ব্রিটেনের বাংলাদেশী কমিউনিটিতে বাড়ছে ক্যান্সারের ঝুঁকি
সচেতনতার অভাবে ব্রিটেনে থাকা বাংলাদেশী কমিউনিটির মধ্যে বাড়ছে ক্যান্সারের ঝুঁকি। যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্যান্সার রিসার্চ ইউকে’র এক গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে। ওই গবেষণায় দেখা গেছে, ব্রিটেনে থাকা জাতিগত সংখ্যালঘুদের মধ্যে বিশেষ করে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানী কমিউনিটিতে ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। আর এর নেপথ্যে রয়েছে সচেতনতার অভাব।
ক্যান্সার রিসার্চ ইউকে’র গবেষণায় দেখা গেছে ব্রিটেনে অন্য যেকোন রোগের তুলনায় ক্যন্সারে মৃত্যুর ঝুঁকি সবচেয়ে বেশী। প্রতি বছর ব্রিটেনে ক্যান্সার কেড়ে নিচ্ছে ১ লাখ ৬০ হাজার মানুষের জীবন। প্রতি দুইজনের মধ্যে একজন তার জীবনের যে কোনও সময়ে ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন। অবশ্য এর বিপরীতে আশার কথাও রয়েছে। ক্যান্সার নিয়ে গবেষণার ফলে, বিগত যে কোন সময়ের চেয়ে ক্যান্সার আক্রান্তরা এখন দ্রুত সুস্থ্য হয়ে উঠছেন। তবে এর বিপরীতেই দক্ষিণ এশিয়ার জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে নিয়ে (ভারত-পাকিস্তান-বাংলাদেশী কমিউনিটি) উদ্বেগ প্রকাশ পেল ওই গবেষণায়। গবেষণা প্রতিবেদন থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বিগত ১২ বছরে দক্ষিণ এশিয়ার পুরুষদের মধ্যে ক্যান্সার আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে ২৮ শতাংশ। নারীদের মধ্যে ওই বৃদ্ধির হার ২৪ শতাংশ।
বাংলাদেশী কমিউনিটির ক্যান্সার ঝুঁকি বৃদ্ধির নেপথ্যে সচেতনতার অভাবকেই কারণ হিসেবে শনাক্ত করেছেন গবেষকরা। গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী দক্ষিণ এশিয়ার ১৫ শতাংশ নারী অন্যান্য দেশের তুলনায় স্তন ক্যান্সার শনাক্তকরণ পরীক্ষায় পিছিয়ে আছেন। এদিকে ক্যান্সার রির্সাচ ইউকের বিজ্ঞানী নিউক্যাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ডক্টর মার্টিন হোয়াইটের অপর এক গবেষণায় দেখা যায়, ব্রিটেনে বাংলাদেশী কমিউনিটির অর্ধেক সংখ্যক পুরুষই সিগারেট খান এবং তারা শ্বেতাঙ্গ ধূমপায়ীদের তুলনায় ২০ শতাংশ বেশি ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। অনেকেই মনে করেন সিগারেট যতটা ক্ষতিকর শিসা সেই অনুপাতে ক্ষতি করে না। কিন্তু গবেষকরা বলছেন শিসা কিংবা ধোঁয়া বিহীন ইলেকট্রিক সিগারেটও ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
কেবল ধূমপান নয়, ক্যান্সার সম্পর্কে কমিউনিটিতে নেতিবাচক ধারণা ও সামাজিক প্রতিবন্ধকতার কারণে অনেকেই ক্যান্সারের মতো জটিল রোগের কথা বলতে চান না। কখনও কখনও এমন সময় রোগ সনাক্ত হয় যখন নিরাময় প্রায় অসম্ভব।
এদিকে ক্যান্সার সম্পর্কে ব্রিটিশ বাংলাদেশী কমিউনিটির মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে ক্যান্সার রিসার্চ ইউকে ইস্ট লন্ডন গ্রুপের যাত্রা শুরু হয়েছে বৃহস্পতিবার। মঙ্গলবার সেন্ট্রাল লন্ডনের এঞ্জেলে ক্যান্সার রিসার্চ ইউকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত প্রেস লঞ্চিং ইভেন্টে ক্যান্সার রিসার্চ ইউকের ইস্ট লন্ডন গ্রুপের চেয়ারপার্সন মোহাম্মদ শামসুল ইসলাম বলেন, ‘ব্রিটেনে বাংলাদেশী কমিউনিটির মধ্যে ক্যান্সার সম্পর্কে ভীতি দূর করে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য কাজ করবে ক্যান্সার রিসার্চ ইউকে ইস্ট লন্ডন গ্রুপ।’ সে সময় ক্যান্সার সম্পর্কে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ক্যান্সার রিসার্চ ইউকে‘র লন্ডন ফান্ড রেইজিং ম্যানেজার স্টেসি উইলসন, রিজিওনাল ম্যানেজার জেনি ফ্লেক, ক্যান্সার রিসার্চ ইউকে ইস্ট লন্ডন গ্রুপের জেনারেল সেক্রেটারি বিলাল আলী, ট্রেজারার এন এ রাসেল সহ অন্যরা। আলোচনায় বক্তারা জানান, বর্তমান বিশ্বে প্রায় ২০০ প্রজাতির ক্যান্সার রয়েছে। তবে শুধুমাত্র জীবনযাত্রার মান পরিবর্তন করেই ৪০ শতাংশ ক্যান্সার প্রতিরোধ সম্ভব বলে জানান তারা। তারা জানান, এ বিষয়ে প্রাথমিকভাবে ব্রিটিশ বাংলাদেশী কমিউনিটিতে সচেতনতা বাড়াতে উদ্যোগ নেবে ক্যান্সার রিসার্চ ইস্ট লন্ডন গ্রুপ।