ব্রাজিলে অভিশংসন ভোটে হেরে গেলেন রৌসেফ

Dilma Rousseffব্রাজিলের পার্লামেন্টে অভিশংসন প্রস্তাবের গুরুত্বপূর্ণ ভোটে হেরে গেছেন প্রেসিডেন্ট দিলমা রৌসেফ। তার বিদায় এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। এদিকে রৌসেফের ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ব্রাজিলের অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে কে দায়িত্ব নিচ্ছেন তা নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা কল্পনা। ব্রাজিলের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে সবচেয়ে বেশি শোনা যাচ্ছে ভাইস প্রেসিডেন্ট মিচেল তেমেরের নাম। সংবিধান অনুযায়ী তারই প্রেসিডেন্ট হওয়ার কথা। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, রৌসেফের মত তার বিরুদ্ধেও রয়েছে দুর্নীতির অভিযোগ। তবে তেমেরের বিরুদ্ধে রৌসেফের অভিযোগ, তাকে উৎখাত করতে একটা চক্র ষড়যন্ত্র করছে। সেই ষড়যন্ত্রকারীদের মধ্যে ভাইস প্রেসিডেন্ট মিচেল তেমের একজন। অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিতে পারেন পার্লামেন্ট স্পিকার এডুয়ান্দো চুনহাও। রৌসেফের স্থলাভিষিক্ত হতে পারেন সিনেট প্রধান রেনান চালহেইরোসও। তেমের, চুনহাও এবং রেনান এই তিন নেতাই ব্রাজিলের জোট সরকারের প্রধান শরিক দল পিএমডিবি দলের সদস্য। সম্প্রতি দলটি সরকার থেকে বেরিয়ে গেছে। তবে চুনহাও ও রেনানের চেয়ে তেমেরের নামই বেশি শোনা যাচ্ছে। উল্লেখ্য, রোববার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে রৌসেফের বিরুদ্ধে আনীত অভিশংসন প্রস্তাবটি সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে পাস হয়েছে। এবার এটি পার্লামেন্টে উচ্চকক্ষ বা সিনেটে তোলা হবে। সেখানে প্রস্তাবটি দুই তৃতীয়াংশ বা কমপক্ষে ৪১ সিনেট সদস্যের ভোটে পাস হতে হবে। এরপরই শুরু হবে রৌসেফকে ক্ষমতাচ্যুত করার মূল প্রক্রিয়া। গোটা প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে ৬ মাস বা ১৮০ দিন সময় লাগবে। সেই সময় ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করার কথা রয়েছে তেমেরের। বিচারে প্রেসিডেন্ট রৌসেফ দোষী সাব্যস্ত হলে তাকে অপসারণ করা হবে। এরপর দেশের অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন তেমের। নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্ব পালনের সুযোগ পাবেন। ৫১৩ আসন বিশিষ্ট সংসদের নিম্নকক্ষ অভিশংসনের পক্ষে ভোট পড়ে ৩৬৭টি। আর বিপক্ষে ১৪০টি। ছয়জন ভোট দেননি।
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট দিলমা রৌসেফকে অভিশংসন ইস্যুতে ২০ কোটি জনসংখ্যার দেশ ব্রাজিল আক্ষরিক অর্থে দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে।
এর আগে টানা তিনদিন তীব্র বিতর্ক, উত্তেজনা ও রুদ্ধশ্বাস নাটকীয়তার পরে গত রোববার অভিশংসন নিয়ে ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হয়।
ভোটের সময় রাজধানী ব্রাসিলিয়াসহ অন্যান্য শহরের রাস্তায় অভিশংসনের পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নেয় হাজারো মানুষ। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা নিয়ে ভোটের ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে দেশটির জনগণ। এ ভোট টেলিভিশনেও সরাসরি সম্প্রচারিত হয়।
পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে উভয়পক্ষের প্রায় ২৫,০০০ সমর্থক অবস্থান নিয়েছিলেন। প্রায় সাড়ে ৬ ফিট উঁচু ও এক মাইল লম্বা লোহার প্রাচীর দ্বারা উভয় পক্ষের মাঝখানে দেয়াল তৈরি করা হয়েছিল। অভিশংসনের পক্ষের সমর্থকরা ব্রাজিলের পতাকার রং হলুদ ও সবুজ রংয়ের পোশাক পরেছিলেন এবং রৌসেফ সমর্থকরা পরেছিলেন লাল রংয়ের পোশাক। সংঘাত-সংঘর্ষের আশঙ্কায় প্রস্তুত রাখা হয়েছিল পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী।
ব্রাজিলের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট দিলমা রৌসেফের বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো ২০১৪ সালে পুনঃনির্বাচনের সময় বাজেট আইন ভঙ্গ করে সরকারি হিসেবে কারসাজি করেছিলেন তিনি। রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি পেট্রোবাসের কোটি টাকার একটি প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগও উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করে রৌসেফ তার বিরুদ্ধে এই প্রচেষ্টাকে ‘বেসামরিক ক্যু’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
ব্রাজিলের রাজনীতির এই দশাকে ১৯৮৫ সালে সামরিক শাসনের অবসানের পর সবচেয়ে বড় ‘বিপর্যয়’ বলে দেখা হচ্ছে।
উত্তরসূরী সাবেক প্রেসিডেন্ট লুলা দ্য সিলভার আশীর্বাদের ওপর ভর করে ২০১০ সালে প্রথমবারের মতো প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেও ২০১৪তে তিনি নিজ যোগ্যতার বলেই প্রেসিডেন্ট হন। দিলমা রৌসেফ এর আগে দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর সরকারি খাতের দুর্বলতা, ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজনে রেকর্ড পরিমাণ ব্যয় ও দুর্নীতির অভিযোগে গত বছর ব্যাপক বিক্ষোভ মোকাবিলা করেন রৌসেফ।
রৌসেফ ব্রাজিলের ৩৬তম প্রেসিডেন্ট এবং দেশটির প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট। তিনি ১৯৪৭ সালে জন্ম গ্রহণ করেন। লেখাপড়া করেছেন ফেডারেল ইউনিভার্সিতে অর্থনীতি বিষয়ে। শিক্ষাজীবন থেকেই তিনি সমাজতান্ত্রিক ধারার রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আগে তিনি ২০০৩ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত দেশটির জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। ২০০৫ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্টের চিফ অফ স্টাফ ছিলেন। ব্যক্তিগত জীবনের তিনি দুইবার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি এক সন্তানের জননী।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button