মালয়েশিয়ায় অবৈধ শ্রমিক ধরতে শুরু হচ্ছে বড় অভিযান

মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত অবৈধ শ্রমিকদের ধরে দেশে ফেরত পাঠাতে দেশটি রবিবার থেকে একটি বড় অভিযান শুরু করতে যাচ্ছে। দেশটির স্বরাষ্ট মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, কুয়ালামপুর, সেলাংগর, পেনাংসহ শ্রমিক প্রধান এলাকাগুলোতে এই অভিযান হবে। বলা হচ্ছে, এটাই সামপ্রতিক সময়ের অবৈধ শ্রমিক ধরার সবচাইতে বড় অভিযান।
মালয়েশিয়া ভিত্তিক একটি গবেষণা সংস্থা ক্যারাম এশিয়া বলছে, দেশটিতে অবৈধ শ্রমিকদের মধ্যে বাংলাদেশ এবং ইন্দোনেশিয়ার লোকদের সংখ্যাই বেশি। তবে বাংলাদেশ সরকার বলছে, মালেয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকদেও বেশিরভাগই সমপ্রতি বৈধ হওয়ার সুযোগ নিয়েছেন এবং বিষয়টিতে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।
এদিকে বড়সড় ধরপাকড়ের খবরে আতঙ্কে রয়েছেন সেখানকার অবৈধ শ্রমিকরা।
কুয়ালালামপুরের কাছেই ক্লাং শহরে একটি আসবাবপত্রের দোকানে কাজ করেন বাংলাদেশের গাজীপুরের মোহাম্মদ দানিশ। তিনি জানালেন, রবিবারের সরকারি অভিযানের খবর শুনে এখন আতঙ্কে আছেন।
বৈধতার জন্য সব রকম চেষ্টা চালিয়েছি। বৈধতার পার্মিট তো হয়নি বরং উল্টো পুলিশ এখন আমাদের খুঁজছে। আমরা এখন কোথায় যাবো, কী করবো? আমরা একটা আতঙ্কের মধ্যে আছি।
তিনি বলেন, অবৈধ শ্রমিকরা ইতোমধ্যেই অনেকে পালিয়ে আছেন। তবে খেয়ে-পরে বেঁচে থাকতে ঝুঁকি নিয়ে তাদের কাজে আসতেই হচ্ছে।
মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সমপ্রতি সংবাদ মাধ্যমে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, বৈধ কাগজপত্র ছাড়া কোনো শ্রমিককে তারা দেশটিতে কর্মরত চান না। আর তাই তারা এই অভিযানে নামতে যাচ্ছেন।
বাংলাদেশ সরকারের হিসেব মতে, মালয়েশিয়ায় মোট ৫ লাখের মতো বাংলাদেশি শ্রমিক কর্মরত আছেন, যাদের বড় একটি অংশ বৈধতার জন্য সেদেশের সরকারের দেয়া সুযোগ ইতোমধ্যেই কাজে লাগিয়েছেন। বাকি ৩০ থেকে ৪০ হাজারের মতো শ্রমিক এই সুযোগ নিতে ব্যর্থ হয়ে এখনো অবৈধ অবস্থায় দেশটিতে রয়েছেন বলে জানিয়েছে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাই কমিশন।
তবে এশিয়ার অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করে এমন সংগঠন ক্যারাম এশিয়া বলছে, এই সংখ্যা ২ লাখের মতো। কুয়ালালামপুরে সংগঠনটির আঞ্চলিক সমন্বয়কারী হারুনুর রশিদ বলেন, বৈধতার জন্য কাগজপত্র নিয়ে একটি মধ্যস্বত্বভোগী গোষ্ঠীর কাছে গিয়েই বিপাকে পড়েছেন এই শ্রমিকরা।
দেশটিতে এখনো নানা কাজে বিদেশি শ্রমিক প্রয়োজন হয়। কেন মালয়েশিয়া সরকার অভিবাসীদেও দেশে ফেরত পাঠাতে এমন অভিযানে নামছে তা সঠিক বোঝা যাচ্ছে না। তবে হতে পারে দেশটিতে ইদানিং নানা ধরনের অপরাধ বাড়ছে আর তাতে অভিবাসীদের প্রায়ই দায়ী করা হয় বলেই হয়তো মালয়েশিয়া সরকার অবৈধ শ্রমিকদের সংখ্যা কমাতে চাইছে।
এসব অবৈধ শ্রমিকদের ধওে দেশে পাঠাতে মালয়েশিয়ার সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দেড় লাখের মতো সদস্যদের নিয়ে একটি দল গঠন করেছে।
রবিবার থেকে যাদের আটক করা হবে, তাদের ১৪ দিন সময় দেয়া হবে বৈধ কাগজ হাজির করতে। তা না পারলে আটকদের জায়গা হবে দেশটির ১২টি ডিটেনশন সেন্টারে। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের লেবার কাউন্সিলর মন্টু কুমার বিশ্বাস বলেন, ডিটেনশন সেন্টারে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তাদেও তেমন কিছু করার নেই, তবে তারপর থেকে তাদেও দেশে ফিরতে সহায়তা করতে পারেন তারা।
প্রথমে তাদেও ট্রাভেল পারমিট দেয়া হয়। দেশে আত্মীয়দের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ কওে দেয়া হয় যাতে করে তারা প্লেনের টিকেটের অর্থ সংগ্রহ করতে পারেন।
দেশটিতে অবৈধভাবে বাংলাদেশি শ্রমিকদেও প্রবেশ ঠেকাতে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া সরকার এক সমঝোতায় পৌঁছায়, যার আওতায় বাংলাদেশ সরকার এখন শুধুমাত্র সরকারিভাবেই মালয়েশিয়ায় শ্রমিক প্রেরণ করছে। কিন্তু যারা এখনো অবৈধভাবে সেখানে রয়ে গেছেন তাদের পুনরায় বৈধতার সুযোগ তৈরির চেষ্টা হবে কিনা সে ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে আপাতত কোনো পদক্ষেপ নেই।
তবে বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী জানিয়েছেন, এই বড় ধরপাকড়ে বাংলাদেশের শ্রমিকদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।
মালয়েশিয়ায় শ্রমিক অধিকার সংগঠনের উদ্বেগ : মালয়েশিয়ায় অবৈধ শ্রমিকদের বিরুদ্ধে নতুন অভিযানের সম্ভাবনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিভিন্ন শ্রমিক অধিকার সংগঠন।
কুয়ালালামপুর ভিত্তিক সংগঠন টেনাজানিটা বৃহস্পতিবার এ নিয়ে একটি সংবাদ সম্মেলন করেছে। এই সংগঠনের কর্মকর্তা আইরিন ফার্নান্দেজ বলেছেন, বহু বাংলাদেশি শ্রমিক বৈধ হওয়ার জন্য দালালের মারফত অর্থ জমা দিয়ে প্রতারিত হয়েছেন।
বিপুল সংখ্যক শ্রমিককে ভুল ভিসা দিয়ে আনা হয়েছে। অনেককে বাগান শ্রমিকের ভিসা দিয়ে আনা হয়েছে, কিন্তু তাদের কাজ দেয়া হয়েছে নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে। আর এই কাজটা করেছে দালালরা। শ্রমিকরা দালালদের টাকা দেয় এবং পুরো প্রক্রিয়াটি তাদের হাতে ছেড়ে দেয়। ফলে এরপর শ্রমিকদের আর কোনো বৈধতা থাকে না।
এখন নতুন করে অভিযান শুরু হলে অবৈধ অভিবাসী শ্রমিকদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন আইরিন ফার্নান্দেজ।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button