লটারি ভারতে জুয়ার আসর সিলেটে

বড়ই বিপাকে পড়েছেন সিলেটের হাজারো অভিভাবক। শুধু বিপাকে নয় উদ্বেগ-উৎকন্ঠার মধ্যে দিনযাপন করতে হচ্ছে সিলেটের অনেক অভিভাবককে। সিলেট মহানগরীর বিভিন্ন এলাকাসহ সিলেটের সীমান্তবর্তী জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, জকিগঞ্জ ও কোম্পানীগঞ্জ এলাকায় জুয়ার মহাউৎসব চলছে। শাহজালালের পুণ্যভূমি সিলেট যেন জুয়ায় ভাসছে। কোথাও চলছে আইপিএল খেলাকে ঘিরে জুয়া, আবার কোথাও বসছে ‘ডিজিটাল’ আসর। ভারতের শিলংয়ে ‘তীর কাউন্টার’ নামক অনলাইন লটারিকে কেন্দ্র করে সিলেটে চলছে জুয়া খেলার মহোৎসব। এই লটারি স্থানীয়ভাবে ‘ভারতীয় তীর খেলা’ ও ‘ডিজিটাল লটারি’ হিসেবে পরিচিত। ডিজিটাল এই জুয়ায় মজেছেন সিলেটের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ। জুয়ার আসরগুলো নিয়ন্ত্রণ করছেন বিভিন্ন পাড়ার প্রভাবশালী ব্যক্তি, ব্যবসায়ী ও সরকার দলীয় অঙ্গসংগঠন ছাত্রলীগের নেতারা। এই জুয়াকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে হামলা-সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। এসএমপি পুলিশ সামাজিকভাবে প্রতিরোধের আহবান জানিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিলেট নগরীর তেমুখি, পাঠানটুলা, মদিনামার্কেট, বালুচর, আম্বরখানা বড়বাজার, শেখঘাট, ও বন্দরবাজার, দক্ষিণ সুরমাসহ নগরীর বিভিন্ন স্থানে প্রায় শতাধিক ‘ডিজিটাল জুয়ার’ আসর বসে থাকে। ভারতের শিলং থেক www.teercounter.com এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে জুয়ার আসরটি (কথিত লটারি) পরিচালনা করা হয়। প্রতিদিন বিকাল সোয়া ৪টায় ও সাড়ে ৫টায় দুইবার ড্র অনুষ্ঠিত হয়। ড্রয়ের ফলাফল দেয়া হয় অনলাইনে। লটারি বিজয়ী তার বাজির টাকার ৭০ গুণ বেশি পেয়ে থাকেন।
জুয়ার আসর পরিচালনাকারী একাধিক ব্যক্তির সাথে আলাপ করে জানা যায়- তারা শিলংয়ের জুয়াড়িদের এজেন্ট হিসেবে কাজ করেন। সিলেটের যারা লটারিতে অংশ নেন তাদের পছন্দের নাম্বারটি অনলাইনে বুকিং দেয়া হয়। বিজয়ীদের টাকার পরিমাণ কম হলে তা তাৎক্ষনিক পরিশোধ করা হয়, আর বেশি হলে ভারত থেকে এনে দেয়া হয়। এ ক্ষেত্রে সময় নেয়া হয় ৩ থেকে ৭ দিন পর্যন্ত। জুয়ার টাকা ভারত ও বাংলাদেশে হুন্ডি ও সীমান্তের চোরাইপথে লেনদেন হয়ে থাকে।
জানা যায়, লটারিতে ০ থেকে ৯৯ পর্যন্ত যে কোন সংখ্যা কিনে নেয়া যায়। সর্বনিম্ন ১০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত বাজি ধরা যায়। লটারিতে একটি নম্বারকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। জুয়ার আসরে বিভিন্ন পেশার লোকজন বাজি ধরলেও এতে বেশি আগ্রহী দিনমজুর লোকজন। ১ টাকায় ৭০ টাকা পাওয়ার আশায় তারা সারাদিনের পারিশ্রমিক জুয়ায় বাজি ধরে থাকেন।
এই জুয়ার আসরকে কেন্দ্র করে সিলেটে বিভিন্ন সময় অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটেছে। শহরতলীর বালুচরে জুয়ার আসর নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন ছাত্রলীগের দু’টি গ্রুপ। জুয়ার আসরকে কেন্দ্র করে একাধিকবার উভয় গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। পুলিশের হাতে গ্রেফতারও হয়েছেন কয়েক জন।
ভারতের শিলংয়ে তীর কাউন্টার নামক জুয়া খেলা চলে আসছে প্রায় এক যুগের বেশি সময় ধরে। গত ৪-৫ বছর থেকে এই খেলা ছড়িয়ে পড়ে সীমান্তবর্তী জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাটে। ধীরে ধীরে এটির বিস্তার ঘটে সিলেট নগরীতে। এখন সিলেটের প্রায় সকল উপজেলায় এই জুয়ার আসর বসে থাকে। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবকদের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও।
এ ব্যাপারে এসএমপির এডিসি (মিডিয়া) মো. রহমত উল্লাহ দৈনিক সংগ্রামকে বলেন, ভারতের শিলংয়ে অনলাইনের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত জুয়াখেলা সিলেটে সংক্রামক ব্যধির মতো ছড়িয়ে পড়েছে। এই খেলায় মানুষ এতোই আসক্ত হয়েছে যে, একই পরিবারের বাবা-মা ও ছেলে মিলে জুয়ায় বাজি ধরছে। যুবকরা বেশি আশক্ত হচ্ছে। পুলিশ যেখানেই জুয়ার আসরের খবর পাচ্ছে সেখানেই স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় অভিযান পরিচালনা করছে। ইতোমধ্যে পুলিশ বেশ কয়েকজন জুয়াড়িকে গ্রেফতার করে কোর্টে সোপর্দ করেছে। জুয়া প্রতিরোধে পুলিশের পাশাপাশি অভিভাবকদের এগিয়ে আসার আহবান জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button