হাজারো অভিবাসন প্রত্যাশীর গল্প একই ছকে বাঁধা

Refugeeগ্রিসের রাজধানী এথেন্সের ভিক্টোরিয়া স্কয়ারে অনেক মানুষের ভিড়ে বসে আছেন খালেদ। ২৮ বছর বয়সী মানুষটি ট্রাকচালক। এসেছেন আফগানিস্তান থেকে। কাঁধে স্লিপিং ব্যাগ। অপেক্ষা করছেন একজন পাচারকারীর জন্য। এরাই তাঁকে গ্রিস থেকে মেসিডোনিয়ার সীমান্ত পার করে দেবে। সে আশায় গত ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে অপেক্ষা করছেন অভিবাসনপ্রত্যাশী খালেদ। আক্ষরিক অর্থে তাঁরা ভাসমান। কোথায় কোন দেশে থিতু হবেন, এর কোনো ঠিক নেই।খালেদের মতো আরেকজন মাহমুদ। পেশায় রেস্তোরাঁর ব্যবস্থাপক। সিরিয়ার আলেপ্পো থেকে স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে গ্রিসে আসা। কিন্তু দ্রুত সীমান্ত পেরোতে না পারলে হয়তো আটকে যেতে হবে এই ভয় তাকে তাড়া করছে। কারণ সিরিয়ার শরণার্থীদের জন্য জার্মানির পথ দ্রুত বন্ধ হয়ে যেতে পারে। মাহমুদ বলেন, ‘গ্রিসে কোনোভাবেই আমাদের আটকে থাকা যাবে না।’ শুধু খালেদ বা মাহমুদের জীবনের গল্প নয়, হাজারো অভিবাসনপ্রত্যাশী শরণার্থীর গল্প এই একই ছকে বাঁধা। যাঁরা অভিবাসী হওয়ার প্রত্যাশা নিয়ে বিভিন্ন দেশ থেকে জীবন বাজি রেখে সাগর পেরিয়ে গ্রিসে এসে অপেক্ষা করছেন, তাদের আর ফিরে যাওয়ারও কোনো পথ নেই। দ্য ইকোনমিস্ট অনলাইনের প্রতিবেদনে জানানো হয়, অস্ট্রিয়ায় এখন অভিবাসনপ্রত্যাশীদের প্রবেশে কড়াকড়ি করা হয়েছে। দিনে ৩ হাজার ২০০ জনের বেশি এখন আর কেউ অস্ট্রিয়ায় ঢুকতে পারবেন না। যাঁদের মধ্যে মাত্র ৮০ জন আশ্রয় চেয়ে আবেদন করতে পারবেন। মেসিডোনিয়া, সার্বিয়া ও ক্রোয়েশিয়াও অভিবাসনপ্রত্যাশীদের প্রবেশে কঠোর নীতি চালু করেছে। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রায় চার হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশী গ্রিস-মেসিডোনিয়ার সীমান্তে ভিড় জমান। গ্রিসের পুলিশ বেশ কিছু বাসে করে তাঁদের বিভিন্ন স্থানে ফিরিয়ে দিয়েছে। এই অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনার জন্য ২৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্বের ১০টি দেশ ভিয়েনায় মিলিত হয়। সেখানে গ্রিসকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।কয়েক মাস ধরে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, ইউরোপের উত্তরাঞ্চল যদি কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ঢল আসা বন্ধ করে দেয়, তাহলে হাজারো অভিবাসনপ্রত্যাশীকে সামলাতে গিয়ে গ্রিসে বিপর্যয় নেমে আসবে। জাতিসংঘের অনুমান, এই বছরে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ঢল ১০ লাখে চলে আসবে।গ্রিস ধীরে ধীরে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ডেরায় পরিণত হয় কি না, এ নিয়ে বেশ চিন্তিত গ্রিক প্রধানমন্ত্রী অ্যালেক্সিস সিপ্রাস। এমনিতেই প্রধানমন্ত্রী সিপ্রাস বেশ চাপের মুখে আছেন। দেশটির আইনজীবী, চিকিৎসক ও কৃষকেরা সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন। আয়কর বাড়ানোর প্রতিবাদে দেশটির কৃষকেরা মহাসড়কে ট্রাক্টর ফেলে অবরোধ করে রাখছেন। বুলগেরিয়া ও তুরস্কের সীমান্তও অবরোধ করে রেখেছেন তাঁরা। এ নিয়ে কৃষক নেতাদের সঙ্গে ২২ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী বৈঠক করে ব্যর্থ হয়েছেন। এর দুদিন পর দেশটির সুপ্রিম কোর্ট কৃষক নেতাদের দ্রুত অবরোধ তুলে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এদিকে আয় থেকে ৩০ শতাংশ কেটে নেওয়ার প্রতিবাদে দেশটিতে অবরোধ বিক্ষোভ করছেন আইনজীবীরা।এরই মধ্যে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সমস্যার সমাধান না হওয়ায় এঁদের সংখ্যা দিন দিন ফুলেফেঁপে উঠেছে। সিপ্রাসের সরকারও তাদের তেমন করে সামাল দিতে পারছে না। সীমান্ত পেরোনোর আশায় গ্রিসে যেসব অভিবাসনপ্রত্যাশী দীর্ঘ দিন থেকে অবস্থান করছেন, তাঁদের কোনো রকম সুযোগ-সুবিধা দিতেও ব্যর্থ হচ্ছে। শিশুসন্তান নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন তাঁরা।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button