২০ বছরে একদিনও ছুটি কাটাননি যিনি

Suhelমঈন উদ্দিন সরকার সুমন: বিশ বছরের চাকরিজীবনে সাপ্তাহিক বা সরকারি কোনো ধরনের ছুটি কাটাননি তিনি। কাজ করে গেছেন সততার সঙ্গে। করেছেন পরিশ্রম। আর তার পুরস্কার হিসেবে পেয়েছেন বিখ্যাত মার্কিন খাদ্যবিক্রেতা প্রতিষ্ঠান বাসকিন রবিন্সের কুয়েত শাখার এরিয়া ম্যানেজারের পদ। আর এই পদে কর্মরত একমাত্র বাংলাদেশিও তিনি।
যাঁর কথা বলছি, তাঁর নাম সোহেল মাহমুদ (৫৩)। খুলনার কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারার মরহুম আমীর উদ্দিনের পঞ্চম সন্তান তিনি। বুকভরা স্বপ্ন নিয়ে ১৯৮৬ সালের এপ্রিল মাসে দেশের মায়া ত্যাগ করে শ্রমিক ভিসা নিয়ে কুয়েতে আসেন। ১৯৮৮ সালে চাকরি পরিবর্তন করে সেলসম্যান হিসেবে যোগ দেন স্বনামধন্য আমেরিকান খাদ্যবিক্রেতা প্রতিষ্ঠান বাসকিন রবিন্সের কুয়েত শাখায়।
শুরু হয় ভাগ্য পরিবর্তনে সোহেল মাহমুদের নতুন চেষ্টা। এই প্রতিষ্ঠানে ক্যারিয়ার গড়তে নিজে থেকেই এক ধরনের চ্যালেঞ্জ নেন তিনি। আর সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় টানা ২০ বছর কোনো ধরনের সাপ্তাহিক বা সরকারি ছুটি কাটাননি সোহেল। করেছেন কঠোর পরিশ্রম, প্রাধান্য দিয়েছেন সততাকে, খাটিয়েছেন নিজের মেধা।
সোহেল মাহমুদের এই পরিশ্রমের ফলে বেড়েছে প্রতিষ্ঠানের পরিধি। আর নিজের কাজের প্রতিদান হিসেবে সেলসম্যান থেকে ২০ বছর পর হয়েছেন এরিয়া ম্যানেজার। বর্তমানে এক হাজার ২০০ কুয়েতি দিনার বেতন পান সোহেল। বাংলাদেশি টাকায় যার পরিমাণ তিন লাখ ১১ হাজার টাকার বেশি।
একটু ভালো হওয়ার আশায় তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো থেকে মা-বাবা, ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তান রেখে সুদূর প্রবাসে পাড়ি জমান অসংখ্য মানুষ। একদিকে সোনার হরিণের খোঁজে সম্পূর্ণ ভিনদেশে এসে প্রতারণার শিকার হন কিংবা স্বপ্নভঙ্গ হয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েন এমন মানুষের সংখ্যা অগণিত। সেখানে সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টায় সোহেল মাহমুদের মতো বাংলাদেশিদের এমন মাথা উঁচু করে বাঁচার গল্প গর্বিত করে।
বর্তমানে বাসকিন রবিন্সের কুয়েত ডিভিশনে মিসর, ফিলিপাইন ও ভারতের নাগরিকদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কাজ করছেন সোহেল। একমাত্র বাংলাদেশি এরিয়া ম্যানেজার হিসেবে প্রতিষ্ঠানটিতে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
কুয়েতে বাসকিন রবিন্সের ৪৬টি শাখা আছে। এর মধ্যে ১৫টির দায়িত্বে আছেন সোহেল মাহমুদ। প্রথম থেকেই প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা কাজ করেন তিনি। এই দীর্ঘ চাকরিজীবনে নিষ্ঠাবান কর্মী হিসেবে পেয়েছেন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সোনার মেডেলসহ অসংখ্যা সম্মাননা।
১৯৯৪ সালে মা-বাবার পছন্দের মেয়ে শারমিন সুলতানাকে বিয়ে করে কুয়েতে নিয়ে আসেন সোহেল। নিজের সাফল্যের পেছনে স্বীকার করলেন স্ত্রীর অবদানের কথা। প্রতিদিন যখন ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা কাজ করে মধ্যরাতে বাসায় ফিরতেন, এসে দেখতেন তাঁর অপেক্ষায় জেগে রয়েছেন শারমিন।
ছয় বছর আগে সন্তানদের উচ্চশিক্ষার কথা চিন্তা করে এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে দেশে ফিরে যান শারমিন সুলতানা। এই দম্পতির বড় ছেলে ফারহান বিন সোহেল (২১) ধানমণ্ডিতে অক্সফোর্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এ-লেভেল পরীক্ষা দিচ্ছেন। সে সঙ্গে ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে বিষয়টি নিয়ে উচ্চতর পড়াশোনার জন্য কানাডা যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। মেয়ে সামিহা সোহেল (১৩) একই স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button