লস অ্যাঞ্জেলেস মেয়রকে বাংলাদেশীদের বর্ণাঢ্য সংবর্ধনা
আহমেদ ফয়সাল, লস অ্যাঞ্জেলেস: বাংলাদেশী কমিউনিটির ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত হলেন লস অ্যাঞ্জেলেসের নবনির্বাচিত মেয়র এরিক গরসিটি। সুসজ্জিত বাদকদের সুরের মূর্ছনায় তাকে দেয়া হলো লালগালিচা সংবর্ধনা। গোলাপের পাপড়ি ছিটিয়ে তাকে বরণ করে নেয়া হয় ‘লিটল বাংলাদেশ’র বুকে।
প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রাণঢালা উষ্ণতা ও ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে অভিভূত হয়ে পড়েন সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র গরসিটি। গরসিটি গত ২২ মে নির্বাচিত হয়ে সম্প্রতি লস অ্যাঞ্জেলেসের নগরপিতার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। তার সম্মানেই রোববার বিকালে লস অ্যাঞ্জেলেসের লিটল বাংলাদেশে এই সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। উল্লেখ্য, ‘লিটল বাংলাদেশ’ হলো আমেরিকার বুকে একখণ্ড বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় বৃহত্তম সিটি লস অ্যাঞ্জেলেসের বুকে এর অবস্থান।
আমেরিকার মানচিত্রে স্থান করে নেয়া এই লিটল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশীদের পক্ষে সিটি কাউন্সিলে যিনি বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন, তিনি হলেন সদ্য নির্বাচিত মেয়র গরসিটি।
এখানকার বাংলাদেশীদের প্রত্যাশা, এই লিটল বাংলাদেশ প্রবাসী বাংলাদেশীদের ঐক্যবদ্ধ কর্মতত্পরতার সাক্ষ্য বহন করে যাবে বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ।
লিটল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় যার যুগান্তকারী অবদান, লিটল বাংলাদেশে তাকে বরণ করে নিতে বাংলাদেশী কমিউনিটির আয়োজনের কোনোই কমতি ছিল না।
মুহুর্মুহু করতালি ও স্লোগানমুখর পরিবেশে গোলাপের পাপড়ি ছিটিয়ে অনুষ্ঠানমঞ্চে তাকে স্বাগত জানানো হলে তিনি অভিভূত হয়ে পড়েন।
এরিক গরসিটি তার বক্তব্যে বলেন, ‘আমি রীতিমত অভিভূত। বাংলাদেশের ইতিহাসের সঙ্গে রয়েছে আমার জীবনের ইতিহাসের এক অভূতপূর্ব মিল। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ জন্মলাভ করে, আমার জন্মও ১৯৭১ সালে। বাংলাদেশের বয়স আজ ৪২ বছর, আমার বয়সও ৪২ বছর।’
এরিক গরসিটি বলেন, ‘আরো বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, বাংলাদেশ ও আমার ৪২ বছর বয়সে এসে আমি লস অ্যাঞ্জেলেসের ৪২তম মেয়র! সুতরাং বাংলাদেশ যেন আমার জীবনেরই অবিচ্ছেদ্য অংশ। মনে হচ্ছে, গোটা বাংলাদেশই আমার জন্য এখানে চলে এসেছে।’
মেয়র বলেন, ‘আগেই শুনেছিলাম বেঙ্গল টাইগাররা খুব বন্ধুবত্সল জাতি। আজ আমি সেটার বাস্তব রূপ প্রত্যক্ষ করলাম।’ গরসিটি অচিরেই বাংলাদেশ ভ্রমণের আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
উল্লেখ্য, দুই বছর আগে লিটল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সময় তিনি ছিলেন সিটির প্রভাবশালী কাউন্সিলর। এরপর তিনি মেয়র নির্বাচনে প্রার্থী হলে বাংলাদেশী কমিউনিটি ঐক্যবদ্ধভাবে তার পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া এ সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন লস অ্যাঞ্জেলেসের বাংলাদেশ কনসুলেটের কনসাল জেনারেল মো. এনায়েত হোসেন।
কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে মেয়রকে স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য রাখেন মেয়রের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত প্রভাবশালী কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব মমিনুল হক বাচ্চু, শামীম হোসেন, মজীব সিদ্দিকী, ড. এম এ হাসেম, মারুফ ইসলাম প্রমুখ।
বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মাঝে আরো বক্তব্য রাখেন শামসুদ্দিন আহমেদ মানিক, সলীক সোবহান, নজরুল আলম, ডেনি তাইয়েব, ড. রবি আলম, এম কে জামান, মো. শহীদুল ইসলাম, মাহতাব আহমেদ প্রমুখ।
বিশিষ্ট মূকাভিনেতা কাজী মশহুরুল হুদার মূকাভিনয় এবং কিশোরীদের পরিবেশিত মনোমুগ্ধকর গ্রামীণ ক্লাসিক নৃত্য চিত্তবিনোদনে এক ভিন্নমাত্রা যোগ করে।
দর্শকসারিতে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মাঝে আরো উপস্থিত ছিলেন ড. সিরাজ উল্লাহ, আবুল কাশেম তোহা, মোয়াজ্জেম হোসেন, কর্নেল (অব.) ওমর হুদা, প্রফেসর আলী আকবর, ময়েজ উদ্দিন আহমেদ, জসীন আশরাফী আহমেদ, খন্দকার আলম, মেজর (অব.) এনামুল হামীদ, শফিউল আলম বাবু, আশরাফ হোসাইন আকবর, সাংবাদিক জাহান হাসান, সৈয়দ এম হোসেন বাবু প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে আনিসুর রহমান বাংলাদেশের ওপর নির্মিত একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করেন। সঙ্গীত পরিবেশন করেন বাংলাদেশ থেকে আসা ক্লোজ-আপ ওয়ান বিজয়ী শিল্পী আরেফিন রুমি।