ব্রিটেনে আবারো প্রাচীনতম কোরআন শরীফের সন্ধান
বার্মিংহামের পর এবার নর্থামটনে পাওয়া গেছে প্রচানীতম পবিত্র কোরআন শরিফের অংশ বিশেষ। ধারণা করা হচ্ছে হাতে লেখা এই কোরআন শরিফের পাণ্ডুলিপি ১১০০ বছরের পুরাতন।
এ বছরের এপ্রিল মাসে বৃটেনের নর্থামটন ইন্টার ন্যাশনাল মিউজিয়াম লেদার ক্রাফট নামক একটি মিউজিয়ামে হাতের লিখা ১১০০ বছর আগের কোরআন শরীফের কিছু অংশ পাওয়া যায়।
তবে বার্মিংহামে পাওয়া ‘প্রাচীনতম’ কোরআন নিয়ে নতুন নতুন বিতর্ক চলে আসছে। এরই মাঝে নর্থামটনে পাওয়া গেছে আরো কিছু হাতে লেখা পবিত্র কোরআন শরীফের পাণ্ডুলিপি।
নর্থামটন মিউজিয়ামের কর্মকর্তা ফিলিপ ওয়ার্নার আরবি লেখা পাণ্ডুলিপি দেখে গত বছরের জুলাই মাসে ব্রিটেনের বার্মিংহাম ইউনিভার্সিটির লাইব্রেরিতে সন্ধান পাওয়া যায় হাতে লেখা প্রাচীন কোরআন শরীফের কিছু পৃষ্ঠার সাথে মিল দেখতে পেরে তিনি স্থানীয় মুসলিম কমিউনিটি নেতা ব্রিটিশ বাংলাদেশী অয়েল ফেয়ার ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ও যুক্তরাজ্য বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক খছরুজ্জামান খছরুকে পাণ্ডুলিপিগুলি দেখতে বলেন।
তিনি বিভিন্ন জায়গায় ও একাধিক শীর্ষ ইসলামিক স্কলারদের সাথে কথা বলে নিশ্চিত হন এটি হতে পারে এ পর্যন্ত পাওয়া বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন কোরআন শরীফের হাতে লেখা পাণ্ডুলিপি এবং কমপক্ষে ১১০০ বছরের পুরনো।
আরবি ভাষায় হাত দিয়ে লিখিত একটি প্রাচীন সংস্করণ এটি। পাণ্ডুলিপির লেখাগুলো এখনো বেশ স্পষ্ট। অর্থাৎ, বিশ্বে এ পর্যন্ত পাওয়া প্রাচীনতম কোরআন শরীফ এটি।
খসরুজ্জামান খসরু জানান, ‘গত দু’বছর পূর্বে মিউজিয়ামের কর্মকর্তা ফিলিপ ওয়ার্নার উক্ত মিউজিয়ামে কাজে যোগদেন। তিনি এশিয়ান বিষয়ক পাণ্ডুলিপিগুলি দেখাশুনার দায়িত্ব পান।’
আর এগুলি নাড়াচাড়া করতে গিয়েই উক্ত পাণ্ডুলিপির সন্ধান পান বলে জানান তিনি।
লন্ডনে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে খছরুজ্জামান খছরু বলেন, ‘পাণ্ডুলিপিগুলি রোমাঞ্চকর, এ আবিষ্কার’ মুসলমানদের উৎফুল্ল করবে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন রেডিওকার্বন পদ্ধতির সাহায্যে পাণ্ডুলিপিটির প্রকৃত বয়স নির্ধারণ করা হবে ও পাণ্ডুলিপিগুলি পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জনগণের সামনে প্রদর্শন করা হবে বলে।
তিনি বলেন, ‘এটি দারুণ এক আবিষ্কার এবং মুসলিম সম্প্রদায় এতে খুবই খুশি হবে। আমি যখন পাতাগুলো দেখলাম, আনন্দে আমার চোখে পানি এসে পড়েছিলো।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমি নিশ্চিত যে বৃটেনের সব স্থান থেকে মানুষ এই পৃষ্ঠাগুলো এক নজর দেখার জন্য নর্থামটনে আসবেন।’
এদিকে গত বছরের জুলাই মাসে ব্রিটেনের বার্মিংহাম ইউনিভার্সিটির লাইব্রেরিতে সন্ধান পাওয়া যায় হাতে লেখা প্রাচীন কোরআন শরীফের কিছু পৃষ্ঠা। এর পর থেকে শুরু হয় হৈ চৈ। এগুলো সম্ভবত পৃথিবীর প্রাচীনতম কোরআনের অংশ। গবেষকরা ধারণা করছিলেন, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স)-এর জীবদ্দশাতেই সম্ভবত এগুলো লেখা হয়েছিল। তবে নতুন এক গবেষণা আবিষ্কৃত পৃষ্ঠাগুলো নিয়ে হৈ চৈয়ের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক। যে চামড়ায় (পার্চমেন্ট কাগজ) পবিত্র কোরআনের আয়াতগুলো লেখা ছিল, সম্প্রতি সেই কাগজের কার্বনডেটিং পরীক্ষা করেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন গবেষক। তারা দেখতে পান, কাগজটির বয়স ৫৮৬ থেকে ৬৪৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে। অন্যদিকে মহানবী (স)-এর জন্ম হয়েছিল ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে। আর তার ৪০ বছর বয়সে নবুয়ত লাভ করেন তিনি। অর্থাৎ ইসলামের ইতিহাস অনুযায়ী ওই বয়সেই তার ওপর কোরআন নাজিল হয়।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কোরআন বিশেষজ্ঞ ড. কিথ স্মল বলেন, ‘এটা পবিত্র কোরআনের জন্মের ভিত্তি সম্পর্কে আরো একটা ধারণা দেয়। এর অর্থ মহানবী (স) ও তার অনুসারীরা এমন সব বাণী মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন যা আগে থেকেই পৃথিবীতে ছিল। এবং সেই সব বাণীকে তাদের নিজেদের রাজনৈতিক ও ধর্মতাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সামঞ্জস্য করে দিয়েছেন। মুহাম্মদ (স) স্বর্গ থেকে কোনো ঐশ্বরিক বাণী না পেয়েই তারা এটা করেছেন।’