যুদ্ধাপরাধী ও তাদের সন্তানরা নাগরিকত্ব হারাচ্ছেন
‘বাংলাদেশ নাগরিকত্ব আইন, ২০১৬’র খসড়া তৈরি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এরই মধ্যে খসড়াটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের পাঠানো হয়েছে।
সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে আইনটি অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। সরকারি একটি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
আইনটি কার্যকর হলে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযুক্ত ব্যক্তি ও তার সন্তানরা বাংলাদেশের নাগরিকত্ব হারাবেন।
এতে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আনুগত্য প্রকাশ করলে, বিদেশি রাষ্ট্রের কোনো বাহিনীতে যোগদান করে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করলে বা অন্য কোনোভাবে ওই বাহিনীকে সহায়তা করলে তিনি বাংলাদেশের নাগরিক থাকতে বা হতে পারবেন না।
আইনে আরো বলা হয়েছে, কেউ বিদেশি কোনো সামরিক বা আধা-সামরিক বাহিনী বা অন্য কোনো বিশেষ বাহিনীতে যোগদানপূর্বক বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করলে বা বাংলাদেশের অস্তিত্ব অস্বীকার ও দেশবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকলে তাদের সন্তানরাও বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাবেন না।
খসড়ায় বলা হয়েছে, আইনে মিথ্যা তথ্য দিয়ে নাগরিক হলে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। কেউ মিথ্যা তথ্য দিয়ে নাগরিক হলে তার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকার অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
আইনে কোনো এমপি, মন্ত্রী, বিচারকসহ সাংবিধানিক পদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তিদের দ্বৈত নাগরিক হওয়ার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এছাড়া প্রজাতন্ত্রে বিভিন্ন কর্মে বা পদে নিয়োজিত ব্যক্তিরাও দ্বৈত নাগরিক হতে পারবেন না।
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোজাম্মেল হক খান বলেন, বাস্তব প্রেক্ষাপট বিবেচনা করেই নতুন আইন করা হচ্ছে। আইনে কিছু নতুন বিষয় যুক্ত হয়েছে। আরো কিছু বিষয় পরিষ্কার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, নতুন বিষয়ের মধ্যে বাংলাদেশ নিয়ে বিশেষ অবদানে বিদেশি নাগরিকদের সম্মানসূচক নাগরিকত্ব দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। আগে বিশেষ নাগরিকত্ব দেওয়া হতো শুধু গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য। এখন কয়েকটি ক্যাটাগরিতে অবদানের জন্য সম্মানসূচক নাগরিকত্ব দেওয়া হবে বিদেশি নাগরিকদের। এছাড়া তাদের রাজনীতি করার বিষয়টিও স্পষ্ট করা হয়েছে আইনে।
যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি ও তার সন্তানদের নাগরিকত্ব বাতিলের বিষয়ে মোজাম্মেল হক খান বলেন, আইনে নাগরিক না থাকার বা না হওয়ার কিছু বিধান রয়েছে। যদি কেউ এর মধ্যে পড়েন, তাহলে তার নাগরিকত্ব বাতিল হবে।
জানা গেছে, আইনটি ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে কার্যকর হওয়ার আগ পর্যন্ত যারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন বা কোনো বিদেশি বাহিনীকে বাংলাদেশবিরোধী কোনো ষড়যন্ত্রের সহায়তা করেছেন, তাদের নাগরিকত্ব বাতিল হবে। এমনকি তাদের সন্তানরাও নাগরিক হতে পারবেন না। এটি আইন পাস হলে বিধি দ্বারাই স্পষ্ট করা হবে।
বাংলাদেশে নাগরিকত্ব প্রদান, নাগরিকত্ব বাতিলসহ প্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ন্ত্রণের জন্য ‘দ্য বাংলাদেশ সিটিজেনশিপ (টেম্পোরারি প্রভিশনস) অর্ডার, ১৯৭২’ বলবৎ রয়েছে। এ-সংক্রান্ত মূল আইন হচ্ছে ‘দ্য সিটিজেনশিপ অ্যাক্ট, ১৯৫১’।
বহিরাগমন, নাগরিকত্ব অর্জন, সংরক্ষণ, পরিত্যাগ, অবসান ইত্যাদি বিষয়ের সমাধান দেওয়া এ দুটি আইনে সম্ভব হচ্ছে না। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দুটি আইন একীভূত করে নতুন আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, একাত্তরে দেশে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচারকাজ চলছে। এরই মধ্যে এ অপরাধে ২২টি মামলার রায় হয়েছে। এতে দণ্ডিত হয়েছেন ২৪ জন। আরো ১০টি আপিল শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।
বিচারকাজ চালানোর জন্য গঠিত ট্রাইব্যুনালে চারটি মামলার বিচার চলছে। এছাড়া ২৩টি মামলায় ৬৮ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।