ভূমিকম্পে কাঁপল দেশ : আতঙ্কে ৩ জনের মৃত্যু
প্রবল ভূমিকম্পে কাঁপল রাজধানী ঢাকাসহ সারা বাংলাদেশ। সোমবার ভোর ৫.০৭ মিনিটে এই ভূমিকম্প হয়। ভূমিকম্পের সময় আতঙ্কে রাজধানী ঢাকা, রাজশাহী ও লালমনিরহাটে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। হুড়োহুড়িতে আহত হয়েছে অর্ধশতাধিক। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। পুরনো ঢাকার একটি ভবন হেলে পড়েছে। ফাটল ধরেছে আরেকটি ভবনে। ফাটল দেখা গেছে বিজয় সরনীতেও।
৬ দশমিক ৮ মাত্রার এই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ভারতের মণিপুর রাজ্যের রাজধানী ইম্ফল থেকে ৩৩ কিলোমিটার পূর্ব-উত্তর-পূর্বে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের জিওলজিক্যাল সার্ভে (ইউএসজিএস)। ঢাকা থেকে ভূমিকম্প উৎপত্তিস্থলের দূরত্ব ছিল ৩৫১ কিলোমিটার পূর্ব-উত্তর-পূর্বে।
ভোরে এই ভূমিকম্প হওয়ায় নগরীর বেশির ভাগ মানুষই আচমকা জেগে ওঠেন ঘুম থেকে। আতঙ্কিত লোকজন নেমে আসেন রাস্তায়।
পুরান ঢাকার শ্যামবাজার এলাকার বাসিন্দা সানি মজুমদার বলেন, ‘হঠাৎ প্রচণ্ড শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। আশপাশের মসজিদ থেকে মাইকে কী যেন ঘোষণা দিচ্ছিল। উলু-শাঁখের আওয়াজও পাচ্ছিলাম।’
মিরপুরের বাসিন্দা মোর্শেদ বলেন, ‘প্রচণ্ড ঝাঁকুনিতে ঘুম ভেঙে যায়। আমি ও আমার স্ত্রী বুঝতে পারছিলাম না, কী করব। কোনোরকমে নিচে রাস্তায় নেমে আসি।’
এর আগে গত বছরের এপ্রিল থেকে মে মাসে নেপালে বেশ কয়েকটি বড় মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এতে আট হাজারের বেশি প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। আর এ ভূকম্পনে কেঁপে ওঠে বাংলাদেশও। এতে দেশের বিভিন্ন স্থানে বহুতল ও পুরোনো ভবনে ফাটল দেখা দেয়, আতঙ্কে মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে রাস্তায় বের হয়ে আসে।
শিগগিরই আরো ভূমিকম্প!
বাংলাদেশ এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে শিগগিরই আরো ভূমিকম্প হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই এলাকাটা অস্থির ভূ-স্তরের উপর দাঁড়িয়ে থাকায় বিজ্ঞানীরা এমন আশঙ্কা কিছু দিন ধরেই করে আসছিলেন। সেটা সত্য প্রমাণ করে সোমবার ভোরে বাংলাদেশ এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভূমিকম্পটি হয়ে গেল।
ভূ-বিজ্ঞানীরা বলছেন, মাটির নিচে ইন্ডিয়ান প্লেট এবং ইউরেশিয়ান প্লেট একে অপরের দিকে ক্রমাগত এগিয়ে চলেছে। এক একটা সময় এই দু’টি প্লেট একটি অন্যটির উপর পিছলে গেলে প্রচুর পরিমাণ শক্তি নির্গত হয় এবং তারই ফল ভূমিকম্প।
ওই একটি প্লেট আর একটি প্লেটের নিচে যত শক্তিতে ঢুকে যাবে, ভূমিকম্পের মাত্রাও তত বেশি হবে।
কলকাতার প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূবিদ্যা বিভাগের প্রাক্তন প্রধান হরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য জানান, একটি প্লেট আর একটি প্লেটের উপর উঠে যাওয়া কিংবা পিছলে নিচে চলে যাওয়াটা একটা স্বাভাবিক প্রাকৃতিক ব্যাপার। বহু বছর পর পর এমনটা হয়ে থাকে। কিন্তু, যখন বিষয়টা ঘটে তখন ঘন ঘন গোটা অঞ্চলে ভূমিকম্পের আশঙ্কা থাকে। একটা বা দুটো বড় ধরনের ভূমিকম্প মাটির তলায় চলতে থাকা ক্রমবর্ধমান অস্থিরতাকে হঠাৎ করেই বাড়িয়ে দেয়। তার জন্য একটা বড় ভূমিকম্পের পরে গোটা অঞ্চলে পর পর অনেকগুলি ভূমিকম্পের আশঙ্কা থাকে। মণিপুরের ক্ষেত্রে যেমনটা হয়েছে।
জিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া-র অবসরপ্রাপ্ত এক ভূ-বিজ্ঞানীর মন্তব্য, “উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ভূস্তর যে অবস্থায় রয়েছে তাতে আমরা ৬.৮ মাত্রার থেকেও বেশি মাত্রার ভূমিকম্পের আশঙ্কা করছি।” অর্থাত্ এই অঞ্চলে আরও বড় মাত্রার ভূমিকম্প হতে চলেছে। সেই আশঙ্কার কথা জানিয়ে দিয়েছেন ওই ভূ-বিজ্ঞানী।
বিজ্ঞানীদের একাংশ বলছেন, তাদের পরামর্শ উপেক্ষা করে যে ভাবে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের শৈলশহরগুলিতে বিধি না মেনে বহুতল হয়েছে তাতে পরিস্থিতিকে আরো বিপদসঙ্কুল করে তুলেছে। মেঘালয়ের পাহাড়ে ৭-৮ মাত্রার ভূমিকম্প হলে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হবে তেমনই ইঙ্গিত কিন্তু ভূ-বিজ্ঞানীরা দিয়ে রেখেছেন।