ মিত্র মুয়াম্মার গাদ্দাফিকেও হত্যা করা হয়। মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়ার সর্বশেষ দাঁড়ানোর জায়গা ছিল সিরিয়া। আসাদ সরকারের পতন হলে আন্তর্জাতিক পরাশক্তি হিসেবে দ্বিতীয় অবস্থানও হারাত রাশিয়া।
দামেস্কে নিযুক্ত সিনিয়র একজন রুশ কূটনীতিক বলেন, জাতিসংঘকে অবৈধভাবে ব্যবহার করে পশ্চিমারা লিবিয়ায় আমাদের প্রতারণা করেছে। আমরা কখনোই সেসব ভুলব না। সিরিয়াকে কিছুতেই তাদের হাতে ছেড়ে দেব না।
অন্যদিকে দশকব্যাপী অবরোধ নিষেধাজ্ঞা ও দর কষাকষির পর পশ্চিমাদের সঙ্গে ইরানের পরমাণু চুক্তি হওয়ার পর ইরান এখন অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। সিরিয়া সংঘাতে মধ্যপ্রাচ্যসহ বৈশ্বিক রাজনীতিতে তেহরানের নতুন অভিষেক হল। শেষ পর্যন্ত কীভাবে এই দুই দেশ নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখে, তাই এখন দেখার বিষয়।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button