প্রথম দফার লড়াইয়ে হিলারির জয়
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের প্রথম দফা প্রতিযোগিতা শেষ হলো। আইওয়া অঙ্গরাজ্যে ডেমোক্র্যাট দলের ককাসে বিজয়ী হয়েছেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ফার্স্ট লেডি হিলারি ক্লিনটন। তার কাছে অল্পের জন্য হেরে গেছেন সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স।
অন্যদিকে রিপাবলিকান পার্টির মনোনয়ন দৌড়ে ফ্লোরিডার সিনেটর টেড ক্রুজের কাছে হেরেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
সত্তরের দশক থেকে চলে আসা রেওয়াজ অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী বেছে নেয়ার দলীয় প্রক্রিয়াটি আইওয়াতে শুরু হয়।
দুদলের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা নিজেদের প্রার্থী বেছে নিতে সোমবার ভোট দেন। এদিন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয় হিলারি ক্লিনটন ও বার্নি স্যান্ডার্সের মধ্যে। ২ জনই সাধারণ ভোটের ৪৯ শতাংশ ঝুলিতে পুরতে সমর্থ হন।
পরে টসের মাধ্যমে বিজয়ী নির্ধারণ করা হয়। সব মিলিয়ে মোট ৪৪টি ককাস ভোটের মধ্যে ২২টি পেয়ে জয়ী হয়েছেন হিলারি ক্লিনটন। এর বিপরীতে বার্নি স্যান্ডার্স পেয়েছেন ২১ ভোট।
রিপাবলিকান প্রার্থিতার দৌড়ে বিজয়ী হয়েছেন টেড ক্রুজ। আইওয়ায় তিনি ২৮ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। অন্য ২ রিপাবলিকান মনোনয়ন প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও মার্কো রুবিও পেয়েছেন যথাক্রমে ২৪ ও ২৩ শতাংশ ভোট।
ডেমোক্র্যাট প্রার্থী নির্বাচনে হিলারি ও স্যান্ডার্সের অবস্থান এতো কাছাকাছি যে, স্যান্ডার্স একে একটি ‘ভার্চুয়াল টাই’ হিসেবে ঘোষণা করেছেন। আর বিজয়ের পর প্রতিক্রিয়ায় হিলারি তার সমর্থকদের নিজের স্বস্তির কথা জানিয়েছেন।
অন্যদিকে রিপাবলিকান প্রার্থী নির্বাচনে ক্রুজের জয় নিয়ে কোনো অস্পষ্টতা নেই। টেঙাসের এ সিনেটরের জয়কে দেখা হচ্ছে রক্ষণশীল ও ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে বারবার যোগাযোগের পুরস্কার হিসেবে।
ফল ঘোষণার পর এক প্রতিক্রিয়ায় ক্রুজ বলেছেন, আজ সাহসী রক্ষণশীলদের বিজয়ের রাত। তিনি এ সময় লবিস্ট ও প্রচার মাধ্যমের বিপরীতে দাঁড়িয়ে এ বিজয়কে সব রিপাবলিকানের জয় হিসেবে ঘোষণা করেন।
আইওয়ার প্রাইমারি নির্বাচনের পর স্বভাববিরোধী বিনয় ঝরেছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কণ্ঠে।
বিজয়ী টেড ক্রুজকে তিনি অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, নিজেকে ‘সম্মানিত’ বোধ করছি।
ক্রুজ বলেন, আইওয়ার বার্তাটি স্পষ্ট। আর তা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট বা রিপাবলিকানদের প্রার্থী কে হবেন, তা প্রচার মাধ্যম নির্ধারণ করতে পারে না। এমনকি তা ওয়াশিংটনের প্রতিষ্ঠানগুলোও নির্ধারণ করবে না।
সর্বশেষ ডেমোক্র্যাট প্রশাসনে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন সাবেক ফার্স্ট লেডি হিলারি ক্লিনটন। এ ছাড়া সিনেটর হিসেবে নিউইয়র্ক স্টেটের প্রতিনিধিত্ব করেছেন হিলারি।
প্রার্থিতার দৌড়ে থাকা অন্য যে কারো থেকে হিলারি এগিয়ে আছেন। তার প্রচারণায় মুখ্য ভূমিকা পালন করছেন তিনজন। এরা হলেন- পররাষ্ট্রনীতি বিশেষজ্ঞ মায়া হ্যারিস এবং স্টেট ডিপার্টমেন্টে তার অধীনে দায়িত্ব পালনকারী অ্যান ও’ল্যারি ও জ্যাক সুলিভান। প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে তার পক্ষে কাজ করছেন প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও ফেডারেল রিজার্ভের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডাম ব্লাইন্ডার। হিলারির প্রচারণা দলের প্রধান হিসেবে আছেন জন পডেস্টা।
তিনি বিল ক্লিনটন সরকারের চিফ অব স্টাফ ও বারাক ওবামার উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন।
আইওয়ার বৈতরণী পেরোনো হিলারি ক্লিনটনের জন্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। ২০০৮ সালে আইওয়াতে তদানীন্তন সিনেটর বারাক ওবামার কাছে হেরে হোয়াইট হাউজের দৌড়ে পিছিয়ে পড়েছিলেন তিনি। প্রাইমারি নির্বাচনের পরবর্তী ভোটগ্রহণ হবে নিউ হ্যাম্পশায়ারে।
বিশ্লেষকদের মতে, আগামী মঙ্গলবারের ওই নির্বাচনে আইওয়ার ফলাফল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সে আশাই ব্যক্ত করেছেন হিলারি ক্লিনটনের প্রতিদ্বন্দ্বী বার্নি স্যান্ডার্স।
ভারমন্টের এ প্রগতিশীল সিনেটর বলেন, অনেকে বলেছে, আপনাকে পছন্দ করি। কিন্তু আপনি তো জিতবেন না। তাই ভোট দিইনি। নিউ হ্যাম্পশায়ার যাওয়ার পথে তিনি আরো বলেন, আইওয়ার মানুষ প্রমাণ করেছে, আমরাও জিততে পারি।
নিউ হ্যাম্পশায়ারের ভোটাররা তুলনামূলক উদার মনোভাবাপন্ন। সেখানে হিলারির এগিয়ে যাওয়ার জোর সম্ভাবনা।
দক্ষিণের রক্ষণশীল রাজ্যগুলোর ভোটারদেরও স্পষ্ট সংকেত দেবে আইওয়া। এর ফলে আসছে সপ্তাহগুলোয় বিভিন্ন রাজ্যের ভোটে রিপাবলিকানদের মধ্যে সিনেটর মার্কো রুবিওর গুরুত্বও বাড়বে। কারণ আইওয়া নির্বাচনে তৃতীয় অবস্থানে থাকা মার্কো ট্রাম্প ও ক্রুজের চেয়ে খুব বেশি পিছিয়ে নেই।
আগামী কয়েক মাসে যুক্তরাষ্ট্রের সব অঙ্গরাজ্যে পর্যায়ক্রমে চলবে এ প্রাইমারি নির্বাচন। এখানে বিজয়ী দুদলের প্রার্থীরাই নভেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে লড়বেন। সে সময় নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হোয়াইট হাউজের দায়িত্ব নেবেন আগামী জানুয়ারিতে।