চার শিক্ষার্থীসহ সারাদেশে বজ্রপাতে নিহত ৩১
রাজধানী ঢাকাসহ, রাজশাহী, নারায়ণগঞ্জ, বগুড়া, পাবনা, পিরোজপু, নাটোন, নওগাঁ, নেত্রকোনা, নরসিংদী, গাজীপুর, হবিগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জ জেলায় বজ্রপাতে ৩১ জনের প্রাণহানি হয়েছে।
ঢাকা: রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে ফুটবল খেলার সময় বজ্রপাতে শাহেদ সোহাগ (২১) ও তাহসিন লিংকন (২৩) নামে দুই যুবকের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় রায়হান নামে আরো একজন আহত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকালে যাত্রাবাড়ী কাঠেরপুল এলাকার কনকর্ড বালুর মাঠে ফুটবল খেলার সময় বজ্রপাতে আহত হয় তারা। পরে তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) নেয়া হলে ৬ টার দিকে সোহাগ ও লিংকনকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
মোহনপুর (রাজশাহী): রাজশাহীর মোহনপুরে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় চারজন আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার বিকালে উপজেলার ধুরইল ইউনিয়নের পুল্লাকুড়ি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন, গোছা গ্রামের রহমত আলী (২৮), হাটরা গ্রামের আব্দুল হাকিম (৫০) ও ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের সত্যেন কুমার সত্য (৩৫)। আহতরা হলেন পুল্লাকুড়ি গ্রামের কামাল (৪৫), মুনাডাঙ্গা গ্রামের জাহানারা (৩৮), ধামিন কৈড় গ্রামের রহিমা খাতুন (৫৫) ও বারউপাড়া গ্রামের আলিমন বেগম (৬৫)।
গোপালদী বাজার (নারায়ণগঞ্জ): মেঘনা নদীতে মাছ ধরার সময় বজ্রপাতে বলরাম দাস (৫০) নামে এক জেলের মৃত্যু হয়েছে। তিনি নরসিংদীর সদর উপজেলার দোয়ানী গ্রামের বাসিন্দা। বৃহস্পতিবার নরসিংদী ও আড়াইহাজারের সীমানা এলাকায় মেঘনা নদীতে এ ঘটনা ঘটে।
শেরপুর (বগুড়া): শেরপুরে বজ্রপাতে আনোয়ার হোসেন নামে একজন নিহত ও ছোটভাই আরিফুল ইসলাম গুরুতর আহত হয়েছে। আরিফুলকে প্রথমে শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হলে সেখানে অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
পাবনা: পাবনার সুজানগর উপজেলার আমিনপুর থানায় পৃথক স্থানে বজ্রপাতের ঘটনায় ২ স্কুল ছাত্র-ছাত্রীসহ ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরা হলো, আহম্মদপুর ইউনিয়নের দক্ষিণচর গ্রামের মৃত রইছ সরদারের ছেলে শহীদ সর্দার (৫৮), সোনাতলা গ্রামের ইউসুফ সেখ ওরফে এছো সেখ এর ছেলে ও বোয়ালিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির ছাত্র হীরা (১৩) এবং রানীনগর ইউনিয়নের বাঘলপুর গ্রামের ময়েন সরদার (৬৫) এবং তার নাতনী মৃত শিরু সরদারের মেয়ে ও বাঘলপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী শিখা খাতুন (১৩)। অপরদিকে জেলার চাটমোহর উপজেলার পাশ্বডাঙ্গা ইউনিয়নের বাউদকান্দি গ্রামের মল্লিক পাড়ার ইমান প্রামানিকের ছেলে ফজলুর রহমান (৪০) এবং মৃত মহির খানের ছেলে ছকির উদ্দিন (৭০) বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা জানান, শহীদ সর্দার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে ক্ষেতে মাঠে পাট কাটতে গিয়ে বজ্রপাতে মারা যান এবং একই সময়ে হীরা মাঠে ঘাস কাটতে গিয়ে বজ্রপাতে মারা যায়। শহীদ সর্দার ঘটনাস্থলেই আর হীরাকে গুরুতর আহত অবস্থায় বেড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যায় মারা যায়। এছাড়া ময়েন সরদার এবং তার নাতনীও বাড়ির পাশে মাঠে গিয়ে বজ্রপাতের কবলে পড়ে মারা যায়।
আমিনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমএম তাজুল হুদা ৩ জনের মৃত্যুর কথা স্বীকার করেন এবং চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুব্রত কুমার দু’জনের মৃত্যু নিশ্চিত করেছেন।
মঠবাড়িয়া (পিরোজপুর): পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় ভারী বর্ষণের সময় বজ্রাঘাতে ইউনুস সিকদার (৬০) নামে এক কৃষক নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার বিকাল চারটার দিকে উপজেলার দাউদখালি ইউনিয়নের বড় হারজী গ্রামে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ সময় নিহত কৃষক ইউনুসের ছোট ভাইয়ের স্ত্রী গৃহবধূ আয়েশা বেগম (৪৫) বজ্রঘাতে গুরুতর আহত হন। আশংকাজনক অবস্থায় তাকে বরিশাল শেরে ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। নিহত কৃষক ইউনুস উপজেলার বড় হাজী গ্রামের মৃত লাল মিয়া সিকদারের ছেলে।
লালপুর (নাটোর): বৃহস্পতিবার বিকালে নাটোরের লালপুর উপজেলায় বজ্রপাতে ২জন নিহত এবং ২জন আহত হয়েছে। নিহতরা হলো- উত্তর লালপুর গ্রামের পঞ্চে আলী শেখের স্ত্রী সাহারা বানু (৩২) এবং রঘুনাথপুর পূর্বপাড়া গ্রামের মোহাম্মদ আলীর পুত্র মোবারক আলী (৩৫)।
নওগাঁ: নওগাঁর আত্রাইয়ে বজ্রপাতে জয়নাল উদ্দিন (৬৫) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। জয়নাল উদ্দিন উপজেলার বিষা উত্তর গ্রামের মৃত ব্যাঙ্গা প্রামাণিকের ছেলে। বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে বজ্রপাতে তিনি মারা যান।
নেত্রকোনা: নেত্রকোনার পূর্বধলায় বৃহস্পতিবার দুপুরে বজ্রপাতে রুবেল মিয়া (২৫) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। সে উপজেলার বিশকাকুনী ইউনিয়নের ধোবারুহী গ্রামের আ: বারেকের ছেলে। এ সময় রুবেলের চাচী রেজিয়া আক্তার বজ্রপাতে আহত হয়
নরসিংদী: নরসিংদী ও রায়পুরা উপজেলায় একই দিনে বজ্রপাতে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। দুপুর ১টার দিকে নরসিংদী সদর উপজেলার মহিষাশুরু ইউনিয়নে মহিষাশুরা গ্রামে আব্দুল করিম (৫০) নামে এক কৃষক বজ্রপাতে মারা যান। একই সময় সদর উপজেলার নজরপুর ইউনিয়নের চম্পকনগর গ্রামে ফুলি বেগম (৩২) নামে এক গৃহবধূ বজ্রপাতে মারা যান। একইদিন দুপুরে রায়পুরা উপজেলার শ্রীনগর ইউনিয়নের ফকিরচর গ্রামে বজ্রপাতে নিহত হয়েছে জ্যোসনা বেগম (৩৮) নামে এক গৃহবধূ।
কাপাসিয়া (গাজীপুর): গাজীপুরের কাপাসিয়ায় বজ্রপাতের দিনমজুর ও এক গৃহবধূ নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলো- কুড়িগ্রাম জেলার কচাকাটা থানার সাতআনা গ্রামের সানাউল্লাহ বেপারীর ছেলে আব্দুস সাত্তার আলী (২৬) এবং গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার সিঙ্গুয়া পশ্চিম পাড়া গ্রামের কাজল মিয়ার স্ত্রী রুবি (৪০)।
হবিগঞ্জ: হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার প্রতাপপুর হাওরে বজ্রপাতে হাবিব মিয়ার (২৫) মৃত্যু হয়েছে। নিহত হাবিব প্রতাপপুর গ্রামের শেখ তাজুল মিয়ার ছেলে। বৃহস্পতিবার বিকালে এ ঘটনা ঘটে।
কিশোরগঞ্জ: কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুর ও বাজিতপুরে বজ্রপাতে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকালে এ বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। হোসেনপুর উপজেলায় নিহত শরীফুল ইসলাম শুভ (১৮) আড়াইবাড়িয়া গ্রামের কৃষক রহমত আলীর ছেলে। সে হোসেনপুর ডিগ্রি কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিল।
অন্যদিকে, বাজিতপুর উপজেলায় বজ্রপাতে স্বপন মিয়া (২০) নামে এক ধানকাটা শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। নিহত স্বপন মিয়া বাহেরনগর গ্রামের মঞ্জু মিয়ার ছেলে।
সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ ও উল্লাপাড়া উপজেলায় বজ্রপাতে নারী ও শিশুসহ ৫ জন নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন, রায়গঞ্জ উপজেলার চকপুর গ্রামের নূর নবীর মেয়ে নূপুর খাতুন (৮), বৈকণ্ঠপুর গ্রামের দারুজ্জামানের ছেলে কৃষক আব্দুল মোতালেব (৪২) ও হাসিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক আনোয়ার হোসেন (৪৫) এবং উল্লাপাড়া উপজেলার শিমলা গ্রামের আব্দুল লতিফ (৩৫) ও বেতুয়া গ্রামের গৃহবধূ শাহিনুর বেগম (৩০)।
উল্লাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেওয়ান কৌশিক আহমেদ বলেন, বৃহস্পতিবার বিকালে বৃষ্টিপাতে দুইজন মারা গেছেন। বিকালে বৃষ্টির সময় হঠাৎ বজ্রপাত হলে শিমলা গ্রামের আব্দুল লতিফ ও বেতুয়া গ্রামের শহিনুর বেগম ঘটনাস্থলেই মারা যান।
অপরদিকে, রায়গঞ্জ উপজেলার পাঙ্গাসী ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মাহে আলম বলেন, বৃহস্পতিবার বিকালে শিশু নূপুর বাড়ির পাশে ইটভাটার কাছে খড়ি কুড়াচ্ছিল। হঠাৎ বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। একই সময় মোতালেব গ্রামের মাঠে গরু আনতে গেলে বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই মারা যায়। এ সময় তার দু’টি গরুও মারা যায়।
অপরদিকে সদর উপজেলার বাগবাটি ইউনিয়নের বেজগাতি গ্রামের বাসিন্দা ও রায়গঞ্জের হাসিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক আনোয়ার হোসেন বজ্রপাতে নিজ মাদ্রাসার মাঠে নিহত হন।