ভাষাসৈনিক প্রবীণ সাংবাদিক সাদেক খান আর নেই
একুশে পদকপ্রাপ্ত ভাষাসৈনিক, প্রবীণ সাংবাদিক, কলামিস্ট ও শিল্প সমালোচক সাদেক খান আর নেই। গতকাল সোমবার রাজধানীর বারিধারার বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিলো ৮৪ বছর। তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে ও দুই মেয়ে ছাড়াও অসংখ্য সহকর্মী, গুণগ্রাহী-শুভাকাংক্ষী রেখে গেছেন। এদিকে আজ মঙ্গলবার তার দাফন সম্পন্ন হবে।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের স্থায়ী সদস্য ও প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ (পিআইবি)-এর সাবেক চেয়ারম্যানের মৃত্যুতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর মকবুল আহমাদ, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাবেক তথ্যমন্ত্রী এম শামসুল ইসলাম, তরিকুল ইসলাম এবং বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আলাদা আলাদা শোক বাণী দিয়েছেন। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সামছুদ্দিন হারুন, মহাসচিব এম আবদুল্লাহ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি আবদুল হাই শিকদার ও সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধান এক যুক্ত শোক বিবৃতিতে তার মৃত্যুতে দেশ ও জাতির অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া জাতীয় প্রেস ক্লাবর সভাপতি, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক দল, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি), চাঁদপুর সাংবাদিক ফোরাম, ঢাকা ও বরিশাল বিভাগ সমিতি শোক জানিয়েছে।
মরহুমের গাড়ি চালক নজরুল ইসলাম জানান, বেলা ১১টার দিকে তিনি গোসল করতে বাথরুমে ঢোকেন। এরপর দীর্ঘ সময় সাড়া না পেয়ে বেলা ১২টার দিকে দরজা ভেঙে তাকে বাথরুমের ভেতরে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। পরে তাকে গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
পারিবারিক সূত্র জানায়, আজ সকাল ১০টায় তাঁর লাশ শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য জাতীয় প্রেসক্লাবে আনা হবে এবং বাদ জোহর গুলশান আজাদ মসজিদে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এর পর তাকে বনানীতে তার পিতার কবরে সমাহিত করার কথা রয়েছে।
সাদেক খানের কর্মময় জীবন ছিল বর্ণাঢ্য। তিনি ছিলেন পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক। গত শতকের পঞ্চাশের দশকে দৈনিক সংবাদে সাংবাদিকতা শুরু করা সাদেক খান বিভিন্ন পত্রিকায় কলাম লিখেছেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি ইংরেজি সাপ্তাহিক ‘হলিডে’তে লিখেছেন। সংবাদপত্রে কাজ করার পর তরুণ বয়সে চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন তিনি। তার ‘নদী ও নারী’ সিনেমাটি মুক্তি পায় ষাটের দশকে। রাজনৈতিক দর্শনে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর অনুসারী সাদেক খান ২০১২ সালে ‘বাংলাদেশ গণশক্তি দল’ নামে নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দেন।
ষাটের দশকে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের স্পিকারের দায়িত্ব পালন করা বিচারপতি আবদুল জব্বার খানের ছেলেমেয়েদের মধ্যে সাদেক খানই ছিলেন সবার বড়। তাদের গ্রামের বাড়ি বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলায়।
সাদেক খানের ভাই-বোনদের মধ্যে কবি আবু জাফর মুহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ খান কৃষি মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। আরেক ভাই এনায়েতুল্লাহ খান ছিলেন সাপ্তাহিক হলিডে ও ইংরেজি দৈনিক নিউ এজ এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। বিভিন্ন দেশে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্বও পালন করেন তিনি। ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী। রাশেদ খান মেননও তার ছোটভাই। বোন সেলিমা রহমান বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী। ব্যবসায়ী শহীদুল্লাহ খান তার আরেক ভাই, যিনি ঢাকা ব্যাংকের একজন পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
বিলুপ্ত দৈনিক আজাদের প্রধান প্রতিবেদক শেখ রকিব উদ্দিন (৮৪) বলেন, সাদেক ভাইকে আমি খুব কাছাকাছি থেকে দেখিছি। তিনি ছিলেন বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী। কেবল সাংবাদিকতা নয়, চলচ্চিত্রসহ বিভিন্ন অঙ্গনে তিনি প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে গেছেন।