বিশ্ব সাহিত্যের নানা পুরস্কার ও উৎসব
হোসেন মাহমুদ :
ক’ওয়েলথ ছোটগল্প পুরস্কার ঘোষণা ৫ জুন
২০১৬ সালের কমনওয়েলথ ছোটগল্প পুরস্কারের জন্য প্রার্থীদের ৫ জনের সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এবার ৪৭টি দেশের ৪ হাজার প্রতিযোগী কমনওয়েলথ ছোটগল্প পুরস্কার প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। নিয়মানুযায়ী কমনওয়েলথভুক্ত ৫৩টি দেশের ৫টি অঞ্চলের লেখকরাই শুধু এ পুরস্কারের আওতাধীন। এ পাঁচটি অঞ্চল হচ্ছে: আফ্রিকা, এশিয়া, কানাডা ও ইউরোপ, ক্যারিবিয়ান ও প্রশান্ত মহাসাগর। সংক্ষিপ্ত তালিকায় প্রতিটি অঞ্চল থেকে একজন করে প্রতিযোগী মনোনয়ন করা হয়েছে এবং তাদের মধ্য থেকে একজন চূড়ান্ত বিজয়ী হবেন। তিনি পাবেন ৫ হাজার পাউন্ড বা সাড়ে ৭ হাজার মার্কিন ডলার। সংক্ষিপ্ত তালিকার বাকি ৪ জন ২৫০০ পাউন্ড করে পাবেন। সংক্ষিপ্ত তালিকাধীন গ্রন্থগুলো যদি অন্য ভাষা থেকে অনূদিত হয়ে থাকে তাহলে সে অনুবাদকরাও সমপরিমাণ অর্থ পাবেন। আগামী ৫ জুন জ্যামাইকায় ক্যালাবাশ আন্তর্জাতিক সাহিত্য উৎসবে কমনওয়েলথ ছোটগল্প পুরস্কার প্রাপ্ত লেখকের নাম ঘোষণা করা হবে।
পুরস্কার কমিটির সভাপতি হচ্ছেন দক্ষিণ আফ্রিকার ঔপন্যাসিক ও নাট্যকার গিলিয়ান সলভো। কমিটিতে প্রত্যেক অঞ্চল থেকে একজন করে বিচারক রয়েছেন। তারা হচ্ছেন: হেলন হাবিলা (আফ্রিকা), ফিরদৌস আজিম (এশিয়া), পিয়েরে মেজলাক (কানাডা ও ইউরোপ), ওলিভ সিনিয়র (কানাডা) ও প্যাট্রিক হলান্ড (প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চল)।
৪ মে সংক্ষিপ্ত তালিকায় থাকা ৫ জনের নাম ঘোষণা করা হয়। তারা হলেন: ১. ফারাজ মোহাম্মদ (‘দি পিজিয়ন’)-আফ্রিকা; ২. পরাশর কুলকার্নি (‘কাউ অ্যান্ড কোম্পানি’)-এশিয়া; ৩. স্টেফানি সেডন (‘ঈল’)-কানাডা ও ইউরোপ; ৪. ল্যান্স ডাওরিচ (‘এথেলবার্ট অ্যান্ড দি ফ্রি চীজ)-ক্যারিবিয়ান ও ৫. টিনা ম্যাকারেটি (‘ব্ল্যাক মিল্ক’)- প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চল। এ লেখকদের মধ্যে ফারাজ মোহাম্মদ এক মনোচিকিৎসক ও মানবাধিকার কর্মী। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গ বাস করেন। পরাশর কুলকারনি সিঙ্গাপুরের ইয়েল এনইউএস কলেজের সমাজ বিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক। স্টেফানি সেডনের জন্ম ও বেড়ে ওঠা নিউজিল্যান্ডে। বর্তমানে তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএ পড়ছেন। ল্যান্স ডাওরিচ ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর একটি মাধ্যমিক-উত্তর কারিগরি স্কুলের প্রিন্সিপাল ও সিইও। টিনা ম্যাকারেটি নিউজিল্যান্ডে বাস করেন। তিনি প্রবন্ধ, উপন্যাস ও ছোটগল্প লেখেন।
গেভিন ম্যাককেরা ডেসমন্ড এলিয়ট পুরস্কারের সংক্ষিপ্ত তালিকায় ৩ জন
আয়ারল্যান্ডের মর্যাদাজনক ডেসমন্ড এলিয়ট সাহিত্য পুরস্কারের সংক্ষিপ্ত তালিকায় উঠে আসা তিন প্রতিযোগী লেখকের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। ব্রিটিশ ও আইরিশ লেখকদের ১০ জনের দীর্ঘ তালিকা থেকে তিন জনের এ সংক্ষিপ্ত তালিকা করা হয়েছে। তারা হলেন: ১. লিসা ম্যাকআইনার্নি (‘দি গ্লোরিয়াস হেয়ারসিস’), ২.গেভিন ম্যাককেরা ( মিসেস ইঙ্গেলস) ও ৩. জুলিয়া রচেস্টার (‘দি হাউজ অব দি এজ অব দি ওয়ার্ল্ড’)।
বিচারকম-লীর চেয়ারম্যান আয়েন পিয়ারস বলেন, এ গ্রন্থগুলো তিনজন প্রতিভাবান লেখকের ব্যাপক ভাবে উচ্চাকাক্সক্ষী, জটিল ও আত্মবিশ্বাসী সাহিত্য কর্ম। ডেসমন্ড এলিয়ট পুরস্কার ব্যাপক সংখ্যক পাঠকের কাছে তাদের পৌঁছে দেয়ার জন্য কাজ করছে যা তাদের প্রাপ্য। গার্ডিয়ান প্রথম গ্রন্থ পুরস্কার বিলুপ্ত হওয়ার প্রেক্ষিতে এ পুরস্কারটি নতুন লেখকদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
লিসা ম্যাকআইনার্নির ‘দি গ্লোরিয়াস হেয়ারসিস’ সম্পর্কে তিনি বলেন, তিনি আমাদের প্রকৃত আবেগময় পশ্চাৎভূমিসহ শক্তিশালী, জটিল কর্মজীবী শ্রেণীর চরিত্র উপহার দেন এবং এক অসাধারণ অত্যাধুনিক পন্থায় পাঠকের আবেগ নিয়ে খেলা করেন।
তিনি ‘মিসেস ইঙ্গেলস’ প্রসঙ্গে বলেন, ম্যাককেরা অত্যন্ত সুন্দর শৈল্পিক দৃশ্য ফুটিয়ে তুলতে চাতুর্যের সাথে পর্যাপ্ত ঐতিহাসিক বিবরণ অন্তর্ভুক্ত করেছেন , তারপর তার চরিত্রগুলোকে দিয়ে গল্প বলান। এ উপন্যাসটি সম্ভবত এ পুরস্কারের জন্য উপস্থাপিত আমাদের পঠিত সর্বাপেক্ষা নারীবাদী উপন্যাস।’
জুলিয়া রচেস্টার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তার লেখা অত্যন্ত চমৎকার। তিনি তার ঘটনাস্থল সম্পর্কে গভীর জ্ঞান রাখেন। তিনি তার উপন্যাসের চরিত্রগুলোর মতই নিসর্গকেও জীবন্ত করে তোলেন। উপন্যাসের প্রধান ক্ষেত্রগুলোতে আমরা তাদের সাথে নিজেদের অনুভব করি।
উল্লেখ্য, লেখকদের প্রথম উপন্যাসের জন্যই শুধু এ পুরস্কার দেয়া হয়ে থাকে। পরলোকগত আইরিশ প্রকাশক ও সাহিত্য এজেন্ট ডেসমন্ড এলিয়টের নামে এ পুরস্কারের প্রবর্তন করা হয়। এ পুরস্কারের অর্থমূল্য ১০ হাজার পাউন্ড (১৫ হাজার মার্কিন ডলার)। আগামী ২২ জুন চূড়ান্ত পুরস্কার বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে। ২০১৪ সালে ইমিয়ার ম্যাকব্রাইড ও ২০১৫ সালে ক্লেয়ার ফুলার এ পুরস্কার লাভ করেন।
সানডে টাইমস ইএফজি ছোটগল্প পুরস্কার
সানডে টাইমস ছোটগল্প পুরস্কার হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে দামি ছোটগল্প প্রতিযোগিতা পুরস্কার। একটি ছোটগল্পের জন্য এ পুরস্কার দেয়া হয়। ইএফজি প্রাইভেট ব্যাংক লি: এর সাবেক চেয়ারম্যান লর্ড ম্যাথু ইভান্স ও সানডে টাইমসের ক্যাথি গিভান্স ২০০৯ সালে এ পুরস্কারের প্রবর্তন করেন। এর মূল্যমান ৩০ হাজার পাউন্ড (৪৫ হাজার মার্কিন ডলার)। তবে সংক্ষিপ্ত তালিকায় আসা লেখকরা প্রত্যেকে ১ হাজার পাউন্ড করে পাবেন। আধুনিক ছোটগল্পের মান ও উৎকর্ষ বৃদ্ধির জন্য এ পুরস্কার দেয়া হয়। বিশ্বের যে কোনো ঔপন্যাসিক ও ছোটগল্পকার ইংরেজি ভাষায় লেখা গল্প নিয়ে এ প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারেন। সর্বোচ্চ ৬ হাজার শব্দের মধ্যে গল্পটি লিখিত হতে হবে।
‘হিউম্যান ফনোগ্রাফ’ গল্পের জন্য ২০১৬ সালের সানডে টাইমস ছোটগল্প পুরস্কার লাভ করেছেন জোনাথান টেল। গত ১৪ এপ্রিল লন্ডনে এ পুরস্কার বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হয়। তার প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আমেরিকার ২৫০টি ছোটগল্পের লেখক এডিথ পার্লম্যান, ট্রান্সআটলান্টিকের লেখক ম্যানবুকার পুরস্কারের দীর্ঘ তালিকায় থাকা আয়ারল্যান্ডের কলাম ম্যাককান, গার্ডিয়ান প্রথম গ্রন্থ পুরস্কার প্রাপ্ত লেখক ও ২০১৬ সালে বেইলিজ পুরস্কারের দীর্ঘ তালিকাভুক্ত লেখক জিম্বাবুয়ের পেটিনা গাপপাহ, আমেরিকান লেখক অ্যালিক্স ক্রিস্টি ও কানাডার ঔপন্যাসিক নিকোলাস রাডক।
জোনাথান টেল তার এ গল্পের কাহিনী চীনের কিংহাইতে একটি রহস্যময় কারখানা ২২১-এর পটভূমিতে স্থাপন করেছেন এবং স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন যাদের মধ্যে সাত বছর সাক্ষাৎ নেই।
২০১৫ সালে চীনা আমেরিকান মহিলা লেখক ইইয়ুন লি তাঁর ছোটগল্প ‘শেল্টারড উইমেন’-এর জন্য এ পুরস্কার লাভ করেন।
জ্যামাইকায় কালাবাশ আন্তর্জাতিক সাহিত্য উৎসব ৩-৫ জুন
সময় এসে গেছে প্রায়। এবার ৩ থেকে ৫ জুন ক্যারিবীয় অঞ্চলের দ্বীপ রাষ্ট্র জ্যামাইকাতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কালাবাশ আন্তর্জাতিক সাহিত্য উৎসব। সর্বশেষ ২০১৪ সালের ৩০ মে থেকে ১ জুন এ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছিল। দেশের দক্ষিণ উপকূলে ট্রেজার বেঞ্চ নামক গ্রামে দু’বছরে একবার এ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। জ্যামাইকার কবি কোয়ামে ডাওয়েস ও চলচ্চিত্র প্রযোজক কাস্টিন হেনজেলের সমর্থনে ঔপন্যাসিক কলিন চ্যানার ২০০১ সালে এ উৎসব চালু করেন। ইতিমধ্যে এটি বিশ্বের প্রধান এক সাহিত্য উৎসবে পরিণত হয়েছে নোবেল বিজয়ী কবি-সাহিত্যিকরাসহ এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপসহ বিশ্বের সকল প্রান্ত থেকে লেখকরা স্বেচ্ছায় এতে যোগ দিয়ে থাকেন। বিভিন্ন সময়ে যেসব বিখ্যাত লেখক এ উৎসবে যোগ দেন তাদের মধ্যে ছিলেন জেডি স্মিথ, কলাম ম্যাককান, নোবেল বিজয়ী ওল সোয়িংকা ও ডেরেক ওয়ালকট, জুনট ডায়াজ, এলিজাবেথ আলেজান্ডার, রাসেল ব্যাংকস, শ্যারন ওল্ডস প্রমুখ। কালাবাশ ইন্টারন্যাশনাল লিটারারি ফেস্টিভ্যাল ট্রাস্ট এ উৎসবের আয়োজন করে থাকে। এতে যোগ দেয়ার জন্য কোনো শর্ত নেই। সাহিত্যপ্রেমী সকলের অংশগ্রহণের জন্যই তা উন্মুক্ত। অনুষ্ঠানের মধ্যে থাকে সেমিনার, লেখার ওয়ার্কশপ ও কবিতা পাঠ। ইংরেজিভাষী ক্যারিবীয় অঞ্চলের এটিই একমাত্র আন্তর্জাতিক সাহিত্য উৎসব। সূত্র ইন্টারনেট।