যুক্তরাজ্যে অবৈধদের বাসা ভাড়া নয়
অবৈধ অভিবাসীদের যুক্তরাজ্যে বসবাস ঠেকাতে কঠোর নিয়ম চালু করেছে দেশটির সরকার। ‘রাইট টু রেন্ট’ নামের এই নিয়মে বাসা ভাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে ভাড়াটিয়াদের পাসপোর্ট ও যুক্তরাজ্যে থাকার বৈধ কাগজপত্র আছে কিনা তা যাচাই বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এই নিয়ম মানতে ব্যর্থ হলে বাড়ির মালিক বা তত্ত্বাবধানকারী এজেন্টকে প্রতিটি অবৈধ অভিবাসীর জন্য তিনি হাজার পাউন্ড করে জরিমানা গুনতে হবে।
সোমবার থেকে এ নিয়ম কার্যকর হয়েছে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনগুলো সরকারের এমন উদ্যোগের সমালোচনা করে বলেছে, এই নিয়মের কারণে বৈধভাবে বিভিন্ন মেয়াদের ভিসা নিয়ে যারা যুক্তরাজ্যে আছেন তারা বৈষম্যের শিকার হবেন। কেননা, আইনি ঝামেলা এড়াতে বাড়ির মালিক বা আবাসন এজেন্টরা স্থায়ী বাসিন্দা কিংবা শ্বেতাঙ্গ মানুষদের কাছেই বাসাভাড়া দিতে চাইবে।
বাড়ির মালিকদের সংগঠন ‘রেসিডেনসিয়াল ল্যান্ড লর্ড অ্যাসোসিয়েশন’ও এই নিয়মের সমালোচনা করে বলে, সরকার সীমান্ত রক্ষার দায়িত্ব বাড়ির মালিকদের ওপর চাপিয়েছে। অভিবাসন কর্মকর্তারা যেখানে ভুয়া পাসপোর্ট কিংবা ভিসা শনাক্ত করতে হিমশিম খায়, সেখানে বাড়ির মালিকেরা কীভাবে বৈধ-অবৈধ নির্ধারণ করবে। সংগঠনটির বলছে, এই নিয়ম অবৈধ অভিবাসী নিয়ন্ত্রণে কোনো কাজে আসবে না। উল্টো দুষ্কৃতকারী বাড়ির মালিকেরা অবৈধ অভিবাসীদের বাসা ভাড়া দিয়ে বাড়তি মুনাফা বানাবে।
যেসব ব্রিটিশ নাগরিকের পাসপোর্ট নেই তারাও এই আইনের কারণে হয়রানির শিকার হতে পারেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, প্রায় ৯৫ লাখ ব্রিটিশ নাগরিকের হাতে পাসপোর্ট নেই। এসব মানুষ কখনো পাসপোর্টের প্রয়োজন বোধ করেনি। এদের বেশির ভাগই আবার ভাড়া বাসায় বসবাস করে।
সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে, অবৈধ অভিবাসী নিয়ন্ত্রণ ও বিতাড়নের কৌশল হিসেবে বাসা ভাড়ার ক্ষেত্রে নতুন এই নিয়ম আনা হয়েছে। সরকার বলছে, আর্থিক লেনদেন, কর্মসংস্থান, চিকিৎসা এবং বসবাস প্রতিটি ক্ষেত্রে বাধা প্রয়োগ করে যুক্তরাজ্যে অবৈধভাবে বসবাসকারীদের জীবন কঠিন করে তোলা হবে। তারা নিজ থেকেই যুক্তরাজ্য ত্যাগ করবে।
প্রসঙ্গত, অবৈধভাবে বসবাসকারীদের ব্যাংক হিসাব খোলা, গাড়ি চালানোর লাইসেন্স, কর্মসংস্থান, কিংবা চিকিৎসা সেবা নেওয়ার সুযোগগুলো আগেই বন্ধ করে দিয়েছে ব্রিটিশ সরকার। ২০১৪ সালে অভিবাসন আইনের অধীনে রাইট টু রেন্টের বিধানটি যুক্ত করে সরকার। ওই বছরের ১ ডিসেম্বর ইংল্যান্ডের কয়েকটি কাউন্সিলে পরীক্ষামূলকভাবে নিয়মটি চালু করা হয়। গত অক্টোবর মাসে সরকার এই প্রকল্পের একটি মূল্যায়ন প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাতে বলা হয়, এই নিয়মের বিষয়ে বৈষম্য ও বর্ণবাদের অভিযোগ উঠলেও বাস্তবে তা বড় আকারে বলে প্রতীয়মান হয়নি।
অভিবাসনবিষয়ক মন্ত্রী জেমস ব্রোকেনশায়ার বলেন, অভিবাসন নীতির আমূল পরিবর্তনের একটি অংশ হল রাইট টু রেন্ট নিয়ম চালু। তাঁর দাবি এই ব্যবস্থা অভিবাসন ব্যবস্থাকে আরও ন্যায্য এবং কার্যকর করবে। এর ফলে যুক্তরাজ্যে বৈধভাবে বসবাসকারীদের বাসা ভাড়া নিতে কোনো সমস্যা হবে না বলে তিনি মনে করেন।
এদিকে সোমবার প্রকাশিত হোম অফিসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, অবৈধভাবে বসবাস করছেন এমন ব্যক্তিরা ধরা পড়ার পর আশ্রয়ের (অ্যাসাইলাম) আবেদন করে দেন। ফলে অনেক ক্ষেত্রে তাদের ব্রিটেন থেকে বিতাড়ন সম্ভব হয় না। প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ১০ বছরে ৮৩ হাজার ব্যক্তি আটক হওয়ার পর আশ্রয় আবেদন করেন। এদের মধ্যে ২০ হাজার আবেদনকারীকে আশ্রয় প্রদান করা হয়। আর ২৩ হাজার ব্যক্তিকে আবেদন প্রত্যাখ্যান করে যুক্তরাজ্য থেকে বিতাড়ন করা হয়েছে।
হোম অফিসের হিসাব অনুযায়ী, শিক্ষার্থী ভিসায় যুক্তরাজ্যে এসে ১৫ হাজারের বেশি ব্যক্তি শেষ পর্যন্ত আশ্রয় আবেদন করেছেন। এদের মধ্যে শীর্ষ থাকা তিনটি দেশের মধ্যে পাকিস্তানি চার হাজার ৪৮৬ জন, শ্রীলঙ্কান তিন হাজার ৯৯৭ জন এবং ইরানের শিক্ষার্থী রয়েছেন এক হাজার ২৬৯ জন। তবে ঠিক কী পরিমাণ লোক যুক্তরাজ্যে অবৈধভাবে বসবাস করছে তার কোনো সঠিক হিসাব নেই। -প্রথম আলো