প্রযুক্তি দুনিয়ায় জন ম্যাকাফি
আহমেদ ইফতেখার: জনপ্রিয় অ্যান্টিভাইরাস ম্যাকাফির প্রতিষ্ঠাতা জন ম্যাকাফি বৈশ্বিকভাবে নানা কারণে আলোচিত। মার্কিন চিপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ইন্টেলের কাছে নিজের প্রতিষ্ঠিত অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার কোম্পানি ৭৬৮ কোটি ডলারে বিক্রির পর সাইবার বা প্রযুক্তি বিশ্বে খুব একটা উপস্থিতি ছিল না জন ম্যাকাফির। তবে গত কয়েক বছরে একাধিকবার খবরের শিরোনাম হয়েছেন ম্যাকাফি।
সম্প্রতি এমজিটি ক্যাপিটাল ইনভেস্টমেন্টের চেয়ারম্যান এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে ম্যাকাফির নাম ঘোষণা করা হয়েছে। দীর্ঘ পাঁচ বছর পর আবার প্রযুক্তি খাতে আসছেন তিনি। মূলত এমজিটি ক্যাপিটাল ইনভেস্টমেন্ট মোবাইল গেমিং কোম্পানি। অর্থাৎ মোবাইল গেম উন্নয়ন ও সরবরাহ করে এ প্রতিষ্ঠান; যা সাইবার নিরাপত্তা খাতে ব্যবসায় সম্প্রসারণে আগ্রহী। ইংল্যান্ডে জন্মগ্রহণকারী ব্রিটিশ-আমেরিকান এ কম্পিউটার প্রোগ্রামার ও সফটওয়্যার ডেভেলপারের সহায়তায় সাইবার খাতে সাফল্য পেতে চায় প্রতিষ্ঠানটি। এমজিটির লক্ষ্য বাস্তবায়নে ম্যাকাফিকে চেয়ারম্যান এবং সিইও হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
ম্যাকাফি জানিয়েছে, বৈশ্বিক প্রযুক্তি খাতে সাইবার নিরাপত্তা এখন আলোচিত বিষয়। সাইবার অপরাধের ঘটনা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান এসব অপরাধের শিকার হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। এমনকি খোদ প্রযুক্তি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোও এ ধরনের হামলা থেকে রেহাই পাচ্ছে না। সাইবার অপরাধীদের কারণে নষ্ট হচ্ছে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো নিয়মিত নজরদারি করছে। এ পরিস্থিতিতে একটি শক্তিশালী সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান অত্যাবশ্যকীয় হয়ে পড়েছে। ডি-ভাসিভের প্রযুক্তি ব্যবহার করে এমনই এক সাইবার নিরাপত্তা কোম্পানি প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন তিনি। সাইবার জগতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নতুন প্রতিষ্ঠানের অধীনে বিজ্ঞ ও চতুর কর্মী নিয়োগপ্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার আশাবাদ ব্যক্ত করেন ম্যাকাফি।
জন ম্যাকাফি, অ্যান্টিভাইরাস কোম্পানির পাশাপাশি ফিউচার টেনস সিকিউর সিস্টেমস ইনকরপোরেশনেরও প্রতিষ্ঠাতা। এটি একটি সিকিউরিটি এবং প্রাইভেসি কোম্পানি, যা ডি-ভাসিভসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে অ্যাপস সরবরাহ করে। অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার ম্যাকাফি দিয়ে জন ম্যাকাফির উত্থান। তা সত্ত্বেও কিছু দিন আগে অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার থেকে নিজেকে আড়াল রাখতে চেয়েছিলেন তিনি। কারণ অ্যান্টিভাইরাস ও ম্যাকাফি অনেকটা সমার্থক শব্দ হয়ে উঠেছিল। বিষয়টি ঘিরে বিরক্ত ছিলেন ম্যাকাফি। এমনকি নিজের উন্নয়নকৃত সফটওয়্যারকে বিশ্বের সবচেয়ে ‘জঘন্যতম পণ্য’ হিসেবে অ্যাখ্যায়িত করেছিলেন। কিছুদিন আগে বিনামূল্যের সফটওয়্যার ব্যবহার নিয়ে মন্তব্য করেও আলোচনায় এসেছিলেন ম্যাকাফি। তার মতে, বিনামূল্যে বলতে জীবনে কিছু নেই। বিনিময়ে জ্ঞাত বা অজ্ঞাতসারে আপনাকেও কিছু দিতে হয়। বিনামূল্যের অ্যাপ ব্যবহারের মাধ্যমে নিজের ব্যক্তিগত তথ্য অন্যের হাতে তুলে দেয়ার মতো বিপজ্জনক কাজটি হচ্ছে।
সাইবার খাতে ব্যবসায় সম্প্রসারণে স্পাইওয়্যার নির্মাতা ডি-ভাসিভ ইনকরপোরেশনের প্রযুক্তি এবং অন্যান্য সম্পদ অধিগ্রহণ করেছে এমজিটি ক্যাপিটাল ইনভেস্টমেন্ট। এ ছাড়া কোম্পানির নাম পরিবর্তন করে ‘জন ম্যাকাফি গ্লোবাল টেকনোলজিস ইনকরপোরেশন’ করার কথাও ভাবা হচ্ছে। ডি-ভাসিভ বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যার সরবরাহ করে থাকে। বিশেষত ম্যালওয়্যার বা ক্ষতিকর অ্যাপ্লিকেশন থেকে ডিভাইস গ্রাহকদের তথ্য সুরক্ষা দিতে সফটওয়্যার সরবরাহ করে এ প্রতিষ্ঠান। এর সফটওয়্যার ডিভাইসের ক্যামেরা, মাইক্রোফোন, ব্লুটুথ অথবা ইন্টারনেট সংযোগে অ্যাক্টিভ করা যায়।
এমজিটি ক্যাপিটালের বর্তমান বাজারমূল্য ৮০ কোটি ডলার। একাধিক মোবাইল ও অনলাইন গেমিং সাইট পরিচালনা করে এ প্রতিষ্ঠান। জন ম্যাকাফির নেতৃত্বে সাইবার কোম্পানিতে রূপান্তরিত এমজিটি কতটা সফল হয়, তা দেখতে এখন শুধু অপেক্ষার পালা।
ম্যাকাফি ভক্তদের জন্য আশার খবর হলো ‘এভারকি’ নামের নতুন একটি ডিভাইস বাজারে আনার পরিকল্পনা করছে জন ম্যাকাফি। নতুন এই সিকিউরিটি ডিভাইসটি দিয়েই প্রযুক্তিপণ্যের বাজারে ফিরতে চাইছেন বিতর্কিত এই সফটওয়্যার প্রকৌশলী। নতুন এই সিকিউরিটি ডিভাইসকে ‘গেইম চেঞ্জার’ বলে আখ্যা দিয়েছেন জন ম্যাকাফি। ‘এভারকি’ নামের নতুন ওই ডিভাইসটির মাধ্যমে মোবাইলফোন, বিভিন্ন ওয়েবসাইট এমনকি দরজার ডিজিটাল লকও খোলা যাবে। ছোট ওই গ্যাজেটটি পকেটে রেখে ডিভাইসের কাছে গেলে সেটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে আনলক হয়ে যাবে। আবার ডিভাইস নিয়ে দূরে সরে গেলে সেটি আবার লক হয়ে যাবে। মোবাইল, ল্যাপটপ এবং দরজার ডিজিটাল লকের সাথে কোনো তার ছাড়াই সংযোগ স্থাপন ছাড়াও ডিভাইসটি একগাদা পাসওয়ার্ড মনে রাখার বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি দেবে।