ফিলিস্তিনী সেই শিক্ষিকা পেলেন বিশ্বসেরার খেতাব

Hannaবেথেলহেমের উদ্বাস্তু শিবিরে বেড়ে ওঠা এক ফিলিস্তিনী শিক্ষিকা বিশ্বসেরা নির্বাচিত হয়েছেন। আলজাজিরা জানায়, হানান আল-রবকে ১০ লাখ ডলার বা প্রায় ৮ কোটি টাকা তুলে দেন দুবাইয়ের শাসক শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাখতুম।
ফিলিস্তিনের সামিহা খলিল হাই স্কুলের এই শিক্ষিকাকে ভার্কে ফাউন্ডেশন গ্লোবাল টিচার প্রাইজ ২০১৬ এর জন্য গত রোববার নির্বাচন করা হয়।
‘একজন ফিলিস্তিনী নারী শিক্ষক হিসেবে এই মঞ্চে দাঁড়াতে পেরে আমি গর্বিত,’ বলছিলেন উৎফুল্ল হানান।
‘সাধারণভাবে সব শিক্ষকের পক্ষ থেকে এবং বিশেষভাবে ফিলিস্তিনী শিক্ষকদের পক্ষ থেকে আমি এই পুরস্কার গ্রহণ করছি।’
দ্বিতীয় বারের মত এই পুরস্কার দেয়া হলো।
এর আগে এক সাক্ষাৎকারে ৪৩ বছর বয়সী হানান বলেছিলেন, ‘আমার শিক্ষা পদ্ধতিতে খেলার মাধ্যমে শিক্ষা এবং অহিংসার বিস্তারকে গুরুত্ব দেয়া হয়।’
তিনি বলেন, তার শিক্ষা পদ্ধতির মাধ্যমে মূল্যবোধ শিক্ষার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের কিছু আচরণগত সমস্যার সমাধান হচ্ছে।
‘ইসরাইলী দখলদারিত্বের কারণে আমাদের ছেলেমেয়েদের মধ্যে অনেক আচরণগত সমস্যা তৈরি হচ্ছে। এই শিক্ষা পদ্ধতির মাধ্যমে আমি এসব আচরণগত সমস্যার সমাধান করতে পারছি এবং একটি শান্তিপ্রিয় ও সহযোগিতামূলক প্রজন্ম তৈরি করতে সক্ষম হচ্ছি।’
হানান বলেন, ২০০০ সালে আল-আকসা মসজিদ কেন্দ্রিক ইন্তিফাদার (বিদ্রোহ) সময় পশ্চিমতীরে তার স্বামীকে গুলী করে হত্যা করে বর্বর ইসরাইলি বাহিনী।
‘আমার স্বামী (প্রথমে) আহত হন। ইসরাইলি সেনারা তাকে বিদ্রুপ করে এবং মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। এতে আমার সন্তানরা ভীষণ কষ্ট পায়,’ স্মৃতিচারণ করেন হানান। তিনি বলেন, তার উদ্ভাবিত শিক্ষা পদ্ধতির মাধ্যমে তার সন্তানরা আবার সুস্থ হয়ে ওঠে এবং আত্মবিশ্বাস ফিরে পায়।
খেলা ও শেখা
স্কুল থেকে বাসায় যাওয়ার পথে স্বামী-সন্তানের গুলীবিদ্ধ হওয়ার পর শিক্ষকতায় আসেন হানান আল রুব। রুব বলেন, এটা আমার বাচ্চাদের আচরণ ও ব্যক্তিত্বকে রুপান্তরিত করে। আমি একাকিত্ব বোধ করতে লাগলাম। ওই অবস্থা থেকে আমার সন্তানদের ফিরিয়ে আনকে কোনও শিক্ষক-শিক্ষিকা আমাদের সাহায্য করেননি।
শিক্ষাব্যবস্থা থেকে কার্যকর কোনও সহযোগিতা না পেয়ে হানান আল রুবের পরিবার ঘরে বসে গেম তৈরি করে। এরপর প্রতিবেশি শিশুদের সেটা খেলার জন্য ডাকা হয়। ধীরে ধীরে শিশুদের আচরণ উন্নত হতে শুরু করে।
হানান আল রুব এখন খেলাধুলার মাধ্যমে শিশুদের শিক্ষা দিচ্ছেন। এটা শিক্ষার্থীদের সহিংসতা বর্জনে উৎসাহিত করছে।
আমাদের উদ্দেশ্য মহৎ
হানান আল রুব বলেন, ‘গ্রেফতার, নির্যাতন, চেকপয়েন্ট কিংবা আমাদের দেশের অস্থিরতা নিয়ে কোনও কোনও শিশুর হয়তো সে রকম প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা নেই। কিন্তু পন্দায় এবং সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে তারা এসব দেখে থাকে। এগুলো তাদের প্রভাবিত করে।’
তিনি বলেন, ‘আমি সব শিক্ষকদের বলেছি, তারা ফিলিস্তিনি হোক আর দুনিয়ার যে কোনও প্রান্তেরই হোক আমাদের চাকরিটা মনুষ্যত্বপূর্ণ। এর লক্ষ্য মহৎ। আমাদের অবশ্যই বাচ্চাদের এটা শেখাতে হবে যে, আমাদের একমাত্র অস্ত্র হচ্ছে শিক্ষা।
ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গ্লোবাল টিচার প্রাইজে বিজয়ী হিসেবে হানান আল রুব- এর নাম ঘোষণা করেন পোপ ফ্রান্সিস।
পোপ ফ্রান্সিস বলেন, ‘এখানে শিক্ষার অংশ হিসেবে শিশুদের সামাজিক হতে শেখানো হয়। জীবনকে উপভোগ করতে শেখানো হয়। মর্যাদাপূর্ণ এই পুরস্কার জয়ের জন্য আমি হানান আল রুববে অভিনন্দন জানাচ্ছি। শিশুশিক্ষায় তিনি অনন্য ভূমিকা পালন করেছেন।’
দুবাইয়ের এই অনুষ্ঠানে অংশ নেন বড় পর্দার একঝাঁক তারকা। এদের মধ্যে বলিউড অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা চোপড়া, হলিউড অভিনেত্রী সালমা হায়কেও ছিলেন।
মানোন্নয়ন
এ বছর দ্বিতীয়বারের মতো এ পুরস্কার প্রদান করা হলো। এ প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী আসরে বিজয়ী হয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যান্সি আতওয়েল। পেশাগত ক্ষেত্রে ৪০ বছরের সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে ওই পুরস্কার প্রদান করা হয়েছিল। তিনি শ্রেণিকক্ষে বিশ্ব নাগরিক গড়ে তোলার প্রয়াস চালানোর মাধ্যমে এক্ষেত্রে নেতৃত্বের আসনে চলে আসেন। এ প্রতিযোগিতার বিচারক প্যানেলে থাকেন বিশ্বের নানা দেশের শিক্ষাবিদ, উদ্যোক্তা ও বিজ্ঞানীরা। এ পুরস্কারের উদ্যোক্তা দুবাইভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা ভার্কে ফাউন্ডেশন। সংস্থাটির কর্ণধার সানি ভার্কে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষার মানোন্নয়নের ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button