ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ বিনা নোটিশে বন্ধ
বেসরকারি উড়োজাহাজ সংস্থা ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ বিনা নোটিশে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এতে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ রুটের হাজার হাজার যাত্রী বিপাকে পড়েছেন।
প্রতিদিন ঢাকা চট্টগ্রাম কক্সবাজার ও সিলেটসহ বিভিন্ন বিমানবন্দরের এ সংস্থার যাত্রীরা বার বার এসে ফিরে যাচ্ছেন। এ এয়ারলাইন্স সংস্থার সব অফিসও বন্ধ। কেন তারা ফ্লাইট বন্ধ করে দিয়েছে তার কোনো তথ্য ওয়েবসাইটেও দেয়া হয়নি। উত্তরাস্থ প্রধান কর্যালয়ে কেউ কোনো টেলিফোনও ধরেন না। খবর মানবকন্ঠের।
সংস্থার চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন তাসবিরুল আহমেদ চৌধুরীর মোবাইল ফোনটিও বন্ধ। ফলে এ উড়োজাহাজ সংস্থাটি নিয়ে সবাই অন্ধকারে রয়েছেন। দুশ্চিন্তায় রয়েছে সংস্থার শেয়ার ক্রয়কারী ব্যক্তি ও ঋণ প্রদানকারী দুটি ব্যাংকও। এর আগে আরো কয়েকটি বেসরকারি উড়োজাহাজ সংস্থা বন্ধ হয়ে গেলে ঋণ প্রদানকারী ব্যাংক ও শেয়ার ক্রয়কারীরা তাদের আমানত এখনো ফিরে পাননি।
নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ ২৬ জানুয়ারি সর্বশেষ এ উড়োজাহাজ সংস্থাকে চিঠি দিয়ে তাদের ফ্লাইট চালু করতে অনুরোধ করেছে। সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের চিঠিতে যাত্রীদের দুর্ভোগের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি সংস্থাটির কাছে উড়োজাহাজ পরিচালন পাওনা শতাধিক কোটি টাকার বকেয়াও অবিলম্বে পরিশোধ করতে বলা হয়েছে। কিন্তু তারা সিভিল অ্যাভিয়েশনের চিঠির কোনো জবাব দেয়নি।
সূত্র আরো জানায়, সংস্থাটির কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও রয়েছেন দুঃশ্চিন্তায়। কয়েক মাস ধরে তাদেরও বেতন-ভাতা বাকি। এ বেতন-ভাতা তারা পাবেন কিনা তা নিয়েও তারা দুশ্চিন্তা রয়েছেন।
চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে ইউনাইটেডের অফিসটি বন্ধ। তার পরও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গোপনে প্রতিদিনই একবার এখানে আসছেন। তারা এ বিমান সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সন্ধান করছেন। এক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ছয় মাস হলো ইউনাইটেড এয়ার তাদের বেতন দিচ্ছে না।
চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন বিভাগের উপপুলিশ কর্মকর্তা জানান, গত ১৫ দিন ধরে ইউনাইটেড এয়ারের ফ্লাইট বন্ধ। তারা কোনো তথ্য না জানিয়েই ফ্লাইট বন্ধ করে দিয়েছে। প্রতিদিন শত শত যাত্রী এসে তাদের বিমানবন্দরের অফিসে কাউকে পাচ্ছেন না। যাত্রীরা এতে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। সিভিল অ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষেও মোটা অঙ্কের টাকা বাকি পড়েছে।
ইউনাইটেড এয়ার ঢাকা-চট্টগ্রামে প্রতিদিন দুটি ফ্লাইট পরিচালনা করত। এছাড়া তারা কক্সবাজার সিলেট, যশোরেও দিনের একবার করে চলাচল করত। আন্তর্জাতিক রুটে এ বিমানটি চলাচল করত মালয়েশিয়া ও কলকাতা।
পুলিশের গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, ইউনাইটেড এয়ারের যাত্রীরা বিমানবন্দরগুলোতে সংস্থাটির কোনো কর্মকর্তা ও কর্মচারী না পেয়ে রূঢ় হয়ে উঠছে। তারা যে কোনো সময় বিশৃক্সখল পরিস্থিতি ঘটাতে পারে।
উল্লেখ্য, ইউনাইট এয়ারওয়েজ ২০০৫ সালে তাদের যাত্রা শুরু করে। কার্গো বিমান দিয়ে যাত্রা শুরু করলেও তারা ২০০৭ সালে যাত্রী পরিবহন শুরু করে। দুটি বিমান কিনে ও কয়েকটি ভাড়ায় নিয়ে বিমান সংস্থাটি পরিচালিত হতো। দেশের শেয়ারবাজার থেকে ও দুটি ব্যাংক থেকে কয়েকশ’ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণ করে তারা সংস্থাটি গড়ে তোলে। এখন হঠাৎ করে বিমান সংস্থাটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সবাই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। ক্যাপ্টেন (অব) তাসবিরুল আহমেদ চৌধুরী সংস্থাটির চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর। তার মোবাইল ফোনে কয়েকবার ফোন দেয়া হলেও সুইচ অফ পাওয়া গেছে।
তবে মামুন নামের একজন গ্রাউন্ড সার্ভিসেস কর্মচারী এ প্রতিবেদককে জানান, মালিক পক্ষ তাদের জানিয়েছেন প্রকৌশলগত কারণে তাদের সব ফ্লাইট বন্ধ রয়েছে। শিগগিরই আবার চালু হবে। প্রকৌশলগত হলে একটি অথবা দুটি ফ্লাইট হবে, সব বন্ধ কেন? এমন প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পরেননি মামুন।