পাঁচ লাখ শ্রমিক নেবে সৌদি আরব
সৌদি আরব বাংলাদেশ থেকে আরো ৫ লাখ শ্রমিক নেবে।সৌদি আরবের শ্রমমন্ত্রী ড. মুফরেজ বিন সাদ আল হাকবানি এ সম্পর্কে বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশ থেকে আরো ৫ লাখ জনশক্তি নিতে আগ্রহী।’
সৌদি শ্রমমন্ত্রী গত রবিবার রাতে রয়্যাল কনফারেন্স প্যালেসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে এক সৌজন্য সাক্ষাতে এসে এই আগ্রহের কথা জানান।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বৈঠকের পর এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের অবহিত করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদের আমন্ত্রণে বর্তমানে ৫ দিনের সরকারি সফরে সৌদি আরব অবস্থান করছেন।
সৌদি মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশী শ্রমিকেরা এখানে সুনামের সঙ্গে কর্মরত রয়েছেন। এছাড়া, প্রায় ৪২ হাজার নারী শ্রমিক গৃহকর্মে নিয়োজিত রয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী এবং সৌদি শ্রমমন্ত্রী জনশক্তি নিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যয় সংকোচনের জন্য মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম বন্ধে একমত হন।
শ্রমমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক ছাড়াও চিকিৎসক, শিক্ষক এবং প্রকৌশলীদের নিয়োগ উন্মুক্ত করে দেয়ার লক্ষ্যও আমাদের রয়েছে।
সৌদি আরবে মহিলা গৃহকর্মী নিয়োগের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার এসব গৃহকর্মীদের স্বল্পকালীন প্রশিক্ষণের পরই বিদেশে পাঠাবার উদ্যোগ নিচ্ছে এবং এই প্রশিক্ষণের মেয়াদ ভবিষ্যতে আরো বাড়ানো হতে পারে।
অনলাইন রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া সহজতর করার বিষয়েও প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের তথ্য এ সময় তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী জনশক্তি নিয়োগের ক্ষেত্রে সৌদি শ্রমমন্ত্রীকে কড়াকড়ি আরোপের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোন দালাল শ্রেনী যেন এই প্রক্রিয়ায় ঢুকতে না পারে বিষয়টি খেয়াল রাখবেন।
এর উত্তরে ড. মুফরেজ বলেন, ‘শ্রমিকদের সুরক্ষা দেয়া আমাদের কর্তব্যের মধ্যেই পড়ে।’
পরে রয়্যাল কোর্ট অ্যাডভাইজার ইয়াসির আল রুমায়ন একই স্থানে বাংলাদেশের প্রধামন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হন।
বৈঠকে বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সৌদি আরবের আরও বিনিয়োগ প্রত্যাশা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সৌদি আরব বাংলাদেশের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ রাজধানীর চরপাশে চক্রাকারে সড়ক পথ, রেল পথ এবং নৌপথ তৈরি প্রকল্পেও বিনিয়োগ করতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ এবং সৌদি আরব- দুই পক্ষেরই সুবিধার জন্য ‘যৌথ অর্থনৈতিক কমিশন’কে আরো শক্তিশালী করার বিষয়ে উপদেষ্টাকে পরামর্শ দেন।
সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজের সন্ত্রাস বিরোধী পদক্ষেপের ভূয়শী প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘ইসলাম শান্তির ধর্ম- যদি ইসলামী দেশগুলোর মধ্যে কোন সমস্যা দেখা দেয় তাহলে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই তার সমাধান হতে পারে।’
প্রধানমন্ত্রী সৌদি আরবের ভিশন ২০৩০’র প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশেও তাঁর সরকার ’ভিশন-২০২১’ এর লক্ষ্য নির্ধারণ করে লক্ষ্য অর্জনে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রেক্ষিতে রয়্যাল কোর্ট অ্যাডভাইজার বলেন, যদিও সৌদি আরব এর বিনিয়োগের শতকরা ৯৫ ভাগই দেশে করে থাকে তথাপি এখন এই দেশের নতুন কর্মপন্থানুযায়ী তাঁরা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিনিয়োগের দিকেও নজর দিচ্ছে।
এর আগে সৌদি সহকারী প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মো. আব্দুল্লাহ এলায়েসার রয়েল কনফারেন্স প্যালেস-এ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
এ সময় সৌদি সহকারী মন্ত্রী সৌদি আরব ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার একটি শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তুলতে কাজ করছে এবং তিনি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে তাঁর সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি বিশেষ নির্মাণ ব্যাটালিয়ন রয়েছে এবং তিনি সৌদি সশস্ত্র বাহিনীকে তাদের বিভিন্ন নির্মাণ প্রকল্পে এর সহযোগিতার প্রস্তাব করেন। তিনি বলেন, এছাড়াও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি নতুন ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিট রয়েছে।
সৌদি গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান খালিদ বিন আলী হুমায়দানও প্রধামন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মুসলিম দেশ এবং তার দেশ ঢাকার সঙ্গে তাদের সম্পর্ক আরো জোরদার করতে চায়।
শেখ হাসিনা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে দু’দেশের গোয়েন্দা সংস্থার মধ্যে তথ্য আদান-প্রদানের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
সন্ত্রাসবাদ বিষয়ে কথা বলার সময় সৌদি গোয়েন্দা প্রধান বলেন, সন্ত্রাসবাদ ধর্মকে কলুষিত করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা সন্ত্রাসবাদের মোকাবেলা করে মুসলিম উম্মাহর মর্যাদা ফিরিয়ে আনতে চাই।’
এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, কতিপয় লোকের কর্মকান্ডের কারণে ধর্মের বদনাম হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ‘আমরা অবশ্যই এদের বিতাড়িত করবো এবং ইসলামের প্রকৃত চেতনার ব্যাপারে লোকদের বুঝাবো। নানা লোকের নানা মত থাকবে কিন্তু আল্লাহ উপর আমাদের বিশ্বাস থাকতেই হবে।’