মোহাম্মদ আলীকে শেষ বিদায় জানাতে লুইসভিলে জনস্রোত
কিংবদন্তী বক্সার এবং মানবতা ও সাংস্কৃতিক প্রতিরোধ আন্দোলনের জোরালো কণ্ঠস্বর মোহাম্মদ আলীর শেষকৃত্যের চূড়ান্ত ধাপ আয়োজনের জন্য প্রস্তুত তার জন্মশহর লুইসভিলে। এরইমধ্যে সেখানে ভিড় করেছেন কয়েক লাখ মানুষ। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে লুইসভিলেতে জড়ো হয়েছেন তারা। ১৯৬১ সালে লুইসভিলের যে জায়গায় আলী লড়াই করেছিলেন সে একই জায়গায় শুক্রবার তার স্মরণ অনুষ্ঠান হবে বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। এর আগে বৃহস্পতিবার মোহাম্মদ আলীর জানাজায়ও ১৪ হাজারের বেশি মানুষ অংশ নেন।
বৃহস্পতিবার জানাজা হয়েছে, আজ দাফন লুইসভিলে
কিংবদন্তী এ বক্সারের এক পারিবারিক মুখপাত্র জানান মৃত্যুর কয়েক বছর আগেই এ দাফন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করে রেখেছিলেন মোহাম্মদ আলী নিজেই। দুইদিনব্যাপী অনুষ্ঠানের প্রথম দিন বৃহস্পতিবার মুসলিম রীতিতে জানাজা পড়ানো হয়। আর দ্বিতীয় দিনের দাফন অনুষ্ঠানটি হয়ে ওঠে বিশ্বজনীন। ইতোমধ্যে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট সহ বিশ্ব নেতৃবৃন্দ পৌছে গেছেন লুইসভিলে।
এদিন সব ধর্মের মানুষের অংশগ্রহণে একটি স্মরণ অনুষ্ঠান হয়। তার আগে আলীর মরদেহ নিয়ে একটি শোক মিছিল বের হবে। মিছিলের মধ্য দিয়ে আলীর মরদেহ তার স্মৃতি বিজড়িত এলাকাগুলোতে নিয়ে যাওয়া হয়। কয়েক লাখ মানুষ ওই মিছিলের জন্য রাস্তায় সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ান।
শুরুতে আলীর মরদেহ নেওয়া হয় তার শৈশবের বাড়িতে। এর পর মরদেহটি পর্যায়ক্রমে আলী সেন্টার, দ্য সেন্টার ফর আফ্রিকান-আমেরিকান হেরিটেজ এবং মোহাম্মদ আলী বোলেভার্ডে নিয়ে যাওয়া হবে। লুইসভেলের সবচেয়ে বড় ক্রীড়া কেন্দ্রে আলীর স্মরণ অনুষ্ঠান হবে। সেখানে যোগ দেওয়ার জন্য ১৮ হাজার মানুষকে ফ্রি টিকিট দেওয়া হয়েছে। স্মরণ অনুষ্ঠানের পর কেভ হিল সমাধিতে গিয়ে মিছিলটি শেষ হবে। সেখানে পারিবারিকভাবে তাকে দাফন করা হবে।
দাফন অনুষ্ঠানে যারা থাকছেন
মুসলিম আত্মপরিচয়ের প্রতি আলীর যে অঙ্গীকার ছিল, একই সেই অঙ্গীকার ছিল বিশ্বজনীন পরিচয়ের প্রতিও। নিজেকে বিশ্ব-নাগরিক ভাবতেন তিনি। দাফন অনুষ্ঠানেও তাই আলীর বৈশ্বিক পরিচয় এবং মুসলিম আত্মপরিচয়ের সম্মিলন ঘটছে। ইসলামের বিধান অনুযায়ীই সমাহিত হবেন তিনি। তবে সেখানে থাকবেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের সব ধর্মের মানুষ। এভাবেই আলীর মুসলিম আত্মপরিচয়ের সঙ্গে সম্মিলিত হবে তার বিশ্বজনীনতা। আলীর ইচ্ছে অনুযায়ী তার শেষকৃত্য সব ধর্মের মানুষের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ সেখানে উপস্থিত হচ্ছেন। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনসহ বিশ্বনেতাদের অনেকেই আলীর স্মরণ অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন। তবে একইদিনে মেয়ের গ্র্যাজুয়েশনের অনুষ্ঠান থাকায় স্মরণ অনুষ্ঠানে থাকছেন না বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা।
বৃহস্পতিবার বন্ধু-স্বজনদের উপস্থিতিতে আলীর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানেও অন্তত ১৪ হাজার মানুষ অংশ নেন। জানাজা পড়ানোসহ আলীর দাফন অনুষ্ঠান আয়োজন পরিচালনা করছেন ইমাম জাইদ শাকির। তিনি বলেন, ‘আলী চাইতেন তার জানাজা যেন একটি শিক্ষণীয় মুহূর্ত হয়ে থাকে।’
উল্লেখ্য, ১৯৬৪ সালে আলী ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হন। এরপরই ক্যাসিয়াস ক্লে নামটি পরিবর্তন করে হয়ে ওঠেন মোহাম্মদ আলী। শুরুতে তিনি কৃষ্ণাঙ্গ প্রতিরোধ আন্দোলন নেশন অব ইমলাম-এ যোগ দেন এবং পরে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। একইসঙ্গে একজন বক্সার ও বক্তা হিসেবে বিশ্ব ভ্রমণ করেছেন এবং বিশ্বের নানা প্রান্তের মুসলিমকে উদ্বুদ্ধ করেন।