অনিবার্য হয়ে উঠছে তৃতীয় মহাযুদ্ধ ?

USAমাসুম খলিলী: সিরিয়ায় দখলদারিত্বকে সামনে রেখে নতুন করে ভয়ঙ্কর এক যুদ্ধের রণডঙ্কা বেজে উঠতে শুরু করেছে। ভ্লাদিমির পুতিন রাশিয়ার সাউদার্ন ফেডারেল ডিস্ট্রিক্টে একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ পরিচালনার প্রস্তুতি শুরু করেছেন। ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী প্রতিরক্ষাব্যবস্থা পরীক্ষা এবং অন্যান্য যুদ্ধ ইউনিটের প্রস্তুতি শুরু করেছেন তিনি। এ নিয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর সাথে এক দীর্ঘ বৈঠকও করেছেন পুতিন। প্রস্তুতির ধরন থেকে অনুমান করা যায়, এটি কেবল সিরিয়ায় প্রতিপক্ষ তুরস্ক-সৌদি-ন্যাটোকে রাজনৈতিক বার্তা দেয়ার উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে না। অধিকন্তু একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে জড়ানোর অভিপ্রায়ে এসব তৎপরতা চালানো হচ্ছে। ক্রিমিয়া দখল ও ইউক্রেনে আধিপত্য বিস্তারের সময় ক্রেমলিনের যে যুদ্ধ প্রস্তুতি দেখা দিয়েছিল তারই পুনরাবৃত্তি দেখা যাচ্ছে এখন।
রাশিয়ার এই যুদ্ধ প্রস্তুতির বিপরীতে তুরস্ক ও জর্ডানেও লক্ষ করা যাচ্ছে একধরনের রণপ্রস্তুতি। জর্ডানে এক মহড়ায় গ্রেট ব্রিটেন ১৬ শ’ ব্রিটিশ সৈন্য ও ৩ শ’ সাঁজোয়া যানসহ অংশ নিচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, সম্ভাব্য রাশিয়ান হামলা থেকে প্রতিরক্ষার প্রস্তুতির অংশ এটি। অন্য দিকে সৌদি আরবের উত্তরাঞ্চলে হাফার আল বাতিলে বিপুল সামরিক সমাবেশ করেছে। আলেপ্পোর বিপরীতে তুরস্কের অভ্যন্তরেও বিপুল যুদ্ধ প্রস্তুতির তথ্য প্রকাশ করেছে রুশ গোয়েন্দারা। এসব রণপ্রস্তুতির পাশাপাশি যুদ্ধ হুঙ্কারও দুই পক্ষই দিচ্ছে। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ পুরো সিরিয়ায় তার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছেন। পাল্টা ঘোষণায় সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, রাজনৈতিক সমঝোতায় না এলে সামরিক অভিযানেই বাশার আল আসাদের পতন ঘটবে।
রাশিয়া সামরিক হস্তক্ষেপ করার পরই সিরিয়ায় একটি ব্যাপকভিত্তিক যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়। রাশিয়া বিমান হামলার একটি পর্যায়ে স্থল সেনা পাঠাতে পারে বলেও উল্লেখ করা হয়। যদিও রাশিয়া এখনো পর্যন্ত তার হস্তক্ষেপকে বিমান আক্রমণের মধ্যেই সীমিত রেখেছে। অবশ্য স্থলক্ষেত্রে বাশারের বাহিনীর সাথে লড়াই করছে শিয়া হিজবুল্লাহ মিলিশিয়া ও ইরানের বিশেষ বাহিনীর সদস্যরা। রুশ বিমানের ছত্রছায়ায় চালানো এই যৌথবাহিনীর অভিযানের গতি এবং বাশারের বিরুদ্ধে লড়াইরত সব পক্ষের ওপর হামলার মাত্রা বেড়ে যায় তুরস্কের আকাশসীমা সঙ্ঘনের অভিযোগে তুর্কি গোলায় দেশটির জঙ্গিবিমান ভূপাতিত করার ঘটনার পর। রাশিয়ার সমর বিশেষজ্ঞরা তখনকার সৃষ্ট উত্তেজনাকর সময়ে দু’দেশের মধ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধ বেধে যেতে পারে বলে উল্লেখ করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত তখনকার উত্তেজনা প্রত্যক্ষ যুদ্ধ পর্যন্ত না গড়ালেও রণ-আশঙ্কা কোনো সময়ের জন্য নিঃশেষ হয়ে যায়নি।
রাশিয়ার সামরিক ছত্রছায়ায় বিরোধী পক্ষের অধিকৃত শহর দখলের জন্য নতুন করে অভিযান চালানো এবং ভিয়েনায় সমঝোতা আলোচনা শুরুতেই ভেঙে পড়ার পর উত্তেজনা আবার বেড়েছে সিরিযায়। সৌদি আরব আইএস দমনের জন্য সিরিয়ায় মার্কিন কোয়ালিশনের অংশ হিসেবে সেনাবাহিনী পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে। মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, কোয়ালিশনের সাথে একাত্ম হয়ে সিরিয়ায় যুদ্ধ করবে ন্যাটো। পাল্টা হুমকিতে রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সিরিয়ায় বাশার সরকারের অনুমোদন ছাড়া কোনো অভিযান মেনে নেয়া হবে না।
রাশিয়া ও তার মিত্রদের সাথে সিরিয়ায় তুরস্ক-সৌদি আরব-ন্যাটোর যুদ্ধ শুরু হলে তা শুধু সেই অঞ্চলেই সীমিত না থেকে যে এক প্রলয়ঙ্করী রূপ নেবে এই আশঙ্কা একেবারেই অমূলক নয়। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত তিন বাল্টিক প্রজাতন্ত্র দখল করতে রাশিয়ার কত সময় লাগবে সেই হিসাব-নিকাশ করা হচ্ছে এখন। ইউক্রেন ফ্রন্টেও যুদ্ধ উত্তেজনা থামেনি। প্রশ্ন্ উঠতে পারে রাশিয়া কেন এতটা যুদ্ধংদেহি হয়ে উঠছে? দেশটির সামরিক সাফল্যের চূড়ান্ত সম্ভাবনাই বা কতটুকু।
অতি সহজেই ক্রিমিয়া দখলের পর ছায়াযুদ্ধ দিয়ে ইউক্রেনের একটি অংশ করতলগত করার পর রাশিয়ার সামরিক উচ্চাভিলাষ বেশ তুঙ্গে উঠে গেছে। সোভিয়েত ইউনিয়নের বাইরে ক্রেমলিনের তেমন কোনো সাময়িক সাফল্য না থাকলেও যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর পড়ন্ত শক্তির সময়ে নিজ বলয়ের বাইরে একটি সামরিক সাফল্য পুতিনের জন্য প্রয়োজন। ক্রিমিয়া দখল ও ইউক্রেন আক্রমণের পর অবরোধ ও তেলের দাম পড়ে যাওয়ার প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়ার ভেতরে জীবনযাত্রার মানে বিপর্যয় ঘটে। এরপরও পুতিনের গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা তুঙ্গে উঠেছে। এখন পুতিন রাশিয়ার গণমাধ্যমে কেবল একটি বিষয়েরই প্রচার করছেন, সেটি হলো ‘দেশপ্রেম’। যার নিগূঢ় মানে দাঁড়ায় যুদ্ধ করে রুশ আধিপত্য প্রতিষ্ঠা। এ লক্ষ্য অর্জনে রাশিয়ার প্রভাব ছড়িয়ে দিতে সব ধরনের ত্যাগ সিকার ও সঙ্ঘাতে জড়ানোর নাম দেয়া হয়েছে দেশপ্রেম। এখন এক দিকে রাশিয়ানদের এই ‘দেশপ্রেম’-এ উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা হচ্ছে অন্য দিকে মস্কো পাশ্চাত্যের সাথে অর্থনৈতিক যুদ্ধে জয়ী হতে বিকল্প বৈশ্বিক অর্থব্যবস্থা তৈরির প্রচেষ্টা চালাচ্ছে চীন-ইরান-ক্যারিবিয়ান বলয়ের সহযোগিতায়।
পরমাণু শক্তিধর দুই পক্ষের মধ্যে আরেকটি বিশ্বযুদ্ধ কতটা প্রলয়ঙ্করী ও ভয়াবহ জীবনক্ষয় ডেকে আনবে তা অনুমানের বাইরে থাকার কথা নয় কোনো পক্ষেরই। এরপরও কেন এই রণহুঙ্কার? এক সময় আরব বসন্তের জের ধরে শক্তি প্রয়োগ করে লিবিয়ায় গাদ্দাফির পতন ঘটায় পশ্চিমারা। এরপর সিরিয়াকে লক্ষ্য করা হলে মধ্যপ্রাচ্যে মস্কোর সামরিক প্রভাব পড়ে যায় হুমকির মধ্যে। আর ইরানের মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব বিস্তারের যে ছক, সেটিও পাল্টে যাওয়ার উপক্রম হয়। শেষ পর্যন্ত দুই বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক শক্তি সিরিয়ার ব্যাপারে বেপরোয়া হয়ে ওঠে।
আমেরিকা ও সৌদি জোট নানা স্বার্থের হিসাব-নিকাশ করে একসময় সিরিয়ায় তাদের সামরিক ভূমিকা গৌণ করে ফেলে। এতে রাশিয়ার প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্টতায় বাশার বাহিনী শিয়া হিজবুল্লাহ ও ইরানি বিশেষ বাহিনীকে নিয়ে যখন অভিযান শুরু করে তখন প্রতিপক্ষের প্রতিরোধব্যবস্থাকে সহায়তা দেয়ার মতো তাৎক্ষণিক কোনো আয়োজন অবশিষ্ট থাকেনি।
আর সিরিয়ায় রাশিয়া-ইরানের পূর্ণাঙ্গ বিজয়ের অর্থ যে কী সেটি আঙ্কারা-রিয়াদের সমর বিশারদদের অজানা থাকার বিষয় নয়। সিরিয়ায় কর্তৃত্ব স্থাপনের অর্থ দাঁড়াবে সুন্নি প্রতিরোধ শক্তির গুঁড়িয়ে যাওয়া। এরপর ইরাক-সিরিয়া হয়ে লেবানন পর্যন্ত পৌঁছবে রুশ-ইরান সামরিক কর্তৃত্ব ও উপস্থিতি। এতে ইয়েমেনে এখন হুথি-সালেহ বাহিনীর সাথে সৌদি কোয়ালিশনের সহায়তায় সরকারি বাহিনী যে অবস্থানে পৌঁছেছে তার উল্টোগতি শুরু হবে। বাহরাইনের সংখ্যাগুরু শিয়াদের নতুন করে সংঘটিত করে ক্ষমতা দখলের জন্য প্রস্তুত করা হবে। শাসকদের কর্তৃত্ব হুমকির মুখে পড়বে কুয়েত ও সংযুক্ত আরব আমিরাতেও। সৌদি আরবের ইরাক ও ইয়েমেন সীমান্তবর্তী শিয়া বসতি অঞ্চলগুলোতে বিদ্রোহ সৃষ্টি করা হবে। ফলে সৌদি আরব ও তার উপসাগরীয় মিত্ররা সিরিয়ার যুদ্ধ ছেড়ে নিষ্ক্রিয় থাকার অর্থ হবে এ যুদ্ধ একপর্যায়ে আরব দেশগুলোর প্রাণকেন্দ্র পর্যন্ত পৌঁছাবে। অন্য দিকে সিরিয়ান কুর্দি আর তুরস্কের কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের একসাথে ইন্ধন দেয়া শুরু করেছে রাশিয়া। এর ফলে অখণ্ডতা হুমকির মধ্যে পড়বে তুরস্কেরও। রাশিয়ার এ খেলার পাল্টা ঘুঁটিও রয়েছে তুরস্ক-সৌদি আরবের হাতে। তারা ককেসাস অঞ্চল দিয়ে চাপ সৃষ্টি করতে পারবে মস্কোর ওপর।
অন্য দিকে ন্যাটো মধ্যপ্রাচ্যে তার মিত্রদের রক্ষায় ব্যয় হওয়ার অর্থ হবে মার্কিন নেতৃত্বাধীন এই প্রতিরক্ষা জোটের প্রভাব বৈশ্বিক নিয়ন্ত্রণ থেকে বিদায় নেয়া। এতে রাশিয়া শুধু মধ্যপ্রাচ্যে নিজের কর্তৃত্ব বিস্তার করবে তাই নয়। একই সাথে সাবেক সোভিয়েতভুক্ত ইউরোশীয় স্বাধীন দেশগুলোকে নিজ আশ্রিত অথবা করতলগত করে ফেলবে। এই দৃশ্যপট ইউরোপ-আমেরিকার জন্য কোনোভাবেই মেনে নেয়ার মতো নয়। তবে এটাও বাস্তব সত্য যে, ইরাক ও আফগানিস্তানে দীর্ঘ যুদ্ধে জড়ানোর পর আমেরিকা নতুন করে প্রত্যক্ষ কোনো যুদ্ধে জড়িত হতে চাইছে না। একই দৃষ্টিভঙ্গি ব্রিটেনেরও। কিন্তু সমষ্টিগত যুদ্ধ থেকে এই দুই পরাশক্তি কোনোভাবেই নিবৃত হতে পারবে না মধ্যপ্রাচ্যে।
অবশ্য মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়ার প্রবলভাবে সম্পৃক্ত করার ক্ষেত্রে মাত্রা যা-ই হোক না কেন এর পেছনে আমেরিকার একধরনের সম্মতি থাকতে পারে বলেও অনুমান করা যায়। বিশেষত মধ্যপ্রাচ্যের মানচিত্র বিভাজনের পরিকল্পনা প্রকাশ এবং এ অঞ্চল থেকে মনোযোগ কমিয়ে এশিয়ার দিকে সরে আসার মার্কিন প্রচারণায় নতুন পরিস্থিতিতে তাদের কৌশলগত পরিকল্পনার সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে। তবে তার অর্থ এটি নয় যে, রাশিয়ার হাতে মার খেয়ে নিজেকে গুটিয়ে নেবে যুক্তরাষ্ট্র।
নতুন পরিস্থিতিতে সৌদি আরবের নেতৃত্বে নতুন যে সামরিক জোট গঠিত হয়েছে তার পেছনে ওয়াশিংটনের সমর্থন ও অনুমোদন রয়েছে। এর মধ্যে ২০টি দেশ সামরিকভাবে এ জোটে সম্পৃক্ত হওয়ার সম্মতি দিয়েছে। জর্ডান সৌদি আরব ও তুরস্কে যে সামরিক প্রস্তুতির খবর প্রকাশ হচ্ছে তাতে এই ইঙ্গিত স্পষ্ট যে, সিরিয়ায় পাল্টা একটি অভিযান আসন্ন। সেই অভিযান একক কোনো দেশ বা জোটের মাধ্যমে পরিচালিত হবে না। সৌদি আরব ও তুরস্ক এই অভিযানের নেতৃত্বে থাকলেও এর সাথে ন্যাটো ও নবগঠিত সুন্নি সামরিক জোটের অংশগ্রহণ থাকবে।
রাশিয়া-ইরান-আসাদের সিরিয়া অন্য কোনো মিত্রদেশকে এই যুদ্ধ বলয়ে আনতে পারেনি। চীন রাশিয়ার সাথে নানা অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা করছে। কিছু কিছু সামরিক লেনদেনও দুই দেশের মধ্যে চলছে। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে দেশটির যে ব্যাপকভিত্তিক স্বার্থ রয়েছে তাতে সিরিয়ার সঙ্ঘাতে প্রত্যক্ষভাবে বেইজিংয়ের জড়িত হওয়ার সম্ভাবনা কম। অন্য দিকে কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া সুন্নি মুসলিম দেশগুলোর যে সামরিক জোট হয়েছে তার সাথে ন্যাটোর সব শক্তির যৌথ ভূমিকা নেয়ার বিষয়টি জোরাল হচ্ছে। ব্রিটেন ইতোমধ্যে সক্রিয় ভূমিকা নিতে শুরু করেছে। জার্মানির ভূমিকাও এ শক্তির জন্য হবে ইতিবাচক। ফ্রান্স কতটুকু সক্রিয় হবে তা বুঝতে আরো কিছু সময় লাগবে।
নতুন পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যে কয়েকটি দৃশ্যপট দেখা যেতে পারে, প্রথমত, দুই পক্ষের মধ্যে যে উত্তেজনা চলছে তার ভয়াবহ পরিণতির কথা ভেবে তারা নিজেদের সংযত করে বর্তমান স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে পারে। আর এর মাধ্যমে একটি রাজনৈতিক সমাধানে যাওয়ার ব্যাপারে অধিকভাবে সক্রিয় হতে পারে উভয়পক্ষ। দ্বিতীয়ত, ন্যাটো ও আইএসবিরোধী কোয়ালিশনের সমর্থনে তুরস্ক-সৌদি আরব সিরিয়ায় সেনাবাহিনী পাঠিয়ে সেখানে একটি বিমান উড্ডয়নমুক্ত নিরাপদ অঞ্চল গঠন করতে পারে। রাশিয়া এটাকে মেনে নিলে তা বাস্তবায়ন হতে পারে সহজ। তা না হলে রাশিয়া পাল্টা সেনাবাহিনী পাঠাতে পারে সিরিয়ায়। এতে সিরিয়ায় দুই পক্ষের মধ্যে ভয়ানক যুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে, যা চলতে থাকলে একপর্যায়ে আঞ্চলিক এমনকি এটি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরিণত হতে পারে। তৃতীয়ত, বিবদমান দুই পক্ষের সামরিক উপস্থিতিতে সীমিত যুদ্ধ হতে পারে। যুদ্ধ বিস্তৃত হওয়ার আগে নিরাপত্তা পরিষদ বসে আলোচনার মাধ্যমে সঙ্কট নিরসনের প্রস্তাব তৈরি করবে যাতে সব পক্ষ সম্মত হতে পারে।
এই তিন বিকল্পের মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী দ্বিতীয় দৃশ্যপট দেখা দেয়ার আশঙ্কা অনেকের। রাশিয়ার একজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা নিকোলাই বরডিউজার বক্তব্যেও তার প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়। এই কর্মকর্তা বলেছেন, সিরিয়ার পরিস্থিতি সম্পূর্ণ এক নতুন রূপ নিতে পারে। এর মাধ্যমে বিশ্ব পরাশক্তিগুলো জড়িয়ে পড়তে পারে এক প্রাণঘাতী যুদ্ধে, যা রূপ নিতে পারে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে।
অবশ্য তিন কারণে এই প্রাণঘাতী বিশ্বযুদ্ধ না-ও হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। প্রথমত, এটি পরমাণু সঙ্ঘাতকে বিস্তৃত করবে। এ যুদ্ধে প্রাথমিক আগ্রাসী শক্তি পুরোপুরি ধ্বংসের সম্মুখীন হতে পারে। এ সঙ্ঘাতে কেউ জয়ী হতে পারবে না। দ্বিতীয়ত, ১৯৯০ শতকের মতো যুদ্ধ সক্ষমতা পরিস্থিতি বিশ্বে এখন নেই। সে সময় কয়েকটি দেশের হাতে সীমিত ছিল ব্যাপক যুদ্ধ করার ক্ষমতা। এখন সব দেশেরই কম-বেশি যুদ্ধক্ষমতা রয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ফ্রান্সের সৈন্যসংখ্যা ছিল ৫০ লাখ, এখন রয়েছে সাড়ে তিন লাখ। অন্য বৃহৎ শক্তিগুলোর অবস্থাও একই। এখন যুদ্ধবিরোধী চেতনা অনেক বেশি তীব্র। তৃতীয়ত, যুদ্ধে জড়িত হওয়ার পর নিজ নিজ দেশে যুদ্ধবিরোধী তীব্র জনমতের মুখে পড়তে হয় শাসকদের। ইরাক-আফগানিস্তানে যুদ্ধের পর এটি ব্রিটেন ও আমেরিকায় দেখা গেছে। রাশিয়াও শেষ পর্যন্ত এর ব্যতিক্রম হবে না।
সব দিক বিবেচনায় নেয়া হলে মনে হবে সিরিয়ার সঙ্ঘাত সর্বব্যাপী বিশ্বযুদ্ধে রূপ না-ও নিতে পারে। তবে এ কথা বাস্তব সত্য যে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এর পরিণতির ওপর কোনো পক্ষের নিয়ন্ত্রণ নানা কারণে থাকে না। ফলে বড় কোনো বিশ্ব বিপর্যয়কর পরিস্থিতির আশঙ্কা একেবারে উড়িয়েও দেয়া যায় না।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button