একুয়েডরে ভয়াবহ ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২৩৮
দক্ষিণ আমেরিকার দেশ একুয়েডরের উপকূলীয় অঞ্চলে ভয়াবহ ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা বেড়ে অন্তত২৩৮ জনে দাঁড়িয়েছে। ইতালি থেকে সফর সংক্ষিপ্ত করে দেশের পথে থাকা একুয়েডরের প্রেসিডেন্ট রাফায়েল কোরেয়া রবিবার মৃতের এ সংখ্যা নিশ্চিত করেছেন।
ট্যুইটারে তিনি বলেন, এ মুহূর্তে ধ্বংসস্তুপ থেকে লোকজনকে উদ্ধার করাটাই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করা হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ ভূমিকম্পে আহতের সংখ্যা ১৫শ’ র বেশি বলে জানিয়েছে।
ভূমিকম্পস্থলের কাছের উপকূলীয় এলাকাগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষত পেডারনালস এলাকা। এ এলাকাটিতে ভূমিকম্প পরবর্তী ১৩৫টি পরাঘাত হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ দপ্তরের (ইউএসজিএস) তথ্য অনুযায়ী, স্থানীয় সময় শনিবার সন্ধ্যায়, (বাংলাদেশ সময় ভোর ৫টা ৫৮) এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ৮।
ভূমিকম্পে বিস্তীর্ণ এলাকা থেকে ক্ষয়ক্ষতির তথ্য আসছে। ছয়টি প্রদেশে জরুরি অবস্থা জারি করে ন্যাশনাল গার্ডকে উদ্ধার কাজে পাঠানো হয়েছে। এই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল উপকূলীয় শহর মুইসেন থেকে ২৭ কিলোমিটার দূরে, ভূপৃষ্ঠ থেকে ১৯ কিলোমিটার গভীরে।
বিবিসি’র প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রবল ঝাঁকুনিতে রাজধানী কিটোর বাসিন্দারা আতঙ্কে বাড়িঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসে। গুয়ায়াকিল শহরে একটি ওভারপাস ধসে পড়ে। কিটোর বাসিন্দা জোলিয়া ভিলেনাকে উদ্ধৃত করে বিবিসি লিখেছে, আমার বাড়ি নড়ছিল, জিনিসপত্র ছিটকে পড়ছিল আর বাচ্চারা কাঁদছিল। আমরা আতঙ্কের মধ্যে আছি। ভূমিকম্পের পর প্যাসিফিক সুনামি ওয়ার্নিং সেন্টার ও প্রতিবেশী দেশ পেরু সুনামি সতর্কতা জারি করে।
সঞ্চালন লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় রাজধানী কিটোর একটি অংশ বিদ্যুৎহীন সাময়িকভাবে বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। মান্তা শহরে বিমানবন্দরের একটি টাওয়ারও ভেঙে পড়েছে।
স্থানীয় দৈনিক এল টেলেগ্রাফো প্রাথমিক খবরে ৫৮৮ জনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করার খবর জানায়। দুর্গতদের জন্য খোলা হয়েছে পাঁচটি আশ্রয় কেন্দ্র। উদ্ধার তৎপরতা চলছে। দুর্গত এলাকায় মোতায়েন করা হচ্ছে ১০ হাজার সেনা ও ৩ হাজার ৫০০ পুলিশ।
সন্ধ্যার শক্তিশালী ভূমিকম্পের পর দফায় দফায় মৃদু ও মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হচ্ছে সেখানে। বহু মানুষকে রাত কাটাতে হচ্ছে খোলা আকাশের নিচে। দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট হোর্হে গাস সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, জানমাল রক্ষায় জরুরি বিভাগ, পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে।
কলোম্বিয়াতেও এ ভূমিকম্প অনুভূত হয়। সেখানে একটি ক্লিনিক থেকে রোগীদের সরিয়ে নেওয়া হয় বলে বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। প্রশান্ত মহাসাগরে ‘রিং অব ফায়ার’ নামে পরিচিত হয়ে ওঠা ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকায় একুয়েডরের অবস্থান। ১৯৭৯ সালের পর সেখানে এটাই সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্পের ঘটনা।