‘ইনশাআল্লাহ’ বলায় বিমান থেকে নামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ
আগের দিন খায়রুলদিন মাকজুমি এক অনুষ্ঠানে প্রশ্নোত্তর পর্বে জাতিসংঘ মহাসচিবকে প্রশ্ন করেছেন। আর তারপরের দিনই তাকে সাউথ ওয়েস্ট এয়ারলাইন্সের বিমান থেকে নামিয়ে এফবিআই এর জেরার সম্মুখীন হতে হল।
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৬ বছর বয়সী মুসলিম ছাত্র মাকজুমি এই ঘটনায় হতভম্ব। এতে স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে, যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম বিদ্বেষ অপমানজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। ঘটছে নানা অবমাননাকর ঘটনা।
এই ঘটনাটি আমেরিকার সাউথ ওয়েস্ট এয়ারলাইন্সের একটি বিমানের। মাকজুমি লস এঞ্জেলস থেকে ক্যালিফোর্নিয়ার অকল্যান্ডে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বিমানে আরোহণ করেন। বিমান উড্ডয়নে কিছুটা বিলম্ব হওয়ায় তিনি ফোনে বাগদাদে বসবাসরত তার চাচার সাথে কথা বলছিলেন।
মাকজুমি আরব বংশোদ্ভূত হওয়ায় স্বাভাবিকভাবে তিনি আরবিতে কথা বলছিলেন। আগের দিন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনের সাথে একটি ডিনার পার্টিতে অংশ নেয়ার কথা তার চাচাকে বলার সময় তিনি কিছুটা উত্তেজিত ও উচ্ছ্বসিতভাবে কথা বলছিলেন।
মাকজুমি বলেন, ‘আমি তার সাথে ওই অনুষ্ঠান নিয়ে কথা বলছিলাম। তিনি আমাকে বলেন অকল্যান্ডে নেমে ফোন দিতে। জবাবে আমি বলি ‘ইনশাআল্লাহ’, আমি ফোন করবো। এসময় এক নারী আমার দিকে বারবার আড় চোখে তাকাচ্ছিল। আমি ভাবলাম হয়তো আমি উচ্চ শব্দে কথা বলছি তাই সে এভাবে দেখছে’।
মাকজুমি ওই নারীকে দ্রুত বিমান থেকে নেমে যেতে দেখেন এবং মাত্র ২ মিনিটের মাথায় এফবিআই এসে তাকে বিমান থেকে নামিয়ে নিয়ে যায়।
বিমান থেকে নামিয়ে এয়ারপোর্টের পুলিশ ক্যাম্পে নিয়ে তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় বলে মাকজুমি জানিয়েছেন। তাকে বারবার প্রশ্ন করা হচ্ছিল তিনি কার সাথে কথা বলেছেন এবং কি বলেছেন।
প্রায় দুই ঘণ্টা জেরা করার পর মাকজুমিকে ছেড়ে দেয় এফবিআই। কিন্তু মাকজুমি ওই ফ্লাইটটি মিস করেন। এখন তিনি ওই এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ কর্তৃক তার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করার দাবি করেছেন।
প্রসঙ্গত, সাউথ ওয়েস্ট এয়ারলাইন্সের বিরুদ্ধে আরো মুসলিম যাত্রীদের নামিয়ে দেয়ার বা হেনস্তা করার অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে।
বিমান থেকে নামিয়ে দিল মুসলিম মহিলাকে
পাশের যাত্রীকে নিয়ে অস্বস্তি হওয়ায় বিমানে নিজের আসন বদলানোর অনুরোধ করেছিলেন মাত্র। তাই বলে বিমান থেকেই নেমে যেতে হবে তাকে, ভাবতে পারেননি হাকিমা আবদুল্লে।
মেরিল্যান্ডের বাসিন্দা হাকিমা। গত বুধবার সাউথ ওয়েস্ট এয়ারলাইন্সের বিমানে শিকাগো থেকে সিয়াটল যাওয়ার কথা ছিল তার।
হাকিমা জানান, ওই দিন সব স্বাভাবিকই ছিল। নিরাপত্তা বেষ্টনী পেরিয়ে বিমানেও ওঠেন তিনি। তবে পাশের আসনে বসা ব্যক্তির আচরণে তার অস্বস্তি হতে থাকে। কিছুক্ষণ পর তিনি বিমানবালাকে ডেকে অনুরোধ করেন, যাতে তাকে অন্য কোনো আসনে বসার ব্যবস্থা করে দেয়া হয়। হাকিমা জানাচ্ছেন, এর পরেই তাকে বিমান থেকে নেমে আসতে বলা হয়।
কেন তাকে নেমে আসতে হচ্ছে তা বারবার জিজ্ঞাসা করলেও বিমানসংস্থার কর্মীরা তার কোনো প্রশ্নের জবাব দেননি বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি। এর পর তাকে টার্মিনালে বসিয়ে রেখে বিমান চলে যায় গন্তব্যে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত নিরাপত্তাকর্মীরাও জিজ্ঞাসা করেন বিমান থেকে ওই মহিলাকে কেন নামিয়ে দেয়া হয়েছে। তাতে সংস্থার কর্মীরা জানান, বিমানে ওই মহিলার অস্বস্তি হচ্ছিল। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ ও অপমানিত হাকিমার প্রশ্ন, পরনে হিজাব থাকায় ও মুসলিম সম্প্রদায়ের বলেই কি তার সঙ্গে এমন আচরণ করেছেন ওই বিমানকর্মীরা?
এ দিনের ঘটনা নিয়ে বিমানসংস্থার কোনো যুক্তি মানতে নারাজ কাউন্সিল অব আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশন্স। কাউন্সিলের এক অফিসারও বলেন, হাকিমাকে অযথা হেনস্তা করেছে বিমানসংস্থা। ঘটনার প্রতিবাদে সরব হন হাকিমার স্বামীও। তবে নিজেদের তরফে কোনো ভুল হয়নি বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন সাউথ ওয়েস্ট বিমানসংস্থার মুখপাত্র ব্যান্ডি কিংগ।
তিনি বলেন, ‘‘ওই ঘটনা নিয়ে যেটুকু তথ্য পেয়েছি, তাতে নিয়মকানুন মানতেই ওই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল বলে মনে হচ্ছে।”