পৌণে তিনশ’ কোটি টাকার মালিক সাকিব
সাকিব আল হাসান! বিগত দশ বছরে বাংলাদেশ ক্রিকেটে সবচেয়ে আলোচিত এই নাম। আর হবেন না-ই বা কেন? মাত্র ৯ বছরেই যে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছেন বিশ্বের ১ নাম্বার অল-রাউন্ডার হিসেবে। আর শুধু তাই নয়, সাকিব এখন সমগ্র বাংলাদেশের শীর্ষ ধনী খেলোয়াড়, যার সম্পদের মূল্যমান পৌণে তিনশ’ কোটি টাকারও বেশি।
একসময় ক্রিকেটে ধনী খেলোয়াড় বলতেই চোখে ভাসতো ভারতীয় ক্রিকেটারদের ছবি। কিন্তু বঙ্গসন্তান বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানও যে তাদের চাইতে খুব পিছিয়ে নেই, তা প্রমাণ হয়েই গেল। বাংলাদেশের সবচেয়ে ধনী ক্রিকেটার হিসেবে আখ্যায়িত সাকিবের সম্পদের পরিমাণ সাড়ে তিন কোটি ডলার, বাংলাদেশি টাকায় যার পরিমাণ ২৭৫ কোটি ৬১ লাখ ৭৮ হাজার ২৫০ টাকা।
ক্রিকেট বিষয়ক ওয়েবসাইট ক্রিকেট ট্র্যাকারের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে সাকিবের আয়ের এই তথ্য উঠে এসেছে। বিশ্বের প্রায় সব বড় টি-টোয়েন্টি লিগে খেলা থেকে আয়, বাংলাদেশ বোর্ডের চুক্তি, খেলার পাশাপাশি মডেলিং এছাড়াও বিভিন্ন ব্যবসায় জড়িত সাকিব। এই সমস্ত আয় থেকে বিগত কয়েক বছরে সাকিবের সম্পদের পরিমাণ পৌণে তিনশ’ ছাড়িয়েছে বলে উল্লেখ করে ক্রিকেট ট্র্যাকার।
গত বছর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) থেকে বেতন হিসেবে প্রতি মাসে সাকিব আল হাসান পেয়েছেন ২ লাখ ১০ হাজার টাকা করে। এ বছর ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা করা হচ্ছে তার বেতন। পারিশ্রমিক হিসেবে প্রতি ম্যাচে ফি পেয়েছেন লাখ টাকার উপরে। এ ছাড়া দৈনিক ভাতা তো আছেই। বাংলাদেশে বিপিএলেও সাকিবের আয় হয়েছে সবচেয়ে বেশি। বিপিএলের দ্বিতীয় আসরে ৩ লাখ ৬৫ হাজার ডলারে বিক্রি হয়েছিলেন সাকিব। সর্বশেষ আসরে রংপুর রাইডার্স থেকে পেয়েছেন ৩৫ লাখ টাকা।
ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) থেকে সবচেয়ে বেশি আয় করেছেন সাকিব। ২০১১ সালে আইপিএলে কিং খানের কেকেআর সাকিবকে ৪ লাখ ২৫ হাজার ডলারে কিনে নেয়। ২০১৬ সালেও কলকাতায় খেলবেন বাঁহাতি এ অলরাউন্ডার। সাকিবকে রেখে দেওয়ায় আরো ২ কোটি ৮০ হাজার রুপি বেশি গুণতে হচ্ছে কেকেআরকে।
আইপিএল ও বিপিএলের মতো পিএসএলেও সাকিব এগিয়ে। পিএসএলে প্লাটিনাম ক্যাটাগরিতে থাকা সাকিব খেলবেন করাচি কিংসে। এজন্য পাবেন ১ লাখ ৪০ হাজার ডলার। এ ছাড়া বিগ ব্যাশ, ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ, এসএলপিএল ও ইংলিশ কাউন্টি ক্রিকেট থেকেও হাজারো ডলার আয় করেছেন সাকিব।
ব্যক্তিগত ব্যবসাতেও সাকিব সফল। যমুনা ফিউচার পার্কে সাকিবের নিজস্ব কসমেটিকসের দোকান কসমিক জোভিয়ান, বনানীতে নিজের রেস্টুরেস্ট সাকিবস ডাইন এরই মধ্যে লাভের মুখ দেখেছে। ‘ফিয়েস্তা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে বিশ্বসেরা এ অলরাউন্ডারের।
২০০৯ সালে উইজডেন ম্যাগাজিনের সেরা টেস্ট ক্রিকেটার নির্বাচিত হন সাকিব। সব ধরনের ক্রিকেটে ৪০০ উইকেট ও ৮ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন বিশ্বসেরা এই ক্রিকেটার। জ্যাক ক্যালিস, শহীদ আফ্রিদি, ক্রিস ক্যানস, কপিল দেব, সনাথ জয়সুরিয়ার মতো লিজেন্ডদের কাতারে নিজের নাম লেখান সাকিব।
ক্রিকেটের বাইরেও সাকিবের আয় আকাশচুম্বি। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পণ্যদূত হয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করছেন সাকিব। পেপসি, ক্যাস্ট্রল, নর্টন অ্যান্টিভাইরাস, বুস্ট, লাইফবয়, লা রিভ, লেনেভো, স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংক, বাংলালিংক, রানার মোটরসাইকেল, জা এন জি আইসক্রিম, টিফিন বিস্কুটস, সিঙ্গার ইলেকট্রনিকসের বিজ্ঞাপনী দূত হিসেবে মোটা অঙ্কের অর্থ পেয়েছেন সাকিব।
শুধুমাত্র মাঠেই নয়, মাঠের বাহিরেও সমানভাবে ছুটে চলেছে সাকিবের জয়জয়কার। আর তাইতো মাত্র ক’বছরেই বিশ্বের ১ নাম্বার অল-রাউন্ডার তো বটেই, সেই সাথে সাকিব নিজেকে বানিয়ে ফেলেছেন বাংলাদেশের ১ নাম্বার ধনী খেলোয়াড়।
যেভাবে ছুটে চলছে সাকিবের জয়রথ, কে জানে আগামী দশ বছরে সাকিব শুধু খেলোয়াড়দের মধ্যেই না, বরং পুরো বাংলাদেশের সেরা ১০ ধনীর তালিকায় আসবেন কি না! বর্তমান সময় যা বলছে, তা অনুসারে সেটি হতেও আর খুব বেশি দেরি নেই।