যেমন গেল পুতিনের ২০১৫ সাল
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের জন্য ২০১৪ সাল বলার মতো সুখকর ছিল না। তবে ২০১৫ সালে দারুণভাবে ফিরে আসেন। প্রতিপক্ষকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ২০১৫ সালে বিশ্ব রাজনীতিতে রীতিমতো দাপিয়ে বেড়িয়েছেন তিনি। বিশ্ব রাজনীতিতে রাশিয়ার ভূমিকাকে আরো বেশি স্পষ্ট করে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন।
রাশিয়ান ফেডারেশনের সঙ্গে ক্রিমিয়ার সংযোগ ঘটিয়ে ২০১৪ সালে তোপের মুখে পড়েছিলেন পুতিন। এরপর বিভিন্নমুখী অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হয় মস্কো। এর মধ্যে জাতিসংঘে রাশিয়ান ফেডারেশনের সঙ্গে ক্রিমিয়ার সংযুক্তি অবৈধ বলেও একটি প্রস্তাব পাস করা হয়। এরপর পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞাকে থোড়াই কেয়ার করে চীনের সঙ্গে জ্বালানি চুক্তি করেও খুব বেশি সুবিধা করতে পারেননি পুতিন। আবার ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে মস্কোপন্থী ‘বিদ্রোহীদের গুলিতে’ মালেশিয়ার বিমান ভূপাতিত হলে আরো বেশি অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়ে যান রুশ প্রেসিডেন্ট। সবকিছু মিলেই ২০১৪ বাজে বছরই ছিল ভস্নাদিমির পুতিনের জন্য। কিন্তু ওই বাজে বছর কাটিয়ে ২০১৫ সালে বিশ্ব রাজনীতিতে দারুণভাবে ফিরে এসেছেন এই নেতা।
২০১৫ সালের শুরুতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট পেত্রো পোরোশেনকোকে শান্তিচুক্তিতে বাধ্য করেন পুতিন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ এবং জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেলের হস্তক্ষেপে স্বাক্ষরিত এ শান্তিচুক্তির পর পোরোশেনকো ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলকে বিশেষ মর্যাদা দেন। এর মধ্যে পোরোশেনকো এ চুক্তি ভঙ্গ করার কথা বললে কিয়েভের ওপর বিরক্তি প্রকাশ করেন মার্কেল এবং ওলাঁদ। যা পক্ষান্তরে পুতিনের জন্য ইতিবাচক পরিস্থিতি তৈরি করে। শান্তিচুক্তির পাশাপাশি পুতিন বিচক্ষণতার সঙ্গে পশ্চিমাদের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে মস্কোর জন্য তুলনামূলক স্থিতিশীল অর্থনীতি নিশ্চিত করেন। যা ২০১৫ সালে পুতিনের জন্য অন্যতম সাফল্যও বলা চলে।
২০১৫ সালের মে মাসে পুতিন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইউ) প্রতিবাদের মুখে গ্যাস পাইপলাইন তুরস্কের দিকে স্থাপন করেন। কিন্তু সেখানেও পুতিনের জন্য ইতিবাচক পরিস্থিতি ছিল না। ফলে রাশিয়ার নামকরা গ্যাস প্রতিষ্ঠান ‘গ্যাজপ্রম’ সাময়িকভাবে বেকায়দায় পড়ে। গ্যাস পাইপলাইন নিয়ে বেকায়দায় পড়ে পুতিন সামরিক কৌশল বেছে নেন। এই সামরিক কৌশলের অংশ হিসেবে তিনি সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে অবস্থান নেন।
বস্নুমবার্গের আন্তর্জাতিক রাজনীতিবিষয়ক লিওনিড বারশিডস্কির মতে, বছরের শেষদিকে এসে আইএসের বিরুদ্ধে এ অভিযানে সাফল্যও পান পুতিন। আমেরিকার নেতৃত্বে পশ্চিমা জোট আইএসের বিরুদ্ধে যে সাফল্য পায়নি, রাশিয়ার বিমানবাহিনী তা ছিনিয়ে আনে। এক হাজার মাইল দূরের কাস্পিয়ান সাগর থেকে আইএসের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করে বিশ্বের সব দেশকেই রীতিমতো চমকে দেয় রুশ বাহিনী। এ পরিস্থিতিতে ভূমিতে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের বাহিনী আরো বেশি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারলে আইএস দমন সময়ের ব্যাপার হিসেবেই দেখা দিত।
সিরিয়ায় মস্কোর হস্তক্ষেপকে জাতিসংঘ এবং আমেরিকা প্রাথমিকভাবে নেতিবাচক হিসেবে নিলেও সময়ের সঙ্গে তাকে ইতিবাচক হিসেবেই তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন পুতিন। রাশিয়া বাশার আল-আসাদকে সমর্থনের চেয়ে আইএস ধ্বংসের ওপরই বেশি জোর দিচ্ছে পশ্চিমাদের এ বিষয়টি বোঝাতে সক্ষম হন। ফলে আমেরিকা এবং জাতিসংঘ সিরিয়ায় রাশিয়ার ভূমিকাকে গঠনমূলক হিসেবে ধরে নেয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে সিরিয়ায় রাশিয়ার সামরিক পদক্ষেপকে ২০১৫ সালে পুতিনের অন্যতম সাফল্য হিসেবে মনে করছেন বিশ্লেষক বারশিডস্কি।
সবমিলিয়ে ২০১৫ সাল পুতিনের জন্য পয়মন্ত বছরই বলা চলে। সাফল্যের বিষয়টি খুব নজর না কাড়লেও রাশিয়ার ওপর আরোপিত অবরোধ তিনি যেভাবে সামাল দিয়েছেন, নিশ্চিতভাবেই তা প্রশংসার দাবিদার। বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে মস্কোর বিচরণের স্থান সংকুচিত হয়ে এলেও এ সংকোচনের মধ্যেই ইতিবাচক পরিস্থিতি তৈরি করেছেন পুতিন। ২০১৬ সাল পুতিনের জন্য কেমন হবে, তা আগাম বলা না গেলেও ২০১৫ নিয়ে নিশ্চয় তৃপ্তির ঢেঁকড় তুলতে পারেন তিনি। কারণ বিরুদ্ধ পরিস্থিতিতেই ইতিবাচক অবস্থা সৃষ্টি করে তিনি তার দূরদর্শিতা এবং বিচক্ষণতার প্রমাণ দেখিয়েছেন। তাই বলা যায়, পুতিনের ২০১৬ সাল নিয়ে তার শত্রুরা খারাপ কিছু কামনা করলেও রাশিয়ার জনগণ ভালো কিছুই চাইবে। তারা চাইবে, তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের অস্তমিত সূর্যে আবারো আধিপত্যের আলো ছড়ান সাবেক এ কেজিবি এজেন্ট।