ত্রাণমন্ত্রীর ১৩ বছরের সাজা বহাল

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার দুর্নীতির মামলায় সাজার রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। এর ফলে হাইকোর্টে মামলাটির পুনর্বিচারে আর বাধা থাকল না। একই সঙ্গে বিচারিক আদালতের দেয়া ১৩ বছরের কারাদন্ড ও বহাল থাকল।
রোববার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল ভিাগের চার বিচারপতির বেঞ্চ এ আদেশ দেন। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
এর আগে গত বছর ১৪ জুন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াকে খালাসের হাইকোর্টের দেয়া রায় বাতিল করে পুনঃশুনানির আদেশ দেন আপিল বিভাগ। এ রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন করেছিলেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক এই সাধারণ সম্পাদক।
শুনানিতে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আবদুল বাসেত মজুমদার ও দুদকের পক্ষে ছিলেন এডভোকেট খুরশিদ আলম খান।
দুদকের আইনজীবী জানান, রিভিউ আবেদন খারিজ হওয়ার ফলে তার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা চলতে আর কোনো বাধা থাকল না।
গত বছর ১৪ জুন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের তিন বিচারপতির বেঞ্চ মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াকে খালাসের হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে করা দুদকের করা লিভ টু আপিল মঞ্জুর করেন। এর ফলে হাইকোর্টের দেয়া খালাসের রায় বাতিল হয়ে যায়।
এরপর ২৪ জুন প্রকাশিত আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায়ে আপিল বিভাগ বলেন, ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় খালাস দিয়ে হাইকোর্ট বিচারিক মনোভাবের পরিচয় দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। হাইকোর্ট তাকে খালাস দেয়ার কোনো উপাদানই (গ্রাউন্ড) নেই। তাই মামলাটি হাইকোর্ট বিভাগে পুনরায় আপিলের শুনানির জন্য ফেরত পাঠানো ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না।
পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য পদে বহাল থাকা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল। সর্বোচ্চ আদালতে হাইকোর্টের রায় বাতিল হওয়ায় এখন নিন্ম আদালতের দেয়া ১৩ বছরের সাজা এবং সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের আদেশ বহাল রয়েছে। যদিও বিষয়টি নিয়ে আবার হাইকোর্টে পুনঃশুনানির কথা রয়েছে। সাজা বহাল থাকায় সংবিধান অনুযায়ী তার মন্ত্রীত্ব এবং সংসদ সদস্য পদ রয়েছে কিনা এ নিয়েই বিতর্ক।
এ বিষয়ে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম বলেছিলেন, ‘দুদকের মামলায় যেহেতু মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াকে ১৩ বছর সাজা দিয়েছিলেন বিশেষ আদালত এবং হাইকোর্ট খালাস দিলেও আপিল বিভাগ তা বাতিল করে দিয়েছেন, তাই তার সংসদ সদস্য পদ থাকা উচিত নয়। সংবিধানের ৬৬ (২) ঘ অনুযায়ী কেউ নৈতিক স্খলনের কারণে সাজাপ্রাপ্ত হলে তিনি সংসদ সদস্য থাকতে পারেন না। তিনি আরো বলেন, তার মন্ত্রিত্বের বিষয়ে সংসদে উন্মুক্ত বিতর্কের মাধ্যমে আলোচনা হতে পারে।
জরুরি অবস্থার সরকারের আমলে ২০০৮ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত এ মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াকে ১৩ বছরের কারাদ- দেন। একই সঙ্গে পাঁচ কোটি টাকা জরিমানা এবং তার প্রায় ছয় কোটি টাকার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার আদেশ দেন আদালত।
এরপর তিনি বিশেষ জজ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে ২০১০ সালের ২৭ অক্টোবর বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ ওই রায় বাতিল করেন। হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল দায়ের করে দুদক।
২০০৭ সালের ১৩ জুন দুদকের সহকারী পরিচালক নূরুল আলম সূত্রাপুর থানায় এ মামলা দায়ের করেন। মামলায় ২৯ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগ আনা হয় মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার বিরুদ্ধে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button