২৩ জুনের গণভোটে সিদ্ধান্ত নেবেন ব্রিটিশ ভোটাররা

UK Voteইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ২৮ রাষ্ট্রের জোট থেকে ব্রিটেন বের হয়ে গেলে (ব্রেক্সিট) সংগঠনটি নখদন্তহীন হয়ে পড়বে বলে জানিয়েছে এএফপি। রোববারের প্রতিবেদনে বার্তা সংস্থাটি জানায়, ব্রেক্সিট বাস্তবায়িত হলে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে প্রভাব বিস্তারের ক্ষমতা কমে যাবে ইইউর। পারমাণবিক ক্ষমতাধর ব্রিটেনের বিদায়ের ফলে সংগঠনটি অকার্যকর হয়ে যেতে পারে বলেও সংশয় প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকরা। ফ্রেঞ্জ ইন্সটিটিউশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনের (আইএফআরআই) বিশ্লেষক ভিভিয়ান পার্তুসট বলেন, ‘ব্রেক্সিটের ফলে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারতের মতো সুপার পাওয়ারগুলো ইইউকে রাজনৈতিক এবং ভৌগোলিকভাবে দুর্বল হিসেবে অভিহিত করবে।’ ব্রাসেলসভিত্তিক বিশ্লেষকরা আরও বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভাজন রাশিয়াকে এ অঞ্চলে শক্তিশালী করে তুলবে। রাশিয়ার আগ্রাসনের শিকার হওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া যায় না।’ একতাবদ্ধ থাকার গুরুত্ব বোঝানোর জন্য তারা আরও বলেন, বিশ্ব শান্তি রক্ষায় ইইউর ভূমিকা অনবদ্য। সাম্প্রতিক সময়ে ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি, ওয়াশিংটন ও মস্কোর মধ্যকার সম্পর্ক স্বাভাবিককরণ, ইসরাইল-প্যালেস্টাইন বিষয়ে শান্তি আলোচনার উদ্যোগ নেয়া সম্ভব হয়েছে শুধু ইইউ এর কারণে। বিশ্লেষকরা আরও বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ শরণার্থী সমস্যা মোকাবেলা করছে ইউরোপের রাষ্ট্রগুলো। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত অবস্থায় এই বিভাজন নিজেদের জন্য ভয়ানক ক্ষতির কারণ হবে। জন এমানলিডিস, ডিরেক্টর অব স্টাডিজ অ্যাট ইউরোপিয়ান পলিসি সেন্টার, এএফপিকে বলেন, ‘ব্রেক্সিটের ফলে বিশ্বে প্রভাব হারাবে ইইউ। পরবর্তী সময়ে চীন এবং রাশিয়া কৌশলে ইইউকে ভেঙে দেয়ার উদ্যোগ নেবে। এর ফলে ভেঙে যেতে পারে সংগঠনটি। এদিকে ব্রেক্সিটের ফলে পরবর্তী সময়ে ইইউ থেকে বের হয়ে যেতে পারে অন্য দুই সুপার পাওয়ার জার্মানি ও ফ্রান্স। ইইউর কূটনীতিকরা জানান, ইউক্রেনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের বিষয়ে দেশ দুটি কোনো ভূমিকা রাখতে উদ্যোগ নেয়নি। বৈশ্বিক ইস্যুগুলোতে নিজে থেকে ভূমিকা রাখার ব্যাপারে পর্যাপ্ত আগ্রহ নেই তাদের। অন্যদিকে ব্রিটেন বের হয়ে গেলে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য হিসেবে ইইউতে থাকবে শুধু ফ্রান্স। কিন্তু ফরাসিরা নিজেদের আন্তর্জাতিক ইমেজ ও স্বার্থ নিয়ে এত ব্যস্ত থাকে যে তারা হয়তো ইইউ নিয়ে আর আগ্রহ প্রকাশ করবে না। ব্রিটেনের অনুপস্থিতিতে ইইউকে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য ভবিষ্যতে জার্মানি এবং ফ্রান্সের এগিয়ে আসার সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিয়েছেন বিশ্লেষকরা।
ভেঙে যেতে পারে যুক্তরাজ্য: ইইউ ত্যাগ করলে যুক্তরাজ্য ভাঙনের মুখে পড়বে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন দেশটির সাবেক দুই প্রধানমন্ত্রী লেবার পার্টির টনি ব্লেয়ার এবং কনজারভেটিভ দলের জন মেজর। কারণ ব্রেক্সিট হলে বন্ধ করে দিতে হবে নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড সীমান্ত। গার্ডিয়ান বলছে, আয়ারল্যান্ড দ্বিখণ্ডিত হয়ে রিপাবলিক অব আয়ারল্যান্ডের জন্ম। নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড যুক্তরাজ্যের অংশ হিসেবেই আছে। কিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) উন্মুক্ত সীমান্তনীতির কারণে বিভক্ত আয়ারল্যান্ডের মানুষের সম্পর্কে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি রাষ্ট্রীয় সীমারেখা। এর ফলে পরিস্থিতিও শান্ত। তবে যুক্তরাজ্য ইইউ ছেড়ে এলে বন্ধ করে দিতে হবে নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড সীমান্ত। দুই আয়ারল্যান্ডের মানুষকে বিচ্ছিন্ন করে দিলে আইরিশ আন্দোলনের পুরনো ঘা আবার দগদগে হয়ে উঠতে পারে। আর এ কারণেই ইইউ ছাড়লে যুক্তরাজ্য ভাঙনের মুখে পড়বে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন সাবেক দুই প্রধানমন্ত্রী।
বৃহস্পতিবার নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের আলস্টার ইউনিভার্সিটিতে এক মঞ্চে দাঁড়িয়ে ইইউতে থাকার পক্ষে তারা নানা যুক্তি তুলে ধরেন। বলেন, ইইউ ছেড়ে এলে স্কটল্যান্ডও স্বাধীনতার প্রশ্নে আবার গণভোট চাইতে পারে। প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতার প্রশ্নে গণভোট অনুষ্ঠিত হয়। মাত্র ৫ শতাংশ ভোটের ব্যবধানে থেমে যায় স্বাধীনতার দাবি। স্কটল্যান্ডের ক্ষমতাসীন স্কটিশ ন্যাশনালিস্ট পার্টির (এসএনপি) নেতারা বলছেন, যুক্তরাজ্য ইইউ ছাড়লে স্কটল্যান্ড আবার স্বাধীনতার প্রশ্নে গণভোট চাইবে।
২৩ জুন ইইউতে থাকা না-থাকা প্রশ্নে যুক্তরাজ্যে গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। দেশটির প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতারা ইইউর পক্ষে প্রচার চালালেও দলগুলোর অনেক এমপি, এমনকি সরকারের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী ইইউর বিপক্ষে প্রচারে নেমেছেন।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button