অবৈধ বাংলাদেশীদের ফেরত পাঠাবে ব্রিটেন
অবৈধ বাংলাদেশীদের ফেরত পাঠাতে চায় ব্রিটেন। এর প্রক্রিয়া নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা করেছেন ব্রিটেনের অভিবাসন বিষয়ক মন্ত্রী জেমস ব্রোকেনশায়ার। ব্রিটিশ মন্ত্রী জাল কাগজপত্র দিয়ে মানবপাচার ও অবৈধ অভিবাসন ঠেকাতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্যক্ষমতা সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন।
বৃটেনে প্রায় পাঁচ লাখ বাংলাদেশী থাকেন, যাদের অধিকাংশ গেছেন সিলেট অঞ্চল থেকে। অনেক বাংলাদেশীর পাসপোর্ট ও ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। তাদেরকে অবৈধ হিসাবে চিহ্নিত করে ফেরত পাঠানোর উপায় খুঁজছে ব্রিটেন। প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামরন সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই অভিবাসনের বিরুদ্ধে কঠোর সব পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
ঢাকায় পূর্ণাঙ্গ হাইকমিশন থাকার পরও ব্রিটেন ইতোপূর্বে ভিসা প্রক্রিয়াকরণ ব্যবস্থা দিল্লিতে সরিয়ে নিয়েছে। এর ফলে একদিকে ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে সময় লাগছে বেশি। অন্যদিকে বাংলাদেশীদের জন্য ব্রিটিশ ভিসা পাওয়াও কঠিন হয়ে গেছে।
তবে হাইকমিশন কর্তৃপক্ষ বলছে, আঞ্চলিক কেন্দ্র থেকে ভিসা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করলে সার্বিক ব্যবস্থার ওপর কার্যকর নিয়ন্ত্রণ রাখা যায়। এতে জালিয়াতির আশঙ্কাও কমে আসে। ব্রিটিশ মন্ত্রী রবিবার দুই দিনের সফরে ঢাকা আসেন।
তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেন। এসব বৈঠকে তিনি অবৈধ অভিবাসন, সংঘবদ্ধ অপরাধ ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা এবং বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে বৈঠকে জেমস ব্রোকেনশায়ার ব্রিটেনে অবস্থানরত অবৈধ বাংলাদেশীদের ফিরিয়ে আনার বিষয়টি উত্থাপন করেছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, বিশ্বের কোথাও বাংলাদেশীদের অবস্থান অবৈধ হয়ে গেলে তাদের ফিরিয়ে আনা সরকারের দীর্ঘদিনের নীতি। তবে ফিরিয়ে আনার আগে একটি প্রতিষ্ঠিত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সরকার তাদের জাতীয়তা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়।
বৈঠকে দুই মন্ত্রী দ্বিপক্ষীয় ও আন্তর্জাতিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ইস্যুতে আলোচনার জন্য একটি রূপরেখা চুক্তির সম্ভাবনা নিয়ে আলাপ করেন।
এদিকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সরেজমিন পরিদর্শনের ব্রিটিশ মন্ত্রী সোমবার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পরিদর্শন করেছেন। এসময় তিনি অবৈধ অভিবাসন ঠেকানোর জন্য জাল কাগজপত্র শনাক্ত করতে গত বছর ব্রিটেনের দেয়া যন্ত্রপাতির কার্যকারিতা নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করেন। এই যন্ত্রপাতিগুলো জাল পাসপোর্টসহ অন্যান্য দলিলাদি চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে।
ব্রিটেন সামপ্রতিক সময়ে হয়রত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। ঢাকার সাথে লন্ডনের সরাসরি ফ্লাইট থাকায় এ ব্যাপারে তারা উদ্বিগ্ন। বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সরেজমিন পরিদর্শন করে ব্রিটেনের প্রতিনিধি দল ইতোমধ্যে তাদের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে নিরাপত্তা ত্রুটিগুলো মোকাবেলায় সুপারিশসহ দুটি প্রতিবেদন দিয়েছে। একইসাথে সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের একটি সময়সীমাও বেঁধে দিয়েছে। সমপ্রতি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেমন বিমান বন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে বিদেশীদের উদ্বেগ নিরসনে ব্রিটেনসহ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূতের সাথে বৈঠক করেছেন।
সফর শেষে দেয়া এক বিবৃতিতে ব্রোকেনশায়ার বলেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই বৃটেনের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারে পরিণত হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে শক্তিশালী বাণিজ্যিক সংযোগ, বিশাল আকারের প্রবাসী বাংলাদেশী ও ঐতিহাসিক বন্ধন রয়েছে। এখন অবৈধ অভিবাসন ও মানবপাচারের সাথে সংশ্লিষ্ট সংঘবদ্ধ অপরাধীদের মোকাবেলায় দুই দেশ একসাথে কাজ করছে।
তিনি বলেন, জাল কাগজপত্র শনাক্ত করতে ব্রিটেনের দেয়া যন্ত্রপাতি হয়রত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা কার্যকরভাবে ব্যবহার করছেন দেখে আমি আনন্দিত। এর ফলে মানবপাচার ও অবৈধ অভিবাসন কমে আসবে বলে আমি আশাবাদী।