সিরিয়া অভিযানের প্রস্তাব ব্রিটিশ পার্লামেন্টে নাকচ
সিরিয়ায় সামরিক অভিযান পরিচালনায় প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের প্রস্তাব ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিম্ন কক্ষ হাউজ অফ কমন্সের ভোটাভুটিতে নাকচ হয়ে গেছে। এর মধ্য দিয়ে সিরিয়ায় মার্কিন নেতৃত্বাধীন অভিযানে যুক্তরাজ্যের যোগ দেয়ার পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ডেভিড ক্যামেরনের দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হওয়া কঠিন হয়ে এলো বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
১৭৮২ সালের পর ক্যামেরনই হলেন প্রথম ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী, যার সামরিক প্রস্তাব পার্লামেন্টের অনুমোদন পেতে ব্যর্থ হলো।
ব্রিটিশ পার্লামেন্টের এই সিদ্ধান্তের কারণে ওয়াশিংটন-লন্ডন সম্পর্কেও প্রভাব পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অবশ্য প্রয়োজন হলে যুক্তরাষ্ট্র একাই সিরিয়ায় অভিযান চালাতে পারে বলে ইতোমধ্যে ইংগিত দিয়েছে বারাক ওবামা প্রশাসন। দামেস্কে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করে কয়েকশন মানুষকে হত্যার জন্য সিরিয়ার বাশার আল আসাদ সরকারকে দায়ী করে এই সেনা অভিযান চালাতে চায় পশ্চিমা দেশগুলো। এ বিষয়ে ব্রিটেনের পক্ষ থেকে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে একটি প্রস্তাবও দেয়া হয় গত বুধবার। অবশ্য সিরিয়ার মিত্র রাশিয়া ও চীন বলে আসছে, সিরিয়া সরকারই গ্যাস হামলার জন্য দায়ী কি না- তা প্রমাণ হওয়ার আগেই অভিযানের সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক হবে না।
এই অভিযানের পক্ষে জোরালো অবস্থান নিয়ে আসা ক্যামেরন বুধবার একবার পার্লামেন্টে প্রস্তাব তুললেও লেবার পার্টির বিরোধিতার মুখে পড়েন। ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন সদস্যও ইরাক যুদ্ধে তখনকার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের ভূমিকা ও এ নিয়ে ব্রিটেনের সমালোচনায় পড়ার কথা মনে করিয়ে দেন।
ব্রিটিশ সরকার তারপরও প্রস্তাবটি এগিয়ে নিতে চাইলে বৃহস্পতিবার রাতে ভোটাভুটি হয়। এতে সিরিয়ায় সামরিক অভিযানের বিপক্ষে ২৮৫ ভোট পড়ে, আর ক্যামেরনের প্রস্তাবকে সমর্থন দেন ২৭২ জন।
ব্রিটিশ পার্লামেন্টে গ্রীষ্মকালীন ছুটির মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন এই বিশেষ অধিবেশনের ডাক দিয়েছিলেন।
বিব্রতকর পরাজয়ের পর ক্যামেরন বলেন, “সিরিয়ায় যা ঘটেছে তার বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেয়া জরুরি ছিল বলে আমি মনে করি। তবে এটা স্পষ্ট যে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট কোনো ধরনের সামরিক অভিযান চায় না। সরকার পার্লামেন্টের সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান জানাবে।”
যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ড পরে সাংবাদিকদের বলেন, সিরিয়া অভিযানে ব্রিটেনের যোগ না দেয়ার সিদ্ধান্ত তাদের ঘনিষ্ট মিত্র যুক্তরাষ্ট্র খুব একটা ভালভাবে নেবে বলে তিনি মনে করেন না।
অবশ্য মিত্রদের সহযোগিতা না পেলেও প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা একাই সিরিয়া অভিযানের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন বলে ইতোমধ্যে ইংগিত দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকতারা। অবশ্য এ বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি।
ওয়াশিংটনের কর্মকর্তারা কংগ্রেসের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের কাছে অভিযানের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন বলে জানান গেছে। সামরিক অভিযানের পক্ষে তারা গোয়েন্দা প্রতিবেদনও জমা দেবেন।