প্রবাসী আয়ে দশম বাংলাদেশ

Moneyপ্রবাসী-আয় বা রেমিট্যান্স অর্জনকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এখন সারা বিশ্বে দশম অবস্থানে। অভিবাসন ও প্রবাসী-আয় নিয়ে সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত ফেক্টবুক-২০১৬ থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। শীর্ষ ৩০ দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহের চিত্র রয়েছে বিশ্বব্যাংকের এই প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ অর্থবছরের হিসাবে বাংলাদেশে ১ হাজার ৫৮০ কোটি ডলার পাঠিয়েছেন বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশিরা। আর সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে সৌদি আরব থেকে। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বর্তমানে প্রায় ৭৬ লাখ বাংলাদেশি বাস করেন, তাঁরাই এই বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন। বাংলাদেশই হলো পৃথিবীর পঞ্চম বৃহত্তম দেশ, যে দেশের এত বিশালসংখ্যক প্রবাসী রয়েছেন।
বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, সারা বিশ্বে এখন সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স পাঠান প্রবাসী ভারতীয়রা। তাঁরা এ বছর মোট ৭ হাজার ২২০ কোটি ডলার নিজ দেশে পাঠিয়েছেন। বর্তমানে ১ কোটি ৩৯ লাখ ভারতীয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাস করেন। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতই বিশ্বের সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স অর্জনকারী দেশ, আবার এ দেশের মানুষই সবচেয়ে বেশি প্রবাসী।
রেমিট্যান্স পাঠানোর এ তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে চীন। চীনের সর্বশেষ অর্থবছরের হিসাব অনুযায়ী দেশটিতে এক বছরে রেমিট্যান্স এসেছে ৬ হাজার ৩৯০ কোটি ডলার। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স অর্জনকারী দেশের তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে ফিলিপাইন। সর্বশেষ হিসাবে দেশটিতে এক বছরে ২ হাজার ৯৭০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, এই বিশাল অঙ্কের রেমিট্যান্স দুইভাবে উপকারে আসছে। যে তরুণ গোষ্ঠী বিদেশে যাচ্ছে, তারা দেশে থাকলে বেকার থাকত। আর তাতে শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতি নয়, সামাজিক ক্ষতিও হতো। এ ছাড়া প্রবাসীরা প্রবাসে যে কাজ করেন, তা যদি দেশে করতেন, তাহলে আড়াই থেকে তিন গুণ কম আয় করতেন। প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো টাকায় গ্রামীণ অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে। তাই বিদেশে দক্ষ শ্রমিক পাঠানোর ওপর গুরুত্ব দেন তিনি।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, রেমিট্যান্স আদান-প্রদানে বিশ্বের শীর্ষ ৩০টি করিডরের মধ্যে ভারত-বাংলাদেশ ১৬তম অবস্থানে রয়েছে। এই করিডর দিয়ে বছরে ৪৬০ কোটি ডলার আদান-প্রদান হয়। এ ছাড়া সৌদি আরব-বাংলাদেশ করিডরটির অবস্থান বিশ্বে ২৩তম। এ করিডর দিয়ে ৩৯০ কোটি ডলার আদান-প্রদান হয়েছে, যার সিংহভাগই এসেছে বাংলাদেশে। বিশ্বে রেমিট্যান্স আদান-প্রদানকারী করিডরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় করিডরটি হলো ‘যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো’ করিডর। এ করিডর দিয়ে ২০১৫ সালে ২ হাজার ৫২০ কোটি ডলার আদান-প্রদান হয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশের রেমিট্যান্স আয়ের প্রধান ভরসা প্রবাসী অদক্ষ ও স্বল্প দক্ষ শ্রমিক।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে ৩০টি দেশের একটি তালিকা করা হয়েছে। উচ্চশিক্ষিত প্রবাসীদের রেমিট্যান্সের ওপর ভিত্তি করে এ তালিকা করা হয়েছে, যেখানে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার কোনো দেশের নাম নেই। অর্থাৎ প্রবাসে বসবাসরত বাংলাদেশি ও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যরা উচ্চশিক্ষিত নন। তাই উচ্চ বেতন বা মজুরির চাকরি করার সুযোগ নেই।
এ ছাড়া প্রতিবেদনে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় কী পরিমাণ প্রবাসী-আয় অর্জন হয়, এমন শীর্ষ ৩০ দেশের তালিকায়ও নেই বাংলাদেশ।
অন্যদিকে কম খরচে রেমিট্যান্স পাঠানো যায়—এ রকম শীর্ষ ৩০টি করিডরের তালিকাও প্রকাশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। তাতে বাংলাদেশ দুটি করিডরে পড়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিঙ্গাপুর থেকে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স পাঠানোর খরচ সবচেয়ে কম। এ করিডরে প্রতি ২০০ ডলার পাঠাতে ১ দশমিক ৯ শতাংশ অর্থ খরচ হয়। একই পরিমাণ অর্থ সৌদি আরব থেকে পাঠাতে খরচ হয় ৩ দশমিক ১ শতাংশ।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সবচেয়ে বেশি ৫ হাজার ৬৩০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স বিভিন্ন দেশে গেছে। এর পরের অবস্থানে থাকা সৌদি আরব থেকে ৩ হাজার ৬৯০ কোটি ডলার এবং তৃতীয় অবস্থানে থাকা রাশিয়া থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রেমিট্যান্স পাঠানো হয়েছে ৩ হাজার ২৬০ কোটি ডলার।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button