বাবা-মায়ের কবরের পাশে নিজামীর দাফন সম্পন্ন
পাবনার সাঁথিয়াবাসীর কান্না দোয়া ও শ্রদ্ধায় অভিসিক্ত হয়ে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী। পথে পথে শত বাধা বিপত্তি সত্ত্বেও হাজার হাজার মানুষ বাধা উপেক্ষা করে প্রায় ৪ কি:মি: পথ পায়ে হেটে ভোর রাতে জানাযার নামাজে অংশ গ্রহণ করেন। পুলিশি বাধার কারনে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে রাতের অন্ধকারে গ্রামের বিভিন্ন ক্ষেত খামার হয়ে এসে কবরস্থানে জড়ো হতে থাকে। জনতার দাবীর প্রেক্ষিতে কবরস্থান সংলগ্ন একটি ফসলি জমিতে জানাযার নামাজ পড়ার অনুমতি দেয় প্রশাসন। ভোর হতে না হতেই হাজার হাজার এলাকার সাধারণ মানুষ বাধ ভাঙ্গা জোয়ারের পানির মতো গিয়ে মাঠ ভরে চতুর্দিকের কৃষি জমিতে ছড়িয়ে পড়েন জানাযার নামাজে শরীক হওয়ার জন্য।
এর আগে ঢাকা থেকে রওনা দেয়া মাওলানা নিজামীর মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্সটি বুধবার সকাল ৬টা ৩৫ মিনিটে তার নিজ গ্রাম মনমথপুরে গিয়ে পৌঁছায়। এরপর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ডেপুটি জেলার মাজহারুল ইসলাম মাওলানা নিজামীর মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেন। নিজামীর ছেলে ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন পরিবারের পক্ষে লাশটি গ্রহণ করেন। এ সময় মাওলানা নিজামীর ছেলে ডা. নাঈমুর রহমান, পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) সিদ্দিকুর রহমান, সাঁথিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শফিকুল ইসলামসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন। শুধুমাত্র পরিবারের ১০ জনকে মাওলানা নিজামীর মুখ মন্ডল দেখার সুযোগ দেয়া হয়। এর পর আর কোন স্বজন বা সুভাকাংখীদের মুখ দেখার সুযোগ দেয়নি প্রশাসন।
এরপর মনমথপুর কবরস্থান সংলগ্ন কৃষি মাঠে সকাল ৭টায় মাওলানা নিজামীর নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। জানাযা নামাজে ইমামতি করেন নিজামীর ছেলে ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন। জানাযা শেয়ে মনমথপুর কবরস্থানে নিজামীর মরদেহ দাফন করা হয়। জানাযা ও দাফন কাজে অংশ নিতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার সাধারণ মানুষ অংশ গ্রহন করেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) সিদ্দিকুর রহমান জানান, দাফনের পর কবরস্থান এলাকা ও গ্রামের বিভিন্ন স্থানে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছে। আগামী দু’দিন এভাবে মোতায়েন থাকবে পোশাকী ও সাদা পোশাকী আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
রাতে ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ার সাথে সাথে আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা ওই গ্রামটিতে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে। সংবাদ সংগ্রহে গ্রামে প্রবেশে সাংবাদিকদের উপর কড়াকড়ি আরোপ করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। এত ভোগন্তিতে পড়েন গণমাধ্যমকর্মীরা।
অপরদিকে দাফন শেষে দ্বিতীয় বার ওই একই স্থানে সকাল পৌনে ১০ টায় গায়েবানা জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এসময় নামাজের যায়গা সংকুলান না হওয়ায় আশপাশের আখের ক্ষেত, তিলের ক্ষেত, পাটের ক্ষেত ও বেগুনের ক্ষেতের মধ্যে প্রায় প্রায় অর্ধ লক্ষ মানুষ জানাযায় অংশ গ্রহন করেন। ইমামতি করেন পাবনা জেলা জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমীর মাওলানা জহুরুল ইসলাম।
এর পর সকাল ১১ টায় তৃতীয় নামাজে জানাযা ওই একই স্থানে অনুষ্ঠিত হয়। এ নামাজেও হাজার হাজার মানুষ অংশ গ্রহণ করেন। অপরদিকে মনমথপুর থেকে সাঁথিয়া শহরে পর্যন্ত প্রায় ৪ কি:মি: পথ সকাল থেকেই ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এসময় মানুষের ভীড়ের কারনে কোন প্রকার যান বাহন চলাচল করতে দেয়া হয়নি। রাস্তার মোড়ে মোড়ে ও সব কটি রাস্তার প্রবেশ পথে বিপুল সংখ্যাক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।