ইউরোপের কঠিন ও মজার ট্রাফিক আইন
পানি ছিটানো নিষেধ
বৃষ্টি হলে ইউরোপের রাস্তাতেও একটু-আধটু পানি জমে। জলাবদ্ধতাও হয়। তবে জনগণের সেবা নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষ সদা তৎপর। এমনকি কোনো চালক অসতর্কতায় কারও গায়ে পানি ছিটিয়ে দিলে সঙ্গে সঙ্গেই আইন দাঁড়ায় ভুক্তভোগীর পাশে। ব্রিটেনে এ অপরাধে ১০০ পাউন্ড জরিমানা হয় চালকের। ওভারটেক করে মাঝের লেন দখল করে চালাতে শুরু করলে আরও বিপদ। জরিমানার অংকটা তখন এক হাজার পাউন্ড বা ১,৪০০ ইউরো।
গাড়ি পরিষ্কার না করলে
রুমানিয়ার রাস্তায় ভুলেও কখনও নোংরা গাড়ি নিয়ে নামবেন না। আপনার গাড়ি শহরের সৌন্দর্য হানির কারণ হলে ট্রাফিক পুলিশ আপনাকে ছাড়বে না। এমনকি শুধু নম্বর প্লেট, হেডলাইট বা পেছনের লাইট পরিষ্কার না করলেও গুনতে হবে মোটা অংকের জরিমানা।
বেশি ধীরে গাড়ি চালানো
সুইজারল্যান্ডে কখনও কখনও একটু বেশি আস্তে গাড়ি চালালেও সমস্যা। বিশেষ করে তিন লেনের রাস্তার একেবারে বাঁ দিকের লেন দিয়ে কেউ নিজের খুশিমতো শামুকের গতিতে গাড়ি চালাবেন, তা হবে না। এক্ষেত্রে কোনো গাড়ির গতিবেগ যাতে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটারের কম না হয় তা নিশ্চিত করার চেষ্টা চলছে। আগামী ২০১৬ সাল থেকে দেশে এমনই একটি আইন কার্যকর করবে সুইস সরকার।
বরফ থেকে সাবধান
শীতে গাড়ির দিকে বিশেষ নজর দিতে হয়। নভেম্বর থেকে এপ্রিল- এ পাঁচমাস আইসল্যান্ডে রাস্তায় বরফের কথা মাথায় রাখতেই হয়, লাগাতে হয় বিশেষ চাকা।
অস্ট্রিয়া, এস্টোনিয়া, ফিনল্যান্ড এবং জার্মানিতে শীতের সময় এমন চাকা ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক না হলেও নিজের স্বার্থেই বেশির ভাগ মানুষ শীত এলে চাকা বদলে নেন। আসলে বরফ পড়লে ওই ধরনের চাকা ছাড়া গাড়ি চালানো কখনও কখনও অসম্ভব হয়ে পড়ে।
পার্কিং
ফিনল্যান্ডে রাস্তাঘাট নিয়মিত পরিষ্কার করা হয়। কখন কোন রাস্তা পরিষ্কার করা হবে তা নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় কিংবা ইন্টারনেটে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে, এমনকি অনেকক্ষেত্রে এসএমএস-এর মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হয়। গাড়ি ঘণ্টার পর ঘণ্টা কোথাও রেখে দেবেন সে উপায়ও নেই। কতক্ষণের মধ্যে সরাতে হবে তা প্রথমে জানানো হয় এসএমএস-এ, তারপরও না সরালে নগর কর্তৃপক্ষই সরিয়ে দেবে। তবে আপনার গাড়ি সরানোর খরচটা কিন্তু আপনার।
দিনেও জ্বলবে আলো
সুইডেন, নরওয়ে আর ডেনমার্কে গাড়ি চালানো শেখানোর সময়ই বলে দেয়া হয়, ‘যখনই আঁধার নামবে তখনই আলো জ্বালাতে হবে।’ তার মানে দিনের বেলায় মেঘ করলে কিংবা শীতের কুয়াশাঢাকা আকাশের নিচেও গাড়ির লাইট জ্বালানো বাধ্যতামূলক। ২০১১ সাল থেকে ইইউভুক্ত দেশেই গাড়িতে ‘ডে-টাইম রানিং লাইট’ রাখার আইন কার্যকর করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ বাতিটি গাড়ির চাকা ঘুরলেই টুক করে জ্বলে ওঠে।
দুই চশমা
চোখে সমস্যা আছে? স্পেনে ড্রাইভিং লাইসেন্সেই তা লিখে দেয়া হয়। আর একবার লিখে দিলে সবসময় আপনাকে দু-দুটো চশমা সঙ্গে রাখতে হবে। একটা চোখে, অন্যটা গাড়ির ড্যাশবোর্ডে। চশমা না পরার কোনো অজুহাত দেখানোর পথ বন্ধ করতেই এ ব্যবস্থা। ‘চশমাটা বাসায় রেখে চলে এসেছি’ বললেও মাফ নেই। জরিমানা গুনতেই হবে।
সময় ও জায়গা অনুযায়ী
জার্মানির অটোবান অর্থাৎ হাইওয়েতে গাড়ির নির্দিষ্ট কোনো গতিসীমা নেই। তবে যেভাবে খুশি চালানোর উপায়ও নেই। গাড়ি চালাতে হয় জায়গা এবং সময় বুঝে। সে অনুযায়ী নির্ধারিত গতিসীমা লেখা থাকে রাস্তার পাশে। লোকালয়েও স্থান এবং সময়টাই গুরুত্বপূর্ণ। স্কুলের সামনে নির্ধারিত গতিসীমা অতিক্রম করলে জরিমানা তো হবেই, বাড়তি শাস্তি হিসেবে ‘পেনাল্টি পয়েন্ট’-ও যোগ হবে আপনার রেকর্ডে। –এ রিয়াজ